পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মুহূর্তের মূল্য ”متہ শ্রীরামপদ মুখোপাধ্যায় মাসের শেষ । দুটি হাতে জিনিষপত্র বোঝাই করিয়৷ শম্ভূ বাড়ি ফিরিতেছিল। গতি দ্রুততর। কোথায় লালবাজারের মোড়—আর কোথায় মাণিকতলা ! মাঝপথে বৌবাজারের মশলার দোকান হইতে জিনিষগুলি সে কিনিয়াছে। মাণিকতলার চেয়ে হিসাবে আনাদুই সস্তাই হইয়াছে । ওদিকে সন্ধা আসিবার বড় পূৰ্ব্বে রাস্তায় আলো জলিয়া গৃহমুখী পথিককে সত্বর গৃহে ফিরিবার ইঙ্গিত জানাইতেছে । আপিসের বিপুল প্রাসাদকক্ষ ; চেম্বার, টেবিল, আলো, শখার যেন স্বর্গভবন । খোলা বড় জানালার ধারে দাড়াইলে নিমের চলমান জনস্রোত চিত্ৰলেখার মত চক্ষুতে বিভ্রম জন্মায়। নিজেকে বহু উৰ্দ্ধে কল্পনা করিয়া কিছু যে গৰ্ব্ব বোধ হয় না তাঁহাই বা কে বলিবে ? তবু আশ্চৰ্য্য ! শম্ভুর মত মাসমাহিনীর অঙ্ক কষিতে যাহারা এই কক্ষগুলিতে আসিয়া বসে তাহদের প্রয়োজন বাহিরের আলো বাতাস বা দেয়াকে লইয়া মিটে না। স্তুপীকৃত ফাইলের মধ্যে মাথ গুজিম্বা লাল এবং কাল কালির সাহায্যে অঙ্কগুলির মাথায় দাগ মারে, আপিস-নোটে বাধা গং লিথিয় দিনের কৰ্ত্তব্য শেষ করে। কৰ্ম্ম-অবসরে দৃষ্টি ফিরাইলে পড়ন্ত রৌদ্রের পানে চাহিয়া মনটা চঞ্চল হইয় উঠে। কৰ্ম্মবাহু মেলিয়া এই দুরন্ত কৰ্ত্তব্য যেন তাঙ্গর বন্দীভবন রচনা করিয়াছে। সৌষ্ঠবশুম্ভ কক্ষে চেয়ার, টেবিল, ট্রে, ফাইল, র্যাক -এমন কি ক্ষুদ্রকায় চকচকে পিনগুলি পৰ্য্যন্ত কাজের কদৰ্য্য মূৰ্ত্তি লইয়া অনবরত দৃষ্টিকে বিধিতে থাকে। চঞ্চল মন চাহে মুহূৰ্ত্তের পাথায় ভর করিয়া বদ্ধ গলির আলোকবঞ্চিত বায়ুস্তব্ধ বাড়িতে একখানি জীর্ণপ্রায় কক্ষে ছুটিয়া যাইতে । সেখানে নীলের টুকরা ঢাকিয় সন্ধ্যার ধূম-কুণ্ডলী। স্যাত মেঝেম ভাঙা ভক্তপোষের উপর বসিয়া প্ৰাণ ভরিয় সেই গাঢ় ধোম টানিবার মধ্যেই প্রচুরতর উল্লাস । কৰ্ম্মের や রূঢ়ত হইতে মুক্তিলাভ ! ধোয়ার মধ্যে আরাম বিলাইতে যে দু-খানি মমতান্নিগ্ধ করের নিপুণ কৰ্ম্মপ্রয়াস,—কৰ্ম্মক্লাস্ত কেরাণী কি বলিয়া সে-দিক হইতে মুখ ফিরাইবে! ধোয়ার মধ্যেই ছেলেমেয়ের আসিয়া পাশে বসিবে, ধোমার মধ্যেই কাপড় জমা টানিয়া নূতনতর খেলনার খোজ কৱিবে । পিতার দীর্ঘ অনুপস্থিতির মধ্যে ক্ষুদ্র সংসারের ক্ষুদ্রতর ঘটনাগুলি একনিঃশ্বাসে বলিয়া যাইবে,—যে কোনো কৌতুহলজনক গল্পের চেয়ে তাহ কি কম রোমাঞ্চকর ? তারপর ধোয় পাতল হইতে হইতে মিলাইম যাইবে । হাসিমুখে জলথাবার সাজাইম্বা গৃহিণী আসিয়া লড়াইবেন । দুখান রুটি, অল্প একটু হালুয়া বা এক কাপ চা । চারিধারের প্রসাদ-পিপাস্বদের মুখে অল্প ঢালিয়া দিয়া যেটুকু মূপে যায়, তাহার প্রত্যেকটি কণায় অমৃত। তারপর রোগ তাকিয়াটায় হেলান দিতে গিয়া তক্তপোষে মচ মচ শব্দ উঠিবে হয়ত। আর মণ্ট, পিঠে স্বৰ্ডগুড়ি লাগাইবে । হরি দ্বিতীয়ভাগের যুক্তাক্ষর শিথিয়াছে ; বাপের পিঠে পামুরার পালক বা আঙুল দিয়া অধীত বিদ্যার পরিচয় দিবে। বাপ সে লেখা বুঝিতে পারিয়াও বলিতে পারিবে না । হরি হাসিবে,--আবার লিখিবে । পিঠের সঙ্গে মনটি পয্যন্ত তস্রাতুর হইয় উঠে। পালকের চেয়ে কচি আঙুলগুলির স্পর্শ আরও মনোরম। ছোট মেয়েট ইত্যবসরে দুরন্ত হাতে মাথার চুলগুলি এলোমেলে। কারয় দিবে। তা দিক। এমন মধুর উৎপীড়নের মধ্যে নিজেকে সপিন্ধা দিয়া কি যে তৃপ্তি! কোথায় লাগে খোলা মাঠ, উদার বিস্তৃত আকাশ, আকাশপটে অসংখ্য তারাবিন্দু, চাদ বা অস্তগামী সূৰ্য্য ! বায়ুর সাধ্য কি এমন স্বখম্পর্শ বহিয়া আনে ! দ্রুত চল—দ্রুত চল । ধোয়ার কুগুলী মিলাইয়া গেলে স্বর্ণের স্বযম থাকিবে না। গাঢ়তর ব্যাপ্তির মধ্যেই কল্পনার প্রখরতা । কোথায় চূণবালি খসিয়া ইট বাহির হইয়াছে, কড়িকাঠে ঘুণ জন্মিয়াছে প্রচুর, মেঝেয় পা চালাইতে গেলে