পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মুক্তি শ্রীঅাশালতা দেবী ( ১১ ) “না যা হয়েছে ত ফেরাবার যে নেই বটে—” চন্দ্রকান্ত দেখিলেন খিয়ের পাত্রের উপর ঝু"কিয় পড়িয়া সুশীল। অনায়াসে বলিয়া যাইতেছেন, “এখন নেই, কিন্তু যখন হাত ছিল তখন এ-সব কথা তোমার আগাগোড় একবার ভেবে দেখা উচিত ছিল বইকি । আশীৰ্ব্বদ হয়ে গেছে, এখন আর কি করবে ? তাই ব’লে মন খারাপ করে থেকেও কোন লাভ নেই । হয়ত আমির যা মনে করছি তা হবে না, ভালই হবে। অদৃষ্টের কথা কে বলতে পারে ? আর মেয়েমানুষের সমস্তটাই যে অদৃষ্টের কাছে বাধা দেওয়া । তুমি আমি ভেবে আর কি করতে পারি বল ?” সুশীল কোন এক সুদূরবর্তী অজানা অদৃষ্টের হাতে সকল ভার সপিয়া দিয়া শাস্ত মনে গৃহস্থালীর কাজ করিয়া যাইতে লাগিলেন । কিন্তু চন্দ্রকান্ত পরিলেন না মনকে শাস্ত করিতে। তখন যাহার চিন্তায় তাহার মন ভরিয়াছিল, তাহার অধীর হদয়, উৎসুক দৃষ্টি তাহাকেই যেন খুজিয়া ফিরিতে লাগিল। নিৰ্ম্মল নিকটে কোথাও ছিল না, বাহিরের ঘরেও তাহার দেখা মিলিল না । রাত অনেক হইয়াছে, সে তবে বোধ হয় শয়ন করিয়াছে মনে করিয়৷ চন্দ্রকত্ত একটা চেয়ারে বসিয়৷ চুপচাপ নিজের মনে সুশীলার কথাগুলি আর একবার উণ্টাইয়াপাটাইয়া দেখিতে লাগিলেন । কাৰ্ত্তিকের মাঝামাঝি, তেমন সময়েও বন্ধঘরে র্তাহার কেমন গরম গরম করিতে লাগিল। ছাদের খোলা হাওয়ায় শয়নের আগে প্রত্যেক দিন তিনি খানিকটা করিয়া বেড়ান। আজ ছাদে সাসিয়া দেখিতে পাইলেন ছাদের একপ্রাস্তে আলিসায় তর দিয়া সাদা শাল গয়ে জড়াইয়া নিৰ্ম্মলা অস্পষ্ট জ্যোৎস্নায় দাড়াইয়া আছে । চন্দ্রকান্ত নিঃশব্দে তাহার পিছনে গিয়া তাহার মাথায় একটি হাত রাখিলেন। অনেকক্ষণ পর্যন্ত দুজনেই চুপ করিয়া থাকিলেন। তাহার পরে নিৰ্ম্মল আস্তে আস্তে কহিল, “আমি বুঝতে পারছি কয়েক দিন থেকে তুমি যনে মনে কি যেন ভাবচ । মনে তোমার একটা ভার লেগেই রয়েছে । তুমি কিছুতেই সুস্থির হতে পারছ না । কিন্তু কেন তোমার এ ভাবনা বাবা ? তুমি ভাল বুঝে আমার সম্বন্ধ যে ব্যবস্থা করবে তাতেই আমার ভাল হবে । আমার তাতে কোন মন্দ হ’তে পারে না। কেন একি তুমি বিশ্বাস কর না ? কিন্তু আমি যে খুব বিশ্বাস করি । আমি ত এর চেয়ে অন্ত রকম ভাবতেই পারিনে।” চন্দ্রকাস্তের মনের ভার এক মুহূৰ্ত্তে লঘু হইয়া গেল। চুপি চুপি কহিলেন, “এ কি তুমি ঠিক বুঝতে পেরেছ মা ?” নিন্মলা বলিল, “তাই ত আমার বিশ্বাস।” ( २२ ) বিবাহ হইয়া গিয়াছে। পরের দিন নিৰ্ম্মল! কলিকাতা হইতে স্বামীর সঙ্গে শ্বশুরবাড়ি আসিয়াছে। বিবাহ সম্বন্ধে কোন কথা কখনও ন! ভাবিয়া, এ-বিষয়ের কোন আলোচনাতেও কখনও না যোগ দিয়া একেবারেই সে বিবাহ করিয়াছে। এ সূতা জীবন তাহার সম্পূর্ণ অজান । আজ ফুলসজ্জা । ঘরের মধ্যে আলো জলিতেছে, ঘামিনীর বৌদিদির পালঙ্কের গায়ে মল্লিকা যুই গোলাপের মালা গাঁথিয় দোলাইয়া দিয়াছেন । টেবিলে ফুল, বিছানায় ফুল, টিপায়ে ফুলদানিতে করিয়া ফুল । সমস্ত ঘর তুন্দর, সুসজ্জিত, সুরভিত । পালঙ্কের উপর বিছানাতে একটি রূপার রেকাবিতে করিয়া দুই গাছি বেলফুলের গ’ড়ে মালা রহিয়াছে।