পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

88 "প্রেবচনাতন “কি জানি ! জানিস ত সংসারের সব কথা । হয়ত পড়া আর হবে না।” “আমিও কলেজ ছাড়ব ।” দূর পাগল! তোর এ সমবেদনার মূল্য কি ?” অজিত ধরাগলায় বলিল, “সমবেদন উৎসাহ~ ” নয়, আমার বাধা দিয়া শম্ভু বলিল, "পাগলা ! না, ন, ভাল করে মন দিয়ে পড়বি ।” “কিন্তু পাস না করতে পারলে দোষ দিস না ।” “আচ্ছা সে দেখা যাবে। চিঠি লিখবি ত ?” “ম৷ ” “মা ! তুই রাগ করছিস, অজিত। চিঠি ন লিখলে - “ “কেন ? আমিও ত তোর সঙ্গে চাকরি করতে পারি একই আপিসে। পারবি নে জোগাড় ক’রে দিতে ’ মাথা নাড়িয়া শম্ভু কহিল, “কিন্তু তোর পড়া ছাড়া হবে না। না, কিছুতেই না।” মান হাসিয়া অঞ্জিত কহিল, “ও বুঝি আমার শাস্তি ! আর তোর শাস্তি কি ?” শম্ভু তাড়াতাড়ি মুখ ফিরাইয়া কহিল, “এখান থেকে চলে যাওয়ার শাস্তি যে কত বড়--” আশ্চৰ্য্য ! কথাও ভাল করিয়া কহ যায় না। প্রতি বাক্যের শেষে অশ কণ্ঠ রোধ করে । বুকের মাঝে ভারী নিঃশ্বাসগুলিতে এত অশ্রুর তরঙ্গ কে জানিত ? “তুষ্ট হয়ত ভুলে যাবি ?” “న్హా.. ” শস্তু পকেট হইতে ছুরি বাহির করিম বলিল, “তবে একটা চিহ্ন ক'রে রাথি । কেমন ? এইটে দেখলেই কেউ কাউকে ভুলব না।” অজিত হাত আগাইয়া দিয়া কহিল, “তোর নামের আদ্যাক্ষর থাক আমার হাতে—তুই লেখ । আমি লিখব তোর হাতে ” লেখা শেষ হইলে দু-জনে সেই রক্তচিহ্নিত হাত দুখানি একত্র করিয়া শপথের ভঙ্গীতে উচ্চারণ করিল, “বন্ধু” । “আহ-হা—! সব ফেলে দিলেন যে ?” ఏ98) চমকিত শস্তু ভূপতিত জিনিষগুলির পানে না চাহিয়৷ জামার আস্তিন তুলিয়া দেখিল, কালে রেখায় এখনও সেই নাম লেখা —কত বৎসর গত হইয়াছে, কে জানে, স্মৃতিতে জাগিয়া উঠিল সেই থেম্নাঘাট-কুরিনামা ছায়াঘন বটতল— গ্রীষ্মের সেই বিষণ্ণ মধ্যাহ ! তাহার একেবারে মরে নাই । লাল রক্ত যেমন দেহে শুকাইয়া কালো হরফের জন্ম দিয়াছে, তেমনই সেই দিনের বিদায়ক্ষণ অপার বিস্মৃতির বালুগভে মগ্ন হুইয়া গিয়াছে । আছে মাত্র একটা রেখা— বৈচিত্র্যহীন টানা লাইনের মত নিৰ্জ্জীব রূপহীন ! বিজ্ঞান,—এতটুকু তার মিথ্য নহে । পৃথিবী প্রতিনিয়ত ঘুরিতেছে- জীবনকে ঘুরাইতেছে । শৈশবের নিজ্ঞান দৃষ্টিতে ধরণীর যে আলোক ফুটিয় উঠে, আজি জীবনমধ্যাঙ্গে প্রতাষের সে প্রীতি কোথায় গেল । অমৃত্তীণ বালোর পরম সম্পদ ছিল একখানি হাসিভর মুখ– প্রতিটি রেখা যার স্নেহ-সমাকুল, প্রতিটি আবেগ যার লালনগৌরবে তটপরিপ্লবী । সেই শৈশব খেন একটি ক্ষুদ্র কক্ষ ; মাতৃস্নেহের মাটিৰ দীপ জ্বলিয়া অপরিণত আশা করিয়ী রাথিত । ও সসীম কামনাকে উজ্জল বিদ্যায়তনের পরিধিতে সে-কক্ষ হইল বৃহত্তর । মৃন্ময় দীপ ঘুচিয়া লণ্ঠনের আলোয় আসিলে বন্ধু । তারপর শহর । প্রদীপ গেল, লণ্ঠন গেল, বিজ্ঞানে বাধা পড়িয়া উপর হইতে নামিলেন বিঞ্জলী । সারা শহ বিদ্যুতে ভরিয়া গিয়াছে । মাটির প্রদীপের অন্তরালে মায়ে স্নেহ সত্যই কি মরিয়া গেল ? না, স্মৃতিতে তিনি নবজীব লাভ করিলেন ? যাহার হাত ধরিয়া প্রথম যৌবনের জয় ধ্বনি গাহিয়াছিল সেই বন্ধুই বা কোথায় ? আজ দামিনীর দীপ্তিতে যে-সমস্ত আবেগ কেন্দ্রীভূ করিয়াছে—সে প্রিয়। মাতৃ-অঙ্কের মুখশৈশব মরিয়াছে কৈশোরাকাশের সুহৃদ-স্বৰ্য্যও অস্তমিত, রাত্রির রোমা:ে শশী-সৌন্দর্য্যে প্রিমার আবির্ভাব ; চারি পাশে নক্ষত্ররূপী পুত্র কন্যা। আকাশের অবকাশ কোথায় ? উদয়গিরির বর্ণচ্ছটা সে অসুরঞ্জিত হইবে না, অস্তসমারোহেও তাহার স্থান নাই ঐ ধোয়া, ঐ বদ্ধত, ঐ কোলাহল । অথবা এই বর্তমান । ডাক্তার সে হয় নাই । যে দুঃখ এক দিন অগ্নির -