পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

3ఫిఫ్చి সমান চোখে তিনি কেন না দেখবেন । তার কাছে খৃষ্টান ও অধৃষ্টানে প্রভেদ থাকবে কেন ? বরং যে অজ্ঞানান্ধ তার প্রতি র্তার অনুকম্প বেশী হবে —আমার মনের সঙ্গে এই খৃষ্টের ছবি খাপ খায়। তিনি প্রেমময় মুক্ত মহাপুরুষ, তার কাছেও ধর্মের দলাদলি থাকে কখনও ? যে দেশের, যে ধৰ্ম্মের, যে জাতির হোক, তিনি সবারই—যে তাকে জানে, তিনি তার, যে না-জানে, তিনি তারও । এক দিন গঙ্গার ধারে বেঞ্চির ওপর বসে জনকতক লোক গল্প করচে শুনলাম বরানগরে কুঠিঘাটের কাছে একটা বাগানবাড়িতে এক জন বড় সাধু এসেচেন, সবাই দেথতে যাচ্চে। দু-এক দিনের মধ্যে একটা ছুটি পড়ল, বেলুড় নেমে গঙ্গাপার হয়ে কুঠিঘাটের বাগান-বাড়িতে খোজ করে বার করলাম। বাগান-বাড়িতে লোকে লোকারণ, সকলেই সাধুজীর শিষ, মেয়েরাও আছে। ফটকের কাছে একজন দাড়িওয়াল লোক দাড়িয়ে ছিল, আমি ফটকের কাছে গিমে আমার আসার উদ্দেশ্য বলতেই লোকটা দু-হাতে আমার গলা জড়িয়ে ধীরে বললে—ভাই, এস এস, তোমাকে নেওয়ার জন্তই আমি এখানে যে দাড়িয়ে আছি ! আমি পছন্দ করিনে যে কেউ আমার গলী জড়িয়ে ধরে—-আমি ভদ্রভাবে গল| ছাড়িয়ে নিলাম। লোকটা আমায় বাগানের মধ্যে নিয়ে গেল। আমি কৌতুহল ও আগ্রহের সঙ্গে চারিদিকে চেয়ে চেয়ে দেখছিলাম। বঁ-দিকের রোয়াকে একদল মেয়ে বসে একরাশ তরকারী কুটছে- একট। বড় গামলায় প্রায় দশ সের ময়দা মাখা হচ্চে,-যেদিকে চাই, খাওয়ার আয়োজন । —সাধুর দেখা পাবো এখন ? —তিনি এখন ধ্যান করচেন। তার প্রধান শিষ্য জ্ঞানানন্দ ব্রহ্মচ.রী ও-ঘরে আছেন, চল ভাই তোমায় নিয়ে যাই । কথা বলচি এমন সময় এক জন ভদ্রলোক এলেন, সঙ্গে একটি মহিল—ফটকের কাছে তারা মোটর থেকে নামলেন । এক জন বালক-শিষ্যকে ভদ্রলোকটি কি জিগ্যেস করলেন— সে তাদের সঙ্গে করে নিয়ে এল আমার সঙ্গের দাড়িওয়ালা লোকটির কাছে । ভদ্রলোকটি তাকে বললেন—স্বামিজীর সঙ্গে দেখা করতে এসেচি, তিনি কোথায় ? —কোথা থেকে আসচেন আপনারা ? ఏ98S —ভবানীপুর, এলগিন রোড থেকে । আমার নাম বিনয়ভূষণ মল্লিক— দাড়িওয়ালা লোকটির শরীরের ইস্কুপ কজা যেন সব ঢিলে হয়ে গেল হঠাৎ—সে তিন ভাগে ভেঙে হাত কচলে বললে— অজ্ঞে আস্থন, আমুন, বুঝতে পেরেচি, আমুন। এই সিড়ি দিয়ে আসুন—আসুন মালক্ষ্মী— আমি বিন্মিত হলাম। এই যে বললে সাধুজী ধ্যানে বসেচেন—তবে ওঁরা গেলেন যে ! লোকটি ওঁদের ওপরে দিয়ে আবার নেমে এল । আমায় একটা হলঘরে নিয়ে গেল । সেখানে জ্ঞানানন্দ ব্রহ্মচারীর সঙ্গে আমার আলাপ করিয়ে দিলে। জ্ঞানানন্দ ব্রহ্মচারীর পরনে গেরুয়া আলখেল্লা, রং ফস1– আমার সঙ্গে বেশ ব্যবহার করলেন । তিনি আপিসের কাজে দেড়শো টাকা মাইনে পেতেন—ছেড়ে স্বামিঞ্জীর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেচেন স্বামিজী বলেচেন তিনি তিনটে মহাদেশ উদ্ধার করবেন, সাধনায় সিদ্ধিলাভ করলেই বেরিয়ে পড়বেন সে উদ্দেশ্যে । স্বামিজীর দেওয়া মন্ত্রজপ করে তিনি অদ্ভুত ফল পেয়েচেন নিজে –এই সব গল্প সমবেত দর্শকদের কাছে করছিলেন। আমি কৌতুহলের সঙ্গে জিগ্যেস করলাম—কি ফল পেয়েচেন মস্ত্রের ? তিনি বললেন--মন্ত্র জপ করতে করতে মনে হয় যেন কোথায় পাহাড়ের উপরে বসে আছি। স্বামিজী বলেন এ-একটা উচ্চ অবস্থা। আমি আরও আগ্রহের স্বরে বললাম—আর কিছু দেখেন ? তিনি বললেন জ্যোতিঃদর্শন হয় মাঝে মাঝে । —সে কি রকম ? —দুই ভুরুর মাঝখানে একটা আগুনের শিখার মত দীপ্তি দেখতে পাই । আমি হতাশ হ’লাম । আমি নিজে ত কত কি দেখি । এর ত সে-সব কিছু দেখে বলে মনে হয় না ! এরা আর কভটুকু দেখেচে তা হ’লে ? পাহাড়ের ওপর বসে আছি এই দেখলেই বা কি হ’ল ? ভুরুর মধ্যে আগুনের শিখা দেখলেই বা কি ? শুনলাম বেলা ছাঁটার পরে স্বামিজীর দেখা পাওয়া যাবে। পাশের একটা ঘরে বসে রইলাম খানিকক্ষণু । আরও এক জন বৃদ্ধ সেখানে ছিলেন। কথায় কথায় তিনি বললেন-দেখ ত বাবা—এই তোমরাও ত ছেলে । আর আমার