পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শ্রাবণ করিতেছি। তিনি আপনার অঙ্কিত চিত্র দেখিয়া আমার সকল ক্রটি মার্জন করিবেন ।” চিত্রকর তাহাকে আশ্বাস দিম৷ বলিলেন, “আপনার কোন চিন্তা নাই, আপনি কাল আসিবেন । আপনাকে তরুণী সুন্দরী নর্তকীরূপেই আমি চিত্রিত করিব । দেশের সর্বশ্রেষ্ঠ ধনীর চিত্র আঁকিতে হইলে আমি যতখানি যত্ব সহকারে আঁকি এই চিত্ৰখানি তাহা অপেক্ষাও যত্নে আঁকিব । আপনি কোনো দ্বিধা না করিয়া কাল আসিবেন ।” বৃদ্ধ তাহার পরদিন নির্দিষ্ট সময়ে আসিয়া উপস্থিত হইল এবং শুভ্ৰ কোমল রেশমের উপর চিত্রকর তাহার ছবি আঁকিতে আরম্ভ করিলেন । চিত্রকরের ছাত্ররা বুদ্ধার যে সৃষ্টি দেখিতেছিল, চিত্রে কিন্তু সে মূর্তি ফুটিল না। ছবিতে যাহার আরুতি, সে পক্ষিণীর মত উজ্জলনয়ন, দেহের গঠন তাহার পল্লবিনী লতার মত, স্বর্ণখচিত পরিচ্ছদে সে অপারীর মত মোহিনী । চিত্রকরের মায়াতুলির স্পর্শে তাহার লুপ্ত রূপযৌবন আবার ফিরিয়া আসিয়াছে । ছবিখানি শেষ হইবার পর চিত্রকর উহাতে নিজের নাম মোহর করিম দিলেন এবং পুরু রেশমের উপর ছবিখানিকে বসাইয়া, উপরে ওঁ নীচে সিডার কাঠ ও হস্তিদন্ত যুক্ত করিয়া দিলেন। টাঙাইবার জন্য পাকান রেশমের দড়ি লাগাইয়া দিতেও ভুক্তি লেন না। একটি শাদা কাঠের বাক্স করিয়া ছবিখানি তিনি বৃদ্ধাকে উপহার দিলেন। তাহাকে কিছু অর্থ দিবারও ইচ্ছা তাহার ছিল, কিন্তু অনেক অকুরোধ-উপরোধ সত্ত্বেও বৃদ্ধ অর্থ লইতে সম্মত হইল না। সে সজলচক্ষে কেবলই বলিতে লাগিল, “আপনি বিশ্বাস করুন, অর্থে আমার কিছুই প্রয়োজন নাই। এই ছবিখানির জন্যই শুধু এতদিন আমি দেবতার কাছে প্রার্থনা করিয়াছি। আমার প্রার্থন পূর্ণ হইয়াছে, এ-জীবনে আমার আর কোনে কামনা নাই । এইরূপ নিষ্কামচিত্তে আমি যদি মরিতে পারি, তাহা হইলে নিৰ্ব্বাণ লাভ করা আমার পক্ষে সহজ হইবে । শুধু এই ভাবিয়াই আমি ইখিত হুইতেছি যে, এই ছিন্ন পোষাকটি ভিন্ন আমার আর আপনাকে দিবার কিছুই নাই। আপনি অনুগ্রহ করিয়া এইটিই গ্রহণ করুন। আপনার ভবিষ্যৎ জীবন যাহাতে নিরবচ্ছিন্ন স্বশ্বের হয়, তাহার জন্য আমি প্রভুর নিকট পুজারিণী

&రిరి নিত্য প্রার্থনা করিব । আপনি যে দক্ষা করিলেন, তাহার তুলনা নাই ।” চিত্রকর হাস্ত করিয়া বলিলেন, “আমি কিই বা করিতে পারিয়াছি ? কিছুই নয়। তবে এই পোষাকটি গ্রহণ করিলে আপনি যদি তুষ্ট হন, তাহা হইলে আমি উহা গ্রহণ করিতেছি । ইহাতে পূৰ্ব্বকালের অনেক মধুর স্মৃতি আমার মনে পুনৰ্ব্বার জাগরূক হইবে। আপনি কোথায় বাস করেন, আমাকে বলুন । তাহা হইলে আমি গিয়া ছবিটি টাঙান হইলে দেখিয়া আসিতে পারি।” চিত্রকরের একথা জিজ্ঞাসা করিবার ভিতর উদেশ্ব ছিল, বৃদ্ধার বাসস্থান জানিতে পারিলে তাহাকে যথেষ্ট পরিমাণে সাহায্য করিতে পারিতেন । বুদ্ধ কিন্তু কোনোক্রমেই নিজের বাসস্থানের সন্ধান দিল না। বারংবার ক্ষমা প্রার্থনা করিয়া সে শুধু বলিল যে, তাহার বাসস্থান অতি দীনহীন, চিত্রকরের হামু সন্ত্রাস্ত ব্যক্তির সেখানে পদধূলি দেওয়া উচিত নয়। তাহার পর তাহাকে আরও নানাভাবে ধন্যবাদ দিয়া স্ত্রীলোকটি চিত্ৰখানি লইয়া চলিক্স গেল । চিত্রকর নিজের একজন ছাত্রকে ডাকিয় বলিলেন, “তুমি উহার অনুসরণ কর, এবং সে কোথায় বাস করে তাহা আমাকে আসিয়া জানাও । তুমি এমনভাবে যাইবে যে, বৃদ্ধ যেন জানিতে না পারে।” ছাত্রটি তৎক্ষণাৎ বাহির হইয়া গেল । বহুক্ষণ পরে ফিরিয়া আসিয়া সে বলিল, “মহাশয়, আমি ঐ স্ত্রীলোকটির পিছন পিছন যাইতে যাইতে শহর অতিক্রম করিয়া নদীর ধারে উপস্থিত হইলাম। যেখানে অপরাধীদিগকে বধ করা হয়, সেই মশানের নিকট এক অতি ভগ্ন জীর্ণ কুটীরে ঐ স্ত্রীলোক বাস করে। স্থানটি অতি জঘন্ত, ডাকিনীর বাসস্থান হইবার উপযুক্ত ” - চিত্রকর বলিলেন, “স্থানটি যত জঘন্তই হউক, তুমি কাল আমাকে ঐ স্থানে লইয়া যাইবে, কারণ আমি বঁাচিম্বা থাকিতে ঐ স্ত্রীলোকটির অন্ন-বস্ত্রের অভাব যাহাতে না ঘটে তাহ আমাকে দেখিতে হইবে।” সকলে বিস্মিত হইতেছে দেখিয়া চিত্রকর সেই তরুণী