পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

وفاھک ও কুয়াশায় মিলিয়া চারিদিকে ত্রিশঙ্কুর স্বর্গ রচনা করিয়াছে। দূরের বাশের ঝাড়কে চালোকে খুজিয়া বাহির করিতে পারে নাই। পাশেই একটা মেঠো রাস্তার উপরে একসারি গরুর গাড়ী—হয়ত ঘণ্টা বাজাইয়া চলিয়াছে। শব্দটা শোনা যায় না। একটু দূরের এক গৃহ-জঙ্গনে জীর্ণবস্ত্রাবৃত কে একজন খড়ের জালানি দিয়া খাদ্য প্রস্তুত করিতে চেষ্টা করিতেছে। সে আলোকে তাহার দেহ ও খাদ্যসামগ্ৰী স্পষ্ট দেখা যাইতেছে। রতিরামের মন এই গাঢ় কুয়াশা ও দূরত্ব উপেক্ষা করিয়া স্বদূর বিকানীর রিয়াসতে চলিয়া গিয়াছে । দারুণ এ অর্থনেশা । বছর-দশেক পূৰ্ব্বে তাহার অর্থ ছিল না সত্য, কিন্তু তৃপ্তি ছিল । মনিবের চাকরি করিত, সারাদিন কাজ করিয়া রাত্রি দশটায় ঘরে ফিরিয়া আসিত ; স্ত্রীর আদরে সমস্ত দিবসের ক্লাস্তি মুছিয়া যাইত। ছেলেপিলে ছোট ছোট—কে পায়ের কাছে আসিয়া দাড়াইত, কেহ কোলে উঠতে চেষ্ট পাইত। দিবসের শত-শহস্ৰ চিন্তা যেন তাহার একটি নিমেষেই অস্তষ্ঠিত হইয়া যাইত । আর জাঞ্জ ? কোথায় সে, আর কোথায় তাহার সেই মেহের ধনগুলি ? অর্থের মোহ তাহাকে পাইয়া বসিয়াছে ; এই চারি বৎসরের মধ্যে অন্ত কোনও চিন্ত তাহার মাথায় আসে নাই। ভাবিতে গেলেই মাথায় গোল পাকাইয় উঠে, ‘ব্যাজ ‘ফাটুকা শু্যাকৃর।’, ‘রকম”। অর্থ কিছু হইয়াছে সত্য, কিন্তু শান্তি কি সে পাইয়াছে ? এই চারি বৎসরের মধ্যে এক মুহূৰ্ত্তও সেই স্বথের দিনগুলির কথা মনে হয় নাই। একবারও ভাল করিয়া ছেলে, মেয়ে বা তাঁহাদের মায়ের কথা সে মনে করে নাই । দিন গিয়াছে, রাত্রি আসিয়াছে—সে করিয়াছে পাটের হিসাব-লে ,স্বপ্ন দেখিয়াছে বাজারের খরিদ-বিক্রীর ইতিহাস । মাসের শেষে স্ত্রীর নামে টাকা পাঠাইয়াছে— কুপনে খরচের হিসাব লিখিয়া স্ত্রীকে বার-বার হিসাবী হইবার জন্ত সাবধান করিয়াছে –মাসের পর মাস, বৎসরের পর বৎসর। সেটা একটা একঘেয়ে ইতিহাস মাত্র । একবার তাছার জর হইয়াছিল। ম্যালেরিয়া— জুগিয়াছিল সে আট দিন। রোগশয্যায় পড়িয়া বহুবার তাহার স্ত্রীর কথা মনে হইয়াছিল। মাথায় ব্যথায় অস্থির s৫:প্রবাসীস্ট ఏ9BS হইয়া মনে হইত, কেহ যদি মাথাট একটু টিপিন্ধা দিত। কিন্তু একটা জরুরি খবর ছিল ; ভাল করিয়া সারিয়া উঠিতে ন-উঠতেই তাহাকে বাহিরে যাইতে হয় । ই, লাভ হইয়াছিল বটে—তিনশো টাকা। এসব দুৰ্ব্বলতা থাকিলে কি কাজকারবার চলে ? রতিরাম দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলিল । দীর্ঘনিঃশ্বাসটি বোধ হয় একটু জোরেই পড়িয়াছিল। বাঙালী সহযাত্ৰীটি একটু চমকিয়া উঠিলেন। ভাবিলেন, ভূমিকম্পের খবর গুনিয়া হয়ত বেচারা একটু ঘাবড়াইয়া গিয়া থাকিবে—হাজার হউক মানুষের মন ত । বলিলেন— আপনার কোনো ভয় নাই, আপনাদের দেশে ত কিছু হয় নাই । রতিরাম ভূমিকম্পের কথা প্রায় ভুলিয়াই গিয়াছিল। বলিল, নেহি—ডর কোই নেই আছে । ভূমিকম্প তাহাকে চঞ্চল করে নাই—করিয়াছিল দুইটি প্রসারিত ক্ষুদ্র হস্তের স্বপ্ন। কিন্তু রতিরাম স্বপ্ন দেখিলেও বেশীক্ষণ দেখে না—স্বপ্নের মূল্য তাহার কাছে নাই ; থাকিলে কি আর কাজকারবার চলে ? ঘুরিস্কা বসিয়া সে প্রশ্ন করিল—ও কেতাব মে কেয়া লেখা আছে বাবুজী ? ভঞ্জলোক তখন একখানা মোট বই পড়িতেছিলেন । বলিলেন—এটা কবিতার বই । রতিরাম তাহার স্বভাবসুলভ উচ্চারণে বলিল—কfা ? —কবিতার বই, রামায়ণ পড়িয়াছেন ? রামায়ণের মত । —পড়নেছে ক্যা হোতা হায় ? —কি আর হইবে ? দিল্‌ আচ্ছা লাগে। রতিরাম বলিল—হ । তারপর জিজ্ঞাসা করিল, ইস্কা কিন্মং কতো আছে ? —তিন টাকা । —ফুটমুট-ফজুল । আপনি তো বড় লিখাপড়াওয়াগ জামি আছেন। আপনি কেখন রূপেয়াক আলেম নিয়াছেন ? ] ভদ্রলোক হাসিয়া ফেলিলেন। বলিলেন—লেখাপড়া কি জার টাকার স্বরে মাপা যায় ? --