পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সাহিত্য ও সমাজ ঐঅনুরূপ দেবী সাহিত্য-বিষয়ক যে সমস্যাগুলি নিয়ে আজকাল পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সুধীসমাজের মধ্যে তর্ক জমে উঠেচে, তার ভিতরকার সবচেয়ে বড় কয়েকটি প্রশ্ন এই— ( ১ ) সমাজের সঙ্গে সাহিত্যের কোনরূপে সংশ্লিষ্ট থাকা উচিত কি না ? উচিত হ’লে সে যোগ সাহিত্যকে সমাজের মুখাপেক্ষী করবে অথবা সমাজকে সাহিত্যের মুখাপেক্ষী ক’রে রাখবে ? সাহিত্য সমাজের অগ্রগামী না অনুগামী ? ( 2 ) নিছক আনন্দ পাওয়া ও দেওয়ার কাজে নিযুক্ত আট বা ললিতকলা হিসাবে সাহিত্যের পার্থিব প্রয়োজননিরপেক্ষ কোনও স্বতন্ত্র অস্তিত্ব ও নিজস্ব মানদও থাকা সম্ভব এবং উচিত কিনা ? সম্ভব বা উচিত হ’লে সে অস্তিত্ব ও তার মানদণ্ডের স্বরূপ কি ? ( ৩ ) সাহিত্যের দ্বারা সমাজের কল্যাণ-বুদ্ধিকে জাগ্রত ক’রে অকল্যাণ-বুদ্ধিকে ঠেকাবার চেষ্টা করলে তাতে সাহিত্যের প্রতি অবিচার করা হয় কি না ? ( ৪ ) সাহিত্যস্রষ্টার পক্ষে সৎসাহিত্য সষ্টির জন্ত কোন পথে সাধনার প্রয়োজন ? এই প্রশ্নগুলির মীমাংস খুব সহজ নয় এবং অল্প কথায় সম্ভবও নয়। বড় বড় পণ্ডিত কবি এবং সাহিত্যিক এই সমস্যাগুলির সমাধান করতে দাড়িয়ে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন পক্ষ অবলম্বন ক’রে বিবাদে প্রবৃত্ত হয়েচেন। আমার বুদ্ধিতে আমি এই প্রশ্নগুলির যেরূপ সমাধান করতে পেরেচি কেবল সেইটুকুই বলব। প্রথম প্রশ্ন, সাহিত্য ও সমাজের কোনরূপ যোগ আছে বা থাকা উচিত কি না এবং থাকলে সে যোগের স্বরূপ কি ? সাহিত্য এবং সমাজ সম্বন্ধে সবচেয়ে বড় সত্য এই যে, এরা সৰ্ব্বদেশকালেই পরস্পর পরস্পরের মুখাপেক্ষী, আবার উভয়ের স্বাতন্ত্র চিরদিনই সুস্পষ্ট। সাহিত্য যেমন মায়ূধকে কেন যেনতেনপ্রকারেণ আনন্দ পরিবেশনের নিয়ন্ত্রণের জন্য রচিত কঠোর নীতি-উপদেশের সমষ্টিও নয়। সাহিত্যের মধ্যে এই দুই দিকই আছে, আবার সাহিত্য এই দুইয়েরই উপরে। এক কথায় সাহিত্যের বহিরঙ্গ হচ্চে সুন্দর এবং তার অন্তরঙ্গ হচ্চে সত্য ও কল্যাণ । ‘সত্যং শিবং স্বন্দরং” কথাটি যেমন ব্রহ্মের সম্বন্ধে খাটে তেমনই সাহিত্য সম্বন্ধেও থাটে । সাহিত্য সমাজকে আনন্দ দেবে, তার কল্যাণ করবে, তার নিজের কাছে নিজেকে সত্য হ’তে শেখাবে, যেন সে তার দেশের বিশিষ্ট ধারা রক্ষা করে, কালের উপযোগী সংস্কারকে গ্রহণ করে সুন্দর ও স্বর্থী হয়ে উঠতে পারে। ইহাই সাহিত্যের চিরন্তন ধৰ্ম্ম । সাহিত্যের সঙ্গে সমাজের এই যোগ থাকার প্রধান এবং প্রথম কারণ মানুষই সাহিত্য স্থষ্টি করে এবং মানুষ সামাজিক জীব। বিভিন্ন দেশের মানুষের সমাজে বিভিন্ন সংস্কার ও বিভিন্ন রীতিনীতি আছে, সুতরাং তার প্রভাব বিভিন্ন দেশের সাহিত্যের বহিমূৰ্ত্তিতে পরস্পর থেকে কিছু না-কিছু পার্থক্য এনে দিয়েচে । এই জন্তু সাহিত্যের বহিরঙ্গের কোন শাশ্বত রূপ বা শাশ্বত মানদণ্ডও থাকা সম্ভব নয় । কিন্তু এক অখণ্ড মানবজাতির হৃদয় থেকে বিভিন্ন দেশের সাহিত্য উদ্ভূত হওয়াতে পরস্পরের মধ্যে একটা মূলগত ঐক্য আছে। প্রত্যেক দেশের রসপিপাসু মানুষই অন্য দেশের মানুষের স্বঃ সাহিত্য উপভোগ করতে পারচে এবং পারবে, বিভিন্ন দেশের সাহিত্যের অন্তরগত সাদৃশুই তার কারণ। সাহিত্যশ্ৰষ্ট যে কেমন করে দেশকালের ব্যবধান ছাড়িয়ে জগতে আনন্দ পরিবেশন করে বেড়ান, তার সাক্ষী ভারতের সুধীসমাজে সেক্সপীয়র, শেলি, গোটে, রোম্য রল প্রভৃতির সমাদর এবং ইউরোপ জামেরিকার সুধীসমাজে কালিদাস রবীন্দ্রনাথের পূজা। এর কারণ প্রতিভাশালী কবি সৰ্ব্বদেশের মানবাত্মকে আনন্দ দিতে সমর্থ এবং সাহিত্যের এমন একটা শাশ্বত আস্তররূপ তার রচনায় যন্ত্র নয়, ुले লে,কেবল সমাজের কল্যাণ অকল্যাণ ফুটিয়ে তুলেচন যেটা দেশবাল এমনকি পাত্রেরও অতীত।