পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৯০৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আম্বিন অভ্যর্থনায় যাহাতে কোন খুৎ না থাকে তাহ তদারক করিবার জষ্ঠ বৃদ্ধ কৰ্ত্ত নিজেই আসরে নামিয়াছেন, অন্ত কাহারও উপর ভার দিয়া নিশ্চিন্ত হন নাই। নানারকম মুখাদ্যের আয়োজন হইয়াছে, স্থানীয় পাচকে সব যদি না পারে, এজন্ত নানা স্থান হইতে পাচক ও ময়রা জোগাড় করিয়া আনা হইয়াছে। বিকাল হইতে পূর্ণিমারূপিণী পূর্ণিমা রক্তাম্বরে মালচন্দন ও রত্নালঙ্কারে সাজিয়া বসিয়া আছে, সর্থীর দল তহিকে ঘিরিয়া কলরব করিতেছে । চারি দিকেই উৎসবের আনন্দ ও শোভা, শুধু উমাশশীর মনে আশঙ্কা ও আনন্দ যেন পাশাপাশি রাজত্ব করিতেছে । চার হাত এক হইয়া না-যাওয়া পর্যন্ত র্তাহার আর শাস্তি নাই | সন্ধ্যার পরেই প্রথম লগ্ন । এখনও বস্তৃপক্ষীয়দের দেখা নাই। সকলেই একটু যেন উদ্বেগ অনুভব করিতে লাগিল । বাড়ি ত তাহদের বেশী দূরে নয়, সময়মত বাহির হইলে এতক্ষণে আসিয়া পড়ার কথা । কি ব্যাপার কেহ বুঝিতে পারে না । চন্দ্রকাস্তের মুখের দিকে তাকাইয়া সবাই ভয়ে ভয়ে এধার-ওধার সরিয়া যাইতে লাগিল, সাহস করিয়া কে তাহীকে প্রশ্ন করিতে যাইবে ? বর যেন আসিয়া পড়িল বলিয়া, এমন ভাবে তিনি সকলকে কাজ করিতে হুকুম করিয়া যাইতেছেন, তাহার আদেশ অমান্ত করিবার কথাও কেহ ভাবিতেছে না । লগ্ন আসিয়া পড়িল, কাহারও দেখা নাই। সকলের মান অগ্রাহ করিয়া উমশিশী আসিয়া বীপের পায়ের উপর আছাড় খাইয়া কাদিয়া উঠিল, “বাবা, আমার খুকীর কি দশা হবে ?” চন্দ্রকাস্ত প্রলয়মেঘাচ্ছন্ন আকাশের মত মুখ তুলিয়া বলিলেন, “কঁাদিস নে, আরও লগ্ন আছে । বর এল বলে, তুই ভিতরে যা।” উমাশশী" ভিতরে চুলিয়া গেল । চক্ৰকাস্ত একবার কাছারি-বাড়িতে গিয়া কাহার সহিত কি পরামর্শ করিলেন শোনা গেল না, তাহার পর বাহিরে অসিয়া বলিলেন, “আলো যেন একটি ল নেবে, বাঙ্গনা যেন এক মুহুৰ্ত্ত না থামে, আমি এক ঘণ্টার মধ্যে বর নিয়ে আসছি।” উৎসব-ভবন কি এক নিদারুণ অজানা আশঙ্কায় যেন রুদ্ধ ఆy-్ను বর-ছুরি بھٹائی: শ্বাসে অপেক্ষা করিতে লাগিল । পাচ-শ সশস্ত্র লাঠিয়াল ঘোড়া ও হাতি লইয়া চন্দ্রকান্ত বাহির হইয়া গেলেন। অন্দরমহলে ক্ৰন্দনের রোল উঠিল, তাঙ্গকে ডুবাইয়া নহবৎ সমানে বাজিতে লাগিল । J . কিন্তু এক ঘণ্টা শেষ হইতে না-চষ্টতে বর আসিয়া পড়িল । তুমুল শঙ্খ ও হুলুধ্বনিতে চাকাশ যেন বিদীর্ণ হইয়া যাইতে লাগিল, প্রচণ্ড শব্দে বোমা পটকা ফুটিয়া পশুপক্ষীকেও সম্বস্ত করিয়া তুলিতে লাগিল । কান্নাকাটি ভুলিয়া মেয়ের দলে দলে ছাদে ও জানুলার ধাবে ছুটিল বর দেখিবার:জষ্ঠ । বরের হাতী এ যে । চন্দ্রকাস্তের গৃহিণী আৰ্ত্তনাদ করিয়া উঠিলেন, “ওমা ও কে গো ; এ ত আমাদের সুরেন নয় : কর্তা কোথা থেকে এ শুকনো কালে ছোড়াকে নিয়ে এলেন ?” - পাশ হইতে দাসী আন্না বলিয়া উঠিল, “হায়, হায়, কোথায় যাব মা ! এ যে মিত্তিরদের ছোট ছেলে বিমল ! কৰ্ত্তা একে কি ক’রে আনলেন গে গিল্লিমা ? এখুনি যে খুনোখুনি বেধে বাবে ? হায় হায় আমাদের রাঙা দিদিমণির একি হ’ল ম’ ?” কিন্তু সকল আৰ্ত্তিনাদ, প্রশ্ন জিজ্ঞাসা ও উত্তরের মধ্যে বিবাহ হইয় গেল। চন্দ্রকান্ত পুর্ণিমাকে নিজে নাম হয়। লইয়া সভাস্থলে চলিয়া গেলেন । অন্দরমহলে আবার কান্না উঠিল, “ওমা, স্ত্রী-আচার হ’ল না, কিছু না, একি বিয়ে গে৷ মা !” সম্প্রদান আদি হইয়া গেল । কন্ঠ জামাতাকে তুলিয়া আনিয়া চক্ৰকান্ত বলিলেন, “নাও, এবার কত স্ত্রী আচার করতে পার কর ।” বিমলের দিকে তাকাইয়া বলিলেন, “নাতজামাই, ডাকাতি ক’রে এনে ছ বটে তোমায়, তবে তুমিও আমার ঘরের সব সেরা রত্ন লুটে নিয়ে চল 鷺 পাঁচ-শ লাঠিয়াল সারারাত বাড়ি ধিরিয়া রছিল।” প্রতি মুহূৰ্ত্তে সকলের মনে আশঙ্কা জাগিতে লাগিল এই বুৰি পুত্রহরণের প্রতিশোধ লইবার জন্ত করালমুৰ্ত্তি করালীকিঙ্করের আবির্ভাব হয় । আসন্ন সংঘর্ষের জন্ত সকলে প্রস্তুত হইয়া রহিল । বাসর-ঘরেও সকলে শুদ্ধ হইয়া বসিয়া, শুধু বিমল এক-একবার চোর চাহনীতে নবপরিণীতা, পত্নীর অপূৰ্ব্ব সুন্দর মুথের দিকে চাহিয়৷ দেখিতেছে ।