পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জৈনধর্মের প্রাণশক্তি শ্ৰীক্ষিতিমোহন সেন আমার কাজ প্রধানতঃ ভারতীয় মধ্যযুগের ধর্মের আন্দোলন লইয়। জৈন ও বৌদ্ধ ধৰ্ম্ম- আন্দোলনের সঙ্গে কোনো কোনো বিষয়ে তাহার যোগ থাকিলেও আমার আলোচনার ক্ষেত্র ততট। দূর পর্যন্ত বিস্তৃত করিতে চাহি না । তবু আমার একটি স্নেহাস্পদ জৈন ছাত্র আমাকে ধরিয়াছেন এই মহাবীর-জন্মদিনের উপলক্ষ্যে যেন আমি আমার তরফ হইতে কিছু বলি । মধ্যযুগের ভারতীয় সাধনার প্রধান গৌরবের কথা হইল মানব-মনের ধৰ্ম্মচিন্তার স্বাধীনতা । জৈন ও বৌদ্ধ মতেরও উৎপত্তি তো এই স্বাধীনতা হইতেই । প্রচলিত বেদবাদের বিরুদ্ধে সত্য ও মহৎ আদর্শ লইয়া কি ভীষণ যুদ্ধই তাহার করিয়া গিয়াছেন! তাই মধ্যযুগের প্রতি যাহ্বাদের শ্রদ্ধা আছে তাহারা জৈন ও বৌদ্ধ ধৰ্ম্মের এই স্বাধীন সাধনাকে কখনও শ্রদ্ধা না করিয়া পারেন না । খ্ৰীষ্টপূৰ্ব্ব ৫৯৯ অব্দে বিহার প্রদেশে পাটনা হইতে ২৭ মাইল দূরে, বসার তীর্থে শ্ৰীমহাবীরের জন্ম। সে দিন ছিল চৈত্র শুক্ল ত্রয়োদশী । কিন্তু এখন তাহার জন্মোৎসব প্রধানতঃ পালিত হয় ১লা ভাত্রে, পঘুষিণের চতুর্থ দিনে। ৫২৭ খ্ৰীষ্টপূৰ্ণকে বিহারের পারাপুরীতে মহাবীরের তিরোধান ঘটে, তাই পাৱাপুরী জৈনদের একটি বিশেষ তীর্থ, ইহা দক্ষিণবিহারে রাক্সগুহের নিকটে অবস্থিত। বুদ্ধের সময় খুব সম্ভবতঃ ৫৮৮ হইতে ৫-৮ খ্ৰীষ্টপূৰ্ব্বাক, কাজেই মহাবীর ও বুদ্ধ অনেক পরিমাণে সমসাময়িক । উভয়েই অনেকট একই প্রদেশে জীবন যাপন করিয়া গিয়াছেন । কাজেই অনেকে যে মনে করেন বিহার ও পশ্চিম-বঙ্গে পরিব্ৰজন কালে উভয়ের মধ্যে দেখালাক্ষাৎ ঘটিয়াছিল, তাহ নিতাস্ত অযৌক্তিক নয়। মহাবীর ও বুদ্ধ উভয়েই বেদের উপদিষ্ট যাগযজ্ঞাদির বিরোধী, সাংখ্য ও ধোগ মতও তাই । ইহঁাদের সবারই মতে, “সত্তামাত্রই দুঃখময়, কৰ্শ্ববশেই নিরস্তুর সংসারপ্রবাহ ; তাই দুঃখময় জন্ম জন্মান্তরপ্রবাহ হইতে মুক্তিই সাধনার পরম ও চরম কথা !" জৈন বৌদ্ধ ও সাংখ্য মতে ঈশ্বরের স্তান নাই । যোগমতের ঈশ্বরও প্রায় না-থাকারই সামিল। মহাবীর ও বুদ্ধ উভয়েই সৰ্ব্বজাতিনিবিশেষে সাধারণ লোকের মধ্যে প্রাকৃত ভাষায় ধৰ্ম্ম প্রচার করেন। উভয়েই সন্ন্যাসের উপর খুব ঝোক দেন, যদিও গৃহস্থ আশ্রম লুপ্ত হয় নাই ; হইলে ধর্মের ধারা এতকাল কেমন করিয়া টিকিত ? এই সব নানা কারণে কেহ কেহ জৈন ও বৌদ্ধ মতকে গোলেমালে এক করিয়া ফেলিক্ষ্মছেন । বুদ্ধের সময়েও দেখা যায় নিগ্ৰস্থ মত চলিয়াছে। নাতপুত্ত তাহার উপদেষ্ট । তখন নিগ্ৰস্থদের যে খবর মেলে তাহাতে বুঝা যায় তাহ এই জৈনদেরই কথা । জৈনধৰ্ম্মে সংসারী ও সন্ন্যাসী এই দুই ভাগ তো আছেই, কিন্তু তাহাদের আসল বিভাগ হইল শ্বেতাম্বর ও দিগম্বর এই দুই বিভেদ লইয়। এই বিষয়ে পরে আলোচনা করা ধাইবে । বুদ্ধের ধৰ্ম্মের সঙ্গে মহাবীরের ধৰ্ম্মের এক বিষয়ে পার্থক্য বিশেষ করিয়া চোখে পড়ে। বুদ্ধ তাহার প্রবর্তি ধর্শ্বের আদি উপদেষ্ট আর মহাবীর তাহার ধশ্বের চতুৰ্ব্বিংশ বা শেষ তীর্থঙ্কর। বুদ্ধ পূৰ্ব্ব পূৰ্ব্ব আচার্যগণের উপদেশে বীতশ্রদ্ধ হইম স্বাধীন মতবাদ প্রতিষ্ঠিত করিলেন আর মহাবীর হইলেন র্তাহার মতবাদের পূর্বতন সব মহাপুরুষদের সমাপ্তি ও পরিপূর্ণত । চব্বিশ জন তীর্থঙ্করের শেষ হইলেন মহাবীর আর র্তাহার পূৰ্ব্ববৰ্ত্ত তীর্থঙ্কর হইলেন পাশ্বনাথ। ওগৱালরা পাশ্বনাথকেই বিশেষ করিম মানেন। অনেকে বলেন পাশ্বনাথ মহাবীর হইতে ২৫০ বৎসর পূৰ্ব্বেকার । উত্তরাধ্যয়ন স্বত্রমতে ( ২৩ অধ্যায় ) পাশ্বনাথের শিষ্য কেলীর সঙ্গে মহাবীরের শিয্য গৌতমের দেখা ঘটিয়াছিল বলিয়া ষে কেহ কেহ মনে করেন পাশ্বনাথ ও মহাবীর প্রায় সমকালীন তাহা ঠিক নহে,