পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৮৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

&88 গবাক্ষ ও প্রাচীরাদি বিষয়ে অস্থর্যাম্পগু করিম বাসগৃহ কেবল শহরে নহে গ্রামেও নিৰ্ম্মিত হইয়াছে। বস্তুত: উত্তর-পশ্চিম ভারতের যে-সকল স্থানে মুসলমান রাজপুরুষদের যাতায়াত অধিক পরিমাণে ছিল, সে-সকল স্থানের গ্রামসমূহ কারাগার-বিশেষ, গ্রাম ও নগর পল্লীস্থ বাসগৃহসমূহে দ্বার, গবাক্ষ ও অলিন্দাদির একান্ত অভাব। ব্রিটিশ সাম্রাজ্য সংস্থাপনের পর ধনসম্পত্তি ও স্ত্রীলোকের রক্ষা অনেক পরিমাণে উন্নতিলাভ করিয়া থাকিলেও বিস্তৃত শাস্ত্রান্থশাসন, বহু শতাব্দীর অভ্যাস, লোকের অর্থর অনটন এবং অন্ধভাবে পাশ্চাত্য রীতিনীতি অনুকরণবশত বাসগৃহের সংস্কার বা কোনরূপ উন্নতিবিধানের আবশ্বকতা" বা চেষ্টা করা হয় নাই। অন্ধ পাশ্চাত্য অনুকরণের একটা উদাহরণ অনেকের পক্ষে রুচিকর না হইলেও এখানে দেওয়া প্রয়োজন। ‘কমোড নামক পায়খানা ব্যতীত আমাদের ‘আপার’ সংজ্ঞক শিক্ষিত লোকদিগের মধ্যে অনেকের মলত্যাগ করা অসম্ভব বা অসুবিধাজনক। ব্যবহৃত ‘ওয়াটার-ক্লোজেট’ নামক নির্দোষ যন্ত্রবিশেষের অনিষ্টকর অনুকরণ। জলপ্লাবন হেতু ও টার- ক্লাজেট হইতে বায়ু দূষিত না করিয়া ত্যাগমাত্রই ময়লা দূরীকৃত হয়। গুস্ক ‘কমোড় হইতে সেরূপ হইতে পারে না। পাশ্চাত্য নগর-নগরীর যে-যে স্থানে ফ্লাশিং বা জলপ্রবাহদ্বারা ত্যাগের সঙ্গে সঙ্গেই মঙ্গল দূরীকৃত হইয়া যায়, সে-সকল স্থানেই "ওয়াটার-ক্লোজেট’ ব্যবহৃত হয়। কিন্তু অভ্যাসবশত: পাশ্চাত্য রাজপুরুষের জলসঞ্চালনহীন ভারতের নগর গ্রামেও কমোডের প্রচলন আরম্ভ করিয়া দুর্ভাগা লোকদ্বারা মলমূত্র দূরীকরণের ব্যবস্থা করিয়া আদিতেছেন। তাদের অনুকরণে আমাদের ‘আপার’ সংজ্ঞক লোকদের মধ্যে অনেকেই শক্ষনাগারের সন্নিহিত একই কক্ষে স্নানাগার ও ঈদৃশ মলমূত্র ত্যাগের ‘কমেডি’ সংস্থাপন করে, যাহাতে অর্থানটন বা ব্যয়সঙ্কোচের ইচ্ছাবশতঃ মেথরের বিরল আগমন হেতু কিন্তু ‘কমোড় প্রথমতঃ জাহাঙ্গাদিতে? ఏలి8ు পযুষিত সঙ্কীকৃত মলমূত্রের উপরেই বারংবার মলমূত্ৰত্যাগ করা হয় এবং স্নানকাৰ্য্য সমাপ্ত করিয়া দেহের আন্তরিক ও বাহিক মল দূর করা হয়। তদ্ধার কেবল শয়নমন্দির নহে অপর কক্ষসমূহ এবং সমগ্র বাসগৃহেরই বায়ু দূষিত করিয়া, আমাদের অমৃকরণ-তৃষ্ণার পরিতৃপ্তি করা হয়। হিউমিডিটি বা বায়ুতে জলকণার ন্যায় ঈদৃশ বাসগৃহের বায়ুর মলকণ৷ মাপিবার যন্ত্ৰ থাকিলে বুঝিতে পারা যাইত মুহূৰ্ত্তে মূহুর্তে নিঃশ্বাসের সহিত কি পরিমাণ মলমূত্র আমরা প্রকৃতপক্ষে গলাধঃকরণ করি । আহার ও পরিধেয়াদি বিষয়েও আমাদের ঈদৃশ মূঢ়তার উদাহরণ দেওয়া যাইতে পারে। কিন্তু আমাদের আলোচ্য বিষয় বাসগৃহের দিঙ নির্ণয় ও সংস্থাপন বিষয়ে প্রথমতঃ আমাদের অজ্ঞতা দূর করিতে না পারিলে যে-যে স্থানে বা ব্যক্তিবিশেষের পক্ষে সম্ভব সে-সে স্থলেও কোনরূপ সংস্কাব বা উন্নতির আশা করা যাইতে পারে না। আর্থিক কারণে আমাদের যথোপযুক্ত অন্নবস্ত্রাদির সংস্থান হইতে পারিতেছে না। অজ্ঞতাবশতঃ বাসগৃহ সম্বন্ধে কোনরূপে মাথা গুজিবার স্থান ব্যতীত অধিক কিছুর আকাজক্ষমাত্রই আমাদের নাই। বিশুদ্ধ জল আলোক ও বাতাস যাহা আমাদের অজ্ঞতা না থাকিলে একরূপ বিনাব্যয়েই পাওয়া যাইতে পারে তাহাও পাওয়া ধাইতেছে না। এই অজ্ঞতা, অলসতা বা অনিচ্ছার অবশ্যম্ভাবী ফল লোকের স্বাস্থ্য ও বলহীনতা । এরূপ অজ্ঞতা দূর করিবার অভিপ্রায়ে ইতালীর মিলান প্রভৃতি নগরে প্রতিবৎসরই বিভিন্নদশীয় বাসগৃঃ-সমূহের আধুনিক উৎকর্ষ সম্বলিত প্রদর্শনী হয় এবং অধিবাসীদিগকে উংকৃষ্ট প্রণালীর বাসগৃহ-নিৰ্ম্মাণে সরকারী সাহায্য ও পরিতোষিক প্রভৃতির দ্বারা প্রলুদ্ধ করা হয়। এই বিষয়ে আমাদের দেশনায়ক ও শাসনকৰ্ত্তাদিগের মনোধোগ সকাতরে প্রার্থনা করা যাইতেছে।