পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

এক সর্গের শেষে, পর সর্গের কথা নির্দেশ করিয়া দিতে হইবে । লক্ষ্যা, স্বৰ্য্য, চঞ্জ, রজনী, প্রদোষ, অন্ধকার, দিন, সম্ভোগ, বিপ্ৰলন্ত, মুনি, স্বৰ্গ, নগর, অধ্বর, রণপ্রেয়াণ, বিবাহ, মন্ত্র, পুত্রের জন্ম—এই সকল সবিস্তরে বর্ণনা করিতে হইবে । সর্গের নামকরণ হইবে কবি, তাহার ছদ, তাহার নায়ক বা অষ্ঠ কাহারও নামে, অথবা সর্গস্থিত কোন উপাদেয় কথা অনুসারে সর্গের নাম হইবে । কোন বিশেষ সাহিত্যকে সংজ্ঞা দিয়া বর্ণনা করিয়া ঠিক বোঝান যায় না, সাহিত্যের রস তো নিতান্তই সহৃদয়বেদ্য, তবু ভিন্ন ভিন্ন রীতির পার্থক্য বুঝাইতে গেলে এইরূপ সংজ্ঞ বা বর্ণনা ভিন্ন উপায় নাই। অবগু কাৰ্য্যতঃ এই সংজ্ঞ সৰ্ব্বত্র রক্ষিত হইত না, বিষয়-গৌরবে শ্ৰীজয়দেবের গীতগোবিনাও মহাকাব্য । যাহা হউক, কৌতুহলী পাঠক অধীত পাশ্চাত্য মহাকাব্যের সহিত ভারতীয় অলঙ্কারশাস্ত্রের নির্দেশ মিলাইয়া দেখিতে পারেন । ఛి ইউরোপীয় ‘এপিকূ’ কথাটার মূলেও ‘বৃত্ত বা ‘ব্যাপার’ রহিয়াছে ; উপাখ্যান এরূপ কাব্যের প্রাণ । ইপস' শব্দটার অর্থ গল্প, এপিক কথাটার অর্থ ‘গল্প-সম্বন্ধীয়” । গম্ভীরভাবে গুছাইয়া যে-কোন উপাখ্যান গল্প করা হয় তাহারই নাম এপিক । ইহার পিছনে যে শুধু বীর-গ্রসের ভাব রহিয়াছে তাহা ময়, প্রাচীন গ্রীসে ব্যক্তিগত অবদানের সঙ্গে সঙ্গে নীতি ও ধর্শের অনুযায়ী আদর্শও প্রচুর ছিল ।. হোমারের পূৰ্ব্বেও গ্রীসে এপিক ছিল, তবে সেই সকল এপিক-রচয়িতা কবিদের নাম পাওয়া যায় না । খ্ৰীঃপূঃ সপ্তম শতক্ষে একজন স্ত্রী মহাকবি ছিলেন বলিয়া পণ্ডিতেরা অহমান কল্পিয় থাকেন । তিনি কবিপ্রতিভায় হোমারের সমকক্ষ ছিলেন এরূপ মন্তব্যও শুনিতে পাওয়া যায়। ভৰ্জ্জিল খ্ৰীঃপূঃ ৩• অজে তাহার মহাকাব্য রচনা করিয়া গিাছেন। ইহানের সকলেরই মধ্যে মূলগত এপিক প্রবৃত্তি বা মহাকাব্যের প্রেরণা ছিল। মধ্যযুগে এই প্রবৃত্তি কমিয়া গিয়াfছল ; কিন্তু লুইগি পুচি, বইয়ার্দেী, জ্যারিওষ্টো ও ট্যালো প্রভৃত্তি ঋষিগণ মূল এপিক আদর্শে কাব্য রচনা করিয়া গিয়াছের ছাদের পরে খ্ৰীঃ সপ্তদশ শতাব্দীতে পমহাকশষ্য’ ইংরেজ কৰি মিল্টলের জাৰিঙ্গব। হোমার-ভঙ্গিলের মঞ্চ মিলটনের মনেও এপিকের থষ্ঠীর মুর্জি বিদ্যমান ছিলঃ অনন্ত আকাশ, মহাশূন্ত, অপরিসীম ব্যোম-উহার কল্পনার , রঙ্গভূমি। এপিকের উদার জাদর্শ লেখকের সম্মুখে জাজ্জ্বলামান থাকা উচিত ? নতুব গুরুগম্ভীর শব্দ বা শম্বোর কারণভূত ভাব কি করিয়া ক্ষুব্ধ হইৰে ? ~. ইউরোপীয় এপিকের মধ্যে মোটামুটি তিনটি উপাদান লক্ষ্য করিতে পারা যায়। তাহার ভাবাধার, তাহার শব্দসম্পদ, তাহার শব্দের বাধুনী । এপিকের পক্ষে তিনটিই অপরিহার্য্য, একটিকেও বাদ দিলে চলে ন; প্রথমতঃ, এপিকের মধ্যে বৈচিত্র্য থাক চাই, নাটকের প্রাণ যে ঘটনা তাহা থাকা চাই ; আরিস্ততল বলিয়া গিয়াছেন, নাটকীয় গুণ সঙ্গে সঙ্গে না থাকিলে এপিক উৎকৃষ্ট হইতে পারে মঞ্চ । দ্বিতীয়তঃ, কথার বাধুনী থাকা চাই, বাছিয়া বাছিয়া শঙ্গ প্রয়োগ করিতে হইবে, যাহাতে ধ্বনিতেই মনের মধ্যে একটা গম্ভীর উদাত্ত ভাব জাগিতে পারে ; কীটস যেমন শব্দ-বন্ধনকে প্রেমিকের দৃষ্টিতে দেখিয়াছেন, এপিক কবিও তেমনি দেখেন । কাব্য ত শুধু ভাবের সমষ্টিমাত্র নহে, ভাব না-হয় তাহীর প্রাণ হইল, কিন্তু সে প্রাণের উপযুক্ত দেহ করিতে হইবে, এমন দেহ করিতে হইবে যাহাতে প্রাণের সুষমা, শক্তি, মাধুৰ্য্য সকলই অভিব্যক্ত হয় । এইরূপে ভাবাধার, শব্দসম্পদ ও শব্দবিদ্যাল—এই তিনটির প্রতি দৃষ্টি রাখিয়া কবির মহাকাব্য রচনা করেন । এই তিনটির প্রতি দৃষ্টি রাখিলে চরিত্র-চিত্রণ প্রভৃতি আপনিই উন্নত হইবে । § বর্তমান যুগে বাংলা-সাহিত্যে যে-সব কাৰ্য রিচিত হইয়াছে তাহাজের উপর প্রাচীন ইউরোপ ও প্রাচীন ভারত উভয়েরই প্রভাব কাজ করিয়াছে, এ-কথা বলা যায়। ইংরেজী ১৮৬৩ সালে পয়ার ছলো ইলিয়ান্ডের বাংলা অনুবাদ হয় । মধুসুদন, হেমচঞ্জ, নীলচন্দ্র এই ক্ষবিজিতয় বাংলাসাহিত্যে এপিকের কৃষ্টি ক্ষরিয়া গিয়াছেন । যথাক্রমে ইহাজের কাব্যরচনারীতির আলোচনা করিব । মধুসুদন তাহার বাংলা কাব্যের মধ্যে ‘তিলোত্তমাসম্ভবই