পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সাধন শ্ৰীসতীন্দ্রমোহন চট্টোপাধ্যায়, বি-এ কলিকাতা হইতে তার আসিল, পাটের দর কিছু চড়িয়াছে এবং আরও কিছু চড়িবারই সম্ভাবনা । হাজার-তিরিশেক মণ ‘গড়সড়ে তাড়াতাড়ি কিনিয়া রাখা আবশুক । তার পাইয়া রতিরাম পেরিওয়াল গোফে একবার আরামস্বচক তা দিয়া লইল । মনের আনন্দ চোখ ও মুখের কোণে ফুটিয়া উঠিল। সত্যি কথা বলিতে কি, এবারের বাজার বড় মন্দ। যাইতেছে। শুধু এবারই বা কেন, গত আড়াই-তিন বৎসর ষাবৎ পাটে লোকসান ছাড়। আর লাভ নাই ;—কাহারও নাই ; না চাষার, না ব্যাপারীর । হালের খবরে দেখ যাইতেছে, আমেরিকা আবার কিছু মাল খরিদ করিতেছে ; কলিকাতার মিলের অবস্থা ঠিক কিছু বুঝ। যাইতেছে না বটে, তবে সে খবরও ভালর দিকেই। আর ‘ফাটুকা’র শেষ খবরও আশাপ্রদ । রতিরাম ঘড়ির দিকে চাহিল। পাচটা বাজিতে পাচ মিনিট বাকি। কাল বদরগঞ্জের হাট। বদরগঞ্জ এখান হইতে ত্রিশ মাইল ; ছোট লাইনের গাড়ীতে বুলাকিনগর ষ্টেশনে নামিয়া তিন মাইল গরুর গাড়ীতে যাইতে হয়। বদরগঞ্জ এদিকের মধ্যে বিখ্যাত পাটের বাজার ; আমদানী অনেক। আর যাওয়-আসা সেখানে ত নিত্যই আছে। পাচটা বিশ মিনিটে ছোট লাইনের একখানা গাড়ী ছাড়ে, আর বুলাকিনগর পৌছায় রাত্রি নয়টায় । সেখানে গরুর গাড়ী অনেক—প্রাম সবই রক্তিরামের জানাশুনা। আর বদরগঞ্জে থাকিবার জায়গারও অভাব নাই ; চূড়ামণজীর ওখানে বন্দোবস্ত সবই ভাল ; একই দেশের – নোংর রিয়াসতের লোক ত ! রতিরাম ঠিক করিল, সদ্ধার গাড়ীতে যাওয়াই শ্রেয়। কলিকাতার টাটুকা খবর সকাল সাতটার পূৰ্ব্বে বদরগঞ্জে না পৌছিবারই সম্ভাবন। স্থাল-সকাল সঙ্গ করিয়া কেলিতে পারলেই ভাল। জিনই ওজাপার টাকা কিনিতে পারিলে লাভ অনিবার্ঘ্য ; তিরানব্বইতে আর দুই পয়সা নয় কমাই দিবে। তবে সঙ্গে কিছু খুচরা টাকা থাকিবে আর সময় রাত্রিকাল। তা ওখানকার পথঘাট ত সবই জানাগুনা আর গাড়োয়ানও সব পরিচিত। অত ভয়ভাবনা করিলে কি কাজ-কারবার চলে ? থাইবার সময় আর বড় নাই, তবে এ-লাইনের গাড়ী সৰ্ব্বদাই বিলম্ব করিয়া আসে ও ছাড়ে এই যা ভরসা। সকালের বাসি পুরি ছিল—তাড়াতাড়ি সে তাঁহারই দুইটা অৰ্দ্ধশতাব্দীরক্ষিত আচারের সহযোগে গলাধঃকরণ করিয়া একজোট। জল চকঢ়ক করিয়া গিলিয়া ফেলিল। তাহার পর ছোট একটুকু বিছান ও দুইখানা কাপড় বগলদাবা করিয়া ষ্টেশনের দিকে অগ্রসর হইল। তখনও গাড়ী ছাড়িতে পাচ মিনিট বাকি । রজিরামের মনিব কলিকাতা থাকে। পূৰ্ব্বে সে এই মনিবের চাকরি করিত ; সম্প্রতি বছর-চারেক যাবৎ মনিব তাহাকে হিসায় লইয়াছে। মূলধন তাহার কিছুই নাই— সে খাটিয়া মূলধন জোগায়। রতিরামের বয়স বিয়াল্লিশ। পরনের কাপড়খানা সম্ভবতঃ মাস-দুই যাবৎ সাফ করিবার ফুরস্কং হয় নাই ; সেখানার রং এখন ধূসর গৈরিক হইতে তামাটে কালে হইয়া গিয়াছে। পায়ে জাপান-নিৰ্ম্মিত পাচ সিকা দামের রবারের জুতা— গায়ে লম্বা গরম কোট। মাথার পাগড়ীটি গাঢ় কমলা রঙের। দাড়ি আজ দিন-পাচেক যাবৎ কাটা হয় নাই, কিন্তু পাট কেনাবেচার বাজারে তাহাতে কিছু আসে যায় না। . গাড়ী যথারীতি দেরি করিয়া ছাড়িল। রতিরাম তৃতীয় শ্রেণীর একটি কামরায় বসিয়া বিড়ি ধরাইয়া ধূমপানের ফাকে ফাকে গুনগুন করিয়া গান করিতে আরম্ভ করিল। , পাশে বসিয়া একজন বাঙালী ভদ্রলোক খবরের কাগজ পড়িতেছিলেন। রডিরামের মনটা আজ অত্যন্ত প্রফুল্ল ; সহযাত্রীর সহিত কথা বলিবার জন্য সে উৎসুক হইয়া উঠিল।