পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৯২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মনের গহনে ঐসরোজকুমার রায়চৌধুরী এ-পাশে শিবের মণ্ডপ । মাঝখানে একটা ডোব । ও-পাশে সদাই ঘোষের ছোট্ট কুড়ে ঘর । শিবের মণ্ডপ জরাজীর্ণ হুইয়া গিয়াছে। ছাদের খানিকট অংশ ভাঙিয়া পড়িয়াছে । খামগুলা সরু হইয়া আসিয়াছে, গাজনের চাক বাজিলে বুড়া মানুষের র্দাতের মত হল হল করিয়া নড়ে। তথাপি যে ভাঙিয়া পড়ে না, সে নিশ্চয় স্বাৰা ধৰ্গরাজের মহিমা । প্রতি বৎসর গাজনের সময় মণ্ডপের মাতব্বরের মণ্ডপ সংস্কারের জন্ত চাঁদা সংগ্রহের চেষ্টা করে। গাজন কটিয়া যায়, কিন্তু চাদ ওঠে না । আবার যে কে সেই । এমনি করিয়া বছরের পর বছর কাটে। মণ্ডপের অবস্থা জীর্ণ হইতে জীর্ণতর হয়। গণ্ডপের দেয়াসীন চাকের বাজনার সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে মাথা কোটে। বাবা ধৰ্ম্মরাজ অবশেষে তাহার স্বন্ধে ভর করেন। দেয়ালীন মগুপের বিস্তীর্ণ প্রাঙ্গণে গড়াগড়ি দেয়। ভক্তেরা ঘন ঘন 'বলো শিবো ধৰ্ম্মরাজ বলিয়া চীৎকার করে, কেহবা দেয়াসীনকে বাতাস করে, কেহবা বেতের ছড়িটা দিয়া ভিড় সরায় । —বাবা, কি অপরাধ হয়েছে বলুন ? দেয়ালীন পাশের গ্রামের চাড়ালদের একটি আধা-বয়সী। মেয়ে। পরণে রক্তার। গলায় এবং হাতে অনেকগুলি ক্ষাক্ষের মালা। মাথায় জুটা। কথা কহিলেই ভক ভক্ত করি মদের গন্ধ বারি হয়। বাবা সবােধন করা হইল তাহাকে নয়, তাহার মাথায় যে দেবতা ভর করিয়াছেন তাহাঞ্চে । বাবা দেয়াসীনের মুখ দিয়া বলিলেন—আমার ঘরের কি কলি কতদিন থেকেই তো বলছি। কি কলি ? কি কলি ? ' জল হবে ভেবেছিস ? হবে না ত তোদের ধান হবে বলে কি আমি ভিজব নাকি ? হবে না ক্ষে । আমার ধরে কি কলি ক ? التي বাৰা বহুদিন হইতে এমনি খাল শলাই আলিতেছেন। গ্রামের ষোলে আনার বাবার উপর শ্রদ্ধাও অটুট। কিন্তু তথাপি মণ্ডপের সংস্কার আর এই কয়েক বৎসরে কিছুতে হইয়া উঠিতেছে না। তবু এ-পর্য্যস্ত এই অপরাধে বাবার রুদ্ররোষ কাহারও উপর নামে নাই। গ্রামের লোকে বাবার মন্দিরের ধূলা জিহবার অগ্রভাগ হইতে ললাট পর্যাস্ত ভক্তিভরে স্পর্শ করে । বলে,—বাবা আমাদের সদাশিব। নইলে এত অপরাধের বোঝা নিয়ে কোন দিন ভরাডুবি হয়ে যেত। ছেলেপুলে নিয়ে ••• না, বাবার সদাশিবত্ব সম্বন্ধে সন্দেহ করিবার বিন্দুমাত্র কারণ নাই। এতগুলি সস্তানের সম্বৎসরের সমস্ত অপরাধের বিষ তিনি নিজের কণ্ঠে তুলিয়া লইয়া গাজনের কয়টা দিন বিনা আপত্তিতে রৌদ্রে পোড়েন এবং বৃষ্টিতে ভেজেন। তাহার পক্ষে মুখের কথা এই ষে, বেশী দিন এই ভাঙা মণ্ডপে তাহাকে বাস করিতে হয় না | বারে মাসই পুরোহিত-গৃহে থাকেন। মণ্ডপের অবস্থা এইরূপ । ডোবার অবস্থাও তাহার চেয়ে ভাল নয়। এপাড়ার এইটিই খিড়কী বলিলে খিড়কী, সদর বলিলে সদর । বাসনমাজ, হাত-পা ধোওয়া এই জলেই হয় । মুখে দিবুর উপায় থাকিলে মুখ ধোওয়াও চলিত। কিন্তু সে উপায় নাই। শুধু এই ঘাটের দিকটা ছাড়া বাকী সাড়ে তিন দিকে দুর্ভেদ্য বাঁশের ঝাড় এমন অন্ধকার : করিয়া আছে যে, জলে কুৰ্য্যালোক পড়িবার কোন প্রকার আশঙ্কা নাই । এ-কথা শুনিয়া শহরের লোকে নাসিক কুঞ্চিত করিকেন সন্দেহ নাই ; কিন্তু সমস্ত ব্যাপার, ঔ তাহারা জানেন না। পাড়াগারে বাশ নিত্যপ্রয়োজনীয় বন্ধ। খর ছাওনা, খুটি তৈরি করা আছেই। বাশের পাতা জলে পড়িয়া, জল নষ্ট করে এ তথ্য তাহাজের নিজেদেরও জবিভিনয় । কিন্তু উপায় কি ? প্রতিবেশীর কেহই