পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঝাড়খণ্ডে কবীর ও চৈতন্যদেব প্রভৃতির প্রভাব শ্রীক্ষিতিমোহন সেন কবীর সারাজীবনের বাণীতে ও সাধনায় আঘাত করিয়া গিয়াছেন সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে । সম্প্রদায়িকতার অর্থ ধৰ্ম্মের নামে দল বাধিয়া মানুষের সঙ্গে মানুষের চিরন্তন ভেদ ও বিরোধ চালাইয়া যাওয়া । ইহা ছিল কবীরের অসহ । কিন্তু মানুষের এমনই দুরদুষ্ট যে খনই কোনো মহাপুরুষ এই ভেদ দূর করিতে গিয়াছেন তখনই তাহার নামেই পরে এই সাম্প্রদায়িকতা আরও কঠিন হইয় গড়িয়া উঠিয়াছে । কবীরের মৃত্যুর পর একটি সম্প্রদায় প্রতিষ্ঠিত করিতে তাহাঁর ভক্ত শিষ্যরা আসিয়া ধরিলেন কবীরের পুত্র কনলৈকে । কমাল কহিলেন, আমার পিতা চিরদিন সম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধেই গেলেন সৃদ্ধ করিয়! : তহিfর নামেই যদি সম্প্রদায় স্থাপন করি তবে তা আমার পক্ষে পিতৃহত্যাহ করা হইবে । তাত কবীরেব ভক্তের পল কহিলেন—“কমলন্ত কবীরের বংশ ডুবাইল ” ধৰ্ম্মেল্প সব সঙ্কীর্ণ দলাদলি না মানিলেও কবার মানিতেন সে মানবচিত্তের ভাব, হৃদয় হইতে হৃদয়ে সঞ্চারিত হয় । চিত্ত হইতে চিত্তে ভাবের রং লীগে । জড়জগতে দেখা যায় প্রত্যেক দ্রব্যই থাকে তাহার আপন আপন বিশেষ স্থান স্কুড়িয়া । তাহার মধ্যে অঙ্গ দ্রব্যের ঠাই হওয়া অসম্ভব। কিন্তু ভাব-জগতে দেখা যার ইহার বিপরীত। মে-চিত্তে দত বেশী ভাবের স্থান, সেখানেই তত সহজে নুতন নুতন ভবের ঘটে সমাগম । তাই দাহ্নু বলিয়াছেন— স্বসন্ত্ৰী মৈ রস বন্ধধিহৈ ধারা কোটি অনংত । ( পরচ অংশ, ১২ } --রসের মধ্যেই রসের বর্ষণ হয় অলপ্ত কোটি ধারায় ! প্রেম ও ভাবের ক্ষেত্রে এই কথা সত্য হইলেও অনেক সময়ে দেখা যায় জ্ঞানের ক্ষেত্রে এই কথা খাটে না । নের ক্ষেত্রে মানুষ দর্শনাদি সব শাস্ত্রের কঠিন প্রাচীর এমন করিয়া গড়িয়া তোলে যে সেখানে নুতন জ্ঞানের প্রবেশ প্রায় দুঃসাধ্য হইয়া উঠে।" জ্ঞানের জগতেও কি জড় রূপ মুক্তি আমি বিশ্বাস করি না । জগতের মত ঠেকাইয়া রাখfই বিধি ? ভাব-জগতের মত সেখানে কি সহজে স্বীকার করার কোন উপায় নাই ? তই যেন বড় দুঃখে কবীর কহিলেন— কারী কমড়িয়! পর রঙ্গ নাহি চড়ৈ । —কালে কম্বলের উপর আর নূতন রং ধরে না । কথিত আছে মৃত্যুর পূৰ্ব্বে কবীর কাশী ত্যাগ করিয়! মগহরে গিয় বাস করেন । কে নাকি তাহাকে বলিয়াছিল, “কশা জুন-ক্ষেত্র । সাহাই কর না কেন, এথানে মরিলে মুক্তি হইবেই । তাই তুমি নিৰ্ভয়ে কবীর বলিলেন, “এই আমি আমার তচ্ছামত কোথাও গিয়া আপন সাধনায় মুক্তি অর্জন করিব।” ইহাই কবীরের মগহর-যাত্রার কারণ । কিন্তু কাশীর জ্ঞানী ও শাস্ত্রপন্থীদের বিরুদ্ধতার সঙ্গে কি ইহার কিছুই সম্পর্ক নাই : * , কাশীতে জ্ঞানই পধান কথা হহলেও সেখানে ভাল মে একেবারে ছিল না এ-কথা অসম্ভব । তাই কাশীর fচত্তেও ক্রমেই কবীরের ভাবের রং ধরিতেছিল ; সদিও পণ্ডিতের শাস্ত্র ও দর্শনাদির কঠিন প্রাচীর তুলিয়া সৰ্ব্বভাবে সাবধান ছিলেন, যেন এই রং না লাগে । কবীরের তিরোধানের পর কমলি যখন সম্প্রদায় প্রতিষ্ঠা করিতে অসম্মত হইলেন, তথন প্রধানতঃ তাহার দুই শিষ্য র্তাহার ভাবকে আশ্রয় করিয়া সম্প্রদায় গড়িয়া তুলিলেন । হরত গোপাল বসিলেন কাশীতে কবীর চৌড়ীয়, ধৰ্ম্মদাস গেলেন ঝাড়খণ্ডে । সুরত গোপাল কাশীতে প্রভাব যতটা বিস্তার করিলেন, তাহার অপেক্ষা বেশী নিজেই প্রভাবস্থিত হইয় পড়িলেম । কাশীর কালো কম্বলের উপর নূতন রং ধরিতে চাহিল না, বরং দেখা গেল যে যড়দর্শনাদির সঙ্গে কীর চিরদিন যুদ্ধ করিয়া গিয়াছেন, ক্রমে তাহারই পতাকাতলে স্বরত গোপালী দল আশ্রয় খুজিতেছে। শুরুর যাহা ছিল । ধন্মের বিরুদ্ধতা করিতেছ ।"