পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

লণ্ডনের পত্র রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কল্যাণীয়েষ্ণু— অজিত, তোমাদের ওখানে এক বাক্স বই পাঠানো গেছে। তার মধ্যে একটা বই আছে বলে। সম্বন্ধে, একটা অয়কেনের মত নিয়ে। পড়ে দেখো এবং যদি লিখতে চাও লিখে । অয়কেনের সঙ্গে আমার মতের যথেষ্ট মিল আছে ; কিন্তু একটা বিষয়ে আমার মজা লাগে। অয়কেন খৃষ্টের দিব্যত্ব মানেন না, ত্রিত্ববাদ মানে না, মধ্যস্থবাদ মানেন না, খৃষ্টের পুনরুত্থান মানেন না, বাইবেলের বর্ণিত অলৌকিক ঘটনায় বিশ্বাস করেন না, অথচ বলেন তিনি খৃষ্টান এবং খৃষ্টান ধৰ্ম্মই শ্রেষ্ঠ ধৰ্ম্ম । অর্থাৎ অন্তান্ত ধৰ্ম্মকে অতীতের ইতিহাসে এক জায়গায় দাড় করিয়ে দেখেন এবং তার সঙ্গে এমন একটা ধৰ্ম্মের তুলনা করেন যেটাকে তিনি নিজের আদর্শের দ্বারা গড়ে তুলচেন। অবশ্য হিন্দুধৰ্ম্ম সম্বন্ধে আমারওঁ এই রকমের মনোভাব। আমি বলচি যা কিছু মানুষের শ্রেষ্ঠ আদর্শের সঙ্গে মেলে তাই হিন্দুধৰ্ম্ম । কেননা, হিন্দুধৰ্ম্মে জ্ঞান ভক্তি কৰ্ম্ম তিন পন্থাকেই ঈশ্বরের সঙ্গে যোগের পন্থা বলেচেন । খৃষ্টান ধৰ্ম্মের চেয়ে হিন্দুধৰ্ম্মের একটা জায়গায় শ্রেষ্ঠত্ব এই দেখি, হিন্দুধৰ্ম্ম সন্ন্যাসবাদের ধৰ্ম্ম নয়। খৃষ্টের উপদেশের ভিতরে যে ত্যাগের অনুশাসন আছে সেট, নিশ্চয়ই পূর্ণতার বিরোধী। হিন্দুধৰ্ম্মে গৃহধৰ্ম্মকে একটা খুব আদরের স্থান দিয়েচে–অথচ তাকে দিয়েই সমস্ত জায়গা জোড়ে নি—তাকেও যথানিয়মে যথাকালে অতিক্রম করবার দ্বার খোলা রেখেচে । অতএব হিন্দুধৰ্ম্মকে বাইরের দিকে যে-সব স্থল আবরণে আবৃত করেচে তাকে বাদ দিয়ে যে জিনিষটাকে পাই সে ত কোনো ধৰ্ম্মের চেয়ে কোনো অংশে নিকৃষ্ট নয়। কেনম, এতে মান্বযের হয়ে মন আত্মা এবং কৰ্ম্মচেষ্ট সমস্তকেই ভূমীর দিকে আহ্বান कुत्नु। आमि dरे छप्लरे ছিদ্মনাম ছাড়তে পারি নে—ব্রাহ্মধর্মকে হিন্ধ থেকে স্বতন্ত্র করতে পারি নে—কেননা, হিন্দুধৰ্ম্মই যদি নিজের প্রাণশক্তির দ্বারা ব্রাহ্মধৰ্ম্ম হয়ে উঠচে এ-কথা সত্য না হয় তবে এ মরীচিকণ টিকবে না, কারে কোনো কাজে লাগবে না। অয়কেনের খৃষ্টান ধৰ্ম্ম জিনিষটা যেমন, আমার হিন্দুধৰ্ম্মও তেমনি ; অর্থাৎ ওর মধ্যে যেটা নিতা সত্য সেইটের দ্বারাই ওকে বিচার এবং গ্রহণ করতে হবে। বিজ্ঞানশাস্ত্রের ইতিহাস অনুসরণ করলে দেখা যাবে বিজ্ঞান হাজার হাজার ভূলের ভিতর দিয়ে চলে এসেচে। সেই ভুলগুলোর দিকেই যদি তাকাই তাহলে ফিসিক্স মিথ্যা, কেমিষ্ট্র মিথ্যা, সত্য বিজ্ঞান নেই বললেই হয়। কিন্তু বিজ্ঞানের প্রাণের মূলে সত্য আছে । সেই দিকেই তাকিয়ে তাকে শ্রদ্ধা করি। কিন্তু ঘোরতর বৈজ্ঞানিক ঘথন ধৰ্ম্মকে বিচার করে তথম তারা ধৰ্ম্মকে স্থির ক’রে দঁাড় করায় এবং বিজ্ঞানকে চলনশীল ক’রে দেখে। যেমন জীবনের গতি বন্ধ হবামাত্র এই বিস্কৃতির বোঝা ভারি হয়ে ওঠে, অথচ জীবন চলবার পথে যতক্ষণ থাকে সমস্ত রোগ বিকার অসম্পূর্ণতার ভিতর দিয়েও তার স্বাস্থ্য প্রতিভাত হয়—ধৰ্ম্মও ঠিক সেই রকমই, তাকে দাড় করিয়ে দেখলেই মুস্কিল। হিন্দুধৰ্ম্মের শক্র ও মিত্র উভয়েই তাকে দাড় করিয়ে দেখতে চায়—শশধর তর্কচূড়ামণিও তাঁকে খাড়া ক’রে ধরে ফুলচন্দন দেয় আর মিশনরি সাহেবও তাকে কাঠগড়ায় দাড় করিয়ে চূণকালি মাখায়। কিন্তু আমি তাকে চলবার মুখে দেখি, তখন সে তার সমস্ত পাক এবং দুষিত পদার্থের চেয়ে বড় হয়ে ওঠে, তখন সে যথার্থই পতিতপাবনী শ্রোতস্বিনী। আমার মুস্থিল হয়েচে এই যে আমাকে গোড়া হিন্দুওঁ একঘরে করে আমাকে গোড়া ব্রাহ্মও জাতে ঠেলে । হঠাৎ এক বৈজ্ঞানিক বলে বসেছে প্রাণ জিনিষটাকে এক দিন নিশ্চয়ই ল্যাবরেটরীত্বে তৈরি করতে পারবে— শুনে ধাৰ্ম্মিক লোকের চিত্ত অত্যন্তু উদ্বেজিত হয়ে