পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আশ্বিন~. 3. না। আমায় ক’রে খেতে হবে, কলেজে ভৰ্ত্তি ক’রে দাও।” পীতাম্বর মহাবিপদে পড়িলেন। তাহার সামান্ত আয় । বাড়িটা গক্ষবাছুর, ধানচাল আছে বলিয়া আর বাগানের তরকারি ও পুকুরের মাছে ভাত খাওয়া চলিয়া যায় বলিয়া ধারকর্ড করিতে হয় না । কিন্তু যদি প্রতি মাসে ছেলের কলেজের মাইনে ও বাসা-খরচ জোগাইতে হয়, তাহ হইলে সেইখানেই ত মাসে অন্তত পচিশ-ত্রিশ টাকা খরচ । এমন করিলে ঘরের ঘটিবাটিও যে বাধা পড়িয়া যাইবে । পীতাম্বর বলিলেন—“ও সব বাপু, তোমার এ গরিব বাপের দ্বারা হবে না । গায়ে থেকে কিছু করতে হয় কর, নয়ত আমাকে আর দ্বিতীয় কথাটি ব’লে না ।” বিষ্ণু বলিল—“বেশ তাই হবে । এর পর তোমাদের ঘদি কোনো কারণে আপশোষ করতে হয় ত তার জন্তে আমাকে দায়ী ক’রে না ।” মা বিষ্ণুচরণকে দুই হাতে জড়াইয়া ধরিয়া কঁদিতে কাদিত বলিলেন—“বাছা, দুঃখিনী মাকে অমন ক’রে কথর দাগ কেন দিচ্চিস মিথ্যে ? তুই আমার সাতটা নয় পাঁচটা নয়, অনেক দেবতার দেীর-ধরা একটা মাত্র ছেলে ; তোর বাবা যদি তোকে কলেজের খরচ নাই দেয়, আমিই আমার গয়নাগাটি বেচে থরচ যোগাব । তুই যা পড়তে চাস পড়, ওর জন্তে মনে কোনো দুঃখ রাথিস নে ৷” ছেলেরই হাতে মা গলার হার খুলিয়া দিলেন । বিক্ৰী করিয়া দেড় শত টাকা বিষ্ণুচরণ মাকে আনিয়া দিল । মা বলিলেন, **া রে, হীর ত গড়াতেই দেড়-শ টাকা লেগেছিল কি মা মনে পড়ে না । বেচ তেও কি অত কখনও পাওয়া যায় ?” বিষ্ণুচরণ হাজ পাড়িয়া বলিল, “কি জানি মা, সোনার দর বোধ হয় তখনকার চেয়ে এখন বেশী । জুছাড়া তোমার জিনিষটা এত ভাল আছে, যে, ঘরোয় খদের দেখেই লুফে নিয়েছে, নিক্তি কোন দিকে ঝুকেচে তা অত দেখেনি {* : : - মা বলিলে, “তুই লোকের কাছ থেকে ঠকিয়ে টাকা আমাকে কলকাতার গরাঞ্জলী" . نيسيtجه J. নিস নি ত, বাবা ? তাহ’লে কিন্তু বড় অধৰ্ম্ম হবে । অধৰ্ম্মেয় টাকা কখনও সুফল দেয় না, সে টাকায় কেন বিদ্যা সব বৃথা যায় ।” বিষ্ণুচরণ বিরক্ত হইয়া বলিল, “লা, লা, তোমার অত ভাবতে হবে না, আমি ঠিক টাকাই এনেচি ” মা বলিলেন, “তোর মুখের কথাই সত্যি হোক বাবা । এখন এই টাকাতে কিন্তু তোকে অন্তত ছু-মাস চালাতে হবে । তার মধ্যে আমি আর কিছু দিতে পারব মা ।” ছ-মাস পরে গৃহিণীর হাতের কঙ্কণজোড়াও বিষ্ণুর হাত দিয়াই বিক্ৰী হইয়া গেল । বৎসর দুই ধরিয়া গৃহিণী এমনি করিয়া খরচ চালাইয়া একেবারে নিঃস্ব হইয়া পড়িলেন। বিষ্ণু কিন্তু পরীক্ষায় ভাল পাস করিল, এই একটা মস্ত সাস্ত্রন । গৃহিণী স্বামীর হাতে ধরিয়া বলিলেন, “দেখ, যে-বয়সে মানুষ স্বামীর কাছে পাচটা গয়না কাপড় আবদার করে চায়, সেই ছেলেৰয়সে তোমার কাছে কখনও কিছু চাই নি । আজ বুড়ে বয়সে একটা জিনিষ চাইব, তুমি কিন্তু না বলতে পাবে না ।” あ পীতাম্বর বিস্মিত দৃষ্টিতে স্ত্রীর দিকে তাকাইলেন, শেষে কি গৃহিণী পাগল হইয়া গেলেন ? নাতি-নাতনীর দিদিমা হইয়া এত দিনে আবার নুতন কি সৰ্থ প্রাণে জাগিল ? ভয়ে ভয়ে বলিলেন—“কি চাই বল । ঘদি সাধ্যে কুলোয়, না বল্ব না । তোমার সব গয়নাই ছেলেটা খেয়েচে জানি, কিন্তু সে-সব দিতে ত আমি বার-বার বারণ করেছিলাম।” গৃহিণী বলিলেন, “গয়না আমি চাই না । কিন্তু ছেলেটা ভাল পাস করেচে, তুমি ওকে পড়াবে আর ক-বছর, অামার, মাথায় হাত দিয়ে এই কথা বল । ছেলে ডাঞ্জার ছ’ক্তে চায় ।” পীভম্বর আমৃতী-আম্ত করিয়া বলিলেন, “মাথায় হাত-টতি আবার কেন ? আচ্ছা, আমি চেষ্টা করব ওকে পড়াতে । সেজন্তে বেশী ভেবে না। তবে ডাক্তারী পড়ার খরচ একটা তালুক কেনার সমান এ বুঝে রেখে৷ ” পীতাম্বর চেষ্টা করিকে বলিলেন, কিন্তু নিজের রোজগারের সীমান্ত কয়ট টাকা হইতে পড়ায় খরচ জোগাইবার ইচ্ছ। কিংবা শক্তি কোনটাই তাহার ছিলন ৷