পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৯১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিপরীত শ্রীসীতা দেবী ভগবান রামহরি মুখুজ্জ্যের অদৃষ্টে সবই উন্ট লিখিয়ছিলেন। এক ত মা-বাপ তাহাকে স্কুথের পৃথিবীতে আনিয়া দিয়াই বিদায় হইলেন, রামহরিকে মানুষ হইতে হইল মামাবাড়ির হুড়কো ঠাঙা এবং দই সন্দেশ উভয়ের সাহায্যে। দিদিমা বাচিয়া থাকিতে দই সন্দেশের ভাগটাই বেশী ছিল, তিনি মারা যাইবার পর হুড়কো ঠ্যাঙার অংশটাই প্রবল হইয়া উঠিল। কিন্তু রামহরি তখন ডানপিটে হইয়া উঠিয়াছেন, কাজেই ইহা সত্ত্বেও টিকিয়া রহিলেন । তাহাকে লেখাপড়া শিথাইবার বিশেষ কোনো চেষ্টা হইল না। কিন্তু তবু লেখাপড়া তিনি শিথিয়াই ফ্লেলিলেন। বডমামীর এক ভাই র্তাহাকে কলিকাতা লইয়া আসিয়াছিলেন, ছেলেটার একটা গতি করিয়া দিবার জন্য । ইচ্ছা ছিল বামুনঠাকুরের স্থানে না হোক, বাজারসরকারের পদে তাহাকে অবৈতনিকভাবে বাহাল করিয়া রাখিবেন। কিন্তু রামহরি প্রাতঃস্মরণীয় বিদ্যাসাগর প্রভৃতির দৃষ্ঠাস্ত অনুসরণ করিয়া লেখাপড়া শিখিবার জন্য অসম্ভব উৎসাহ দেখাইতে লাগিলেন । বাজারসরকারের কাজে সময় খুব বেশী যাইত না, কাজেই পড়ার সময় ছিল। দেখিয়া শুনিয়া বাড়ির গৃহিণী তাহাকে বৈঠকখানাঘর ঝাড়পোছের কাজটাও দিয়া দিলেন। ইহাতেও রামহরিকে দমান গেল না, বরং কোথা দিয়া স্বপারিশ করাইয়া তিনি অবৈতনিক ছাত্ররূপে স্কুলে ঢুকিয় গেলেন। বড়মামীর বৌদিদি ইহাতে একান্তই চটিয়া বেম্বাদব ছেলেটাকে বাড়ি হইতে বিদায় করিবার ব্যবস্থা করিতেছিলেন, এমন সময় কৰ্ত্ত বলিলেন, “থাক না ছোড়া, টেব মার বন্টর মাষ্টারটাকে ষ্টাড়িয়ে দিলেই হবে । দুবেল য’সে গিলছে আর এইটুকু পারবে না ? রামহরির আপত্তি ছিল না, তিনি পড়িতে লাগিলেন, এবং পড়াইতে লাগিলেন। নিজের পদমৰ্যাদা সম্বন্ধে তাহার নিজের কোনো চেতনা ছিল না, সুতরাং এম্-এ পাল না করা পৰ্য্যস্ত এইখানেই থাকিয় গেলেন এবং বাড়ির ছেলেমেয়েদের যখন 3 * যাহাকে প্রয়োজন পড়াইতে লাগিলেন। আগের চেয়ে যে তিনি ভাল খান, শুইবার জন্য যে তক্তাপোষ এবং ভাল বিছানা পাইয়াছেন, বাড়ির সব কয়জন চাকরের সঙ্গে যে র্তাহাকে শুইতে হয় না, এ-সব তুচ্ছ ব্যাপার সম্বন্ধে তিনি কোনোদিনই মনোযোগ দিলেন না । সৰ্ব্বপ্রথম তাহারও মনে সাড়া জাগিল যখন তিনি শুনিলেন র্তাহার কৈশোরের প্রথম ছাত্রী শ্ৰীমতী টেবী ওরফে কুমারী নীহারিকার সঙ্গে তাহার বিবাহের আয়োজন হইতেছে। অত্যন্ত ব্যস্ত হইয়া বাড়ির গৃহিণীর কাছে গিয়া বলিলেন, “রাঙা মামীম, এটা কি রকম যেন হ’ল। টেবৰুে আমি ছোটবেলা থেকে—” রাঙামামী সাতজন্মেও রামহরিকে কোনো ভাবে খাতির করা আবশ্বক বোধ করেন নাই ; আজ কিন্তু ভবিষ্যৎ শাশুড়ী রূপে তাড়াতাড়ি মাথার কাপড় টানিয়া দিয়া বলিলেন, “ই৷ বাবা, সেই জন্যেই ত ভরসা করে মেয়েকে তোমার হাতে দিচ্ছি। মেয়ে আমার দেখতে ভাল নয়, অন্ত জায়গায় বড় হেনস্থ হবে। তোমার কাছে সে ভয় নেই, তুমি ওর ভিতরে কত গুণ তা জান ।” টেবীর রূপ বা গুণ কিছুই বেচার রামহরির অজ্ঞাত ছিল না ; কিন্তু এ বাড়িতে র্তাহার সম্বন্ধে যখন ষ ব্যবস্থা হইয়াছে, কোনটাতেই তিনি যেমন আপত্তি করেন নাই, এটাতেও তেমনি করিলেন না । শুভদিনে শুভক্ষণে শ্ৰীমতী নীহারিক তাহার পরীত্বে অধিষ্ঠিত হইয়া ঘর জুড়িয়া বসিলেন। নীহারিকার রূপ গুণ যাহা থাক বা না থাক, পক্ষ ছিল । , রামহরির একটা চাকরিও ভালমত জুটি গেল। শ্বশুরবাড়ি ত্যাগ করিয়া এইবার তিনি বাড়ি ভাড়া করিয়া আলাদা .গ্রাসার করিলেন। নীহারিক গৃহিণীপণায় মাকে এবং ੋਂ ছাড়াইয়া গেল। রামহরি কতকগুলি টাকা রোজগার করিয়া জানেন মাত্র, সংসার পরিচালনায় আর তাহার কোনোই হাত নাই। র্তাহাকে যাহা ধাইতে দেওয়া ।