পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ধ্ৰু প্রবাসী; SSR* তীরের মত ছুটিয়া গিয়া লতা ভোলার পিঠে চেলা কাঠের বেশ এক ঘ বসাইয়া দিয়া বলিল, “বাদর ত তুমি, এইবার দেখ জয় জগন্নাথ ” বলিয়া ক্ৰন্দনপরায়ণ দাদার হাত খরিয়া ভিতরে টানিম্ন আনিয়া দরজা বন্ধ করিয়া দিল । এই— টুকু মেয়ের হাতে মার খাইয়া ভোম্বলচন্দ্র এতই অবাক হইয়া গিয়াছিল যে, প্রতিবাদ করিবার চেষ্টাও সে করিল না । নীহারিকা অবশ্য ব্যাপার গুনিয়া গালে হাত দিয়া বলিলেন, * ওমা কোথায় যাব । বেটাছেলেকে ঠেঙিয়ে এলি অমন করে ? লোকে বলবে কি ? মা, মা, মা, এ মেয়ে ত নয়, একেবারে মহিষমদিণী ।” লতার মাষ্টার হঠাৎ এই সময় দেশে চলিয়া গেল। কাস্তির আর আনন্দ ধরে না, সকালবেলাটা এখন বেশ খুণীমত খেল এবং খাওয়ার চর্চা করিতে পরিবে । লতা কিন্তু ভাবিয়াই অস্থির, তাহাকে পড়াইবে কে ? মায়ের এ-সব দিকে সহানুভূতি নাই, তাহা সে এখনও বুঝিতে পারে, অগত্য নিরীহ বাবাটিকেই গিয়া আক্রমণ করিল, “আমি বুঝি পড়ব না ? জামি বুঝি তোমার ন্যাক ছেলেব মত মুখ হয়ে থাকব ?” রামহরি ব্যস্ত হইয়া বলিলেন, “না মা না, মুখু কেন হবে ? মাষ্টার ত খোজ হচ্ছে, পাওয়া গেলে সে তোমাকেও পড়াবে।” লতা বলিল, “হ্যা, মাষ্টারও এসেছে, আর আমিও পড়েছি । ঐ যে বালিকা বিদ্যালয়ের গাড়ী যায় রোজ এই গলি দিয়ে, সেই বালিকা বিদ্যালয়ে আমি পড়ব ।” রামহরি অনুগত অধস্তন কৰ্ম্মচারীর মত নীহারিকাকে খবর দিলেন। গৃহিণী ঠোট উন্টাইয়া বলিলেন, “হয়েছে, হয়েছে, মেয়ে সত্যিই ত আর ম্যাজিষ্টর হবে না, এগন বসে বলে তার টাইমের ভাত রাধি আর ইস্কুলের মাইনে গুণি । অতয় কাজ নেই।” কিন্তু কে বা তাহার কথা শোনে ? তাহারই মেয়ে ত? লতা খাওয়া, নাওয়া, শোওয়া, কাজ করা, দাদাকে সামলান, সব হঠাৎ একসঙ্গে তাকে তুলিয়া রাখিয়া, এমন সগর্জনে কান্না শুরু করিল যে, নীহারিকাসুদ্ধ ব্যস্ত হইয়া উঠিলেন । রাগট পড়িল রামহরির উপরেই। এমন বাপ ন হইলে, এমন মেয়ে হয় ? সাতজন্মে তিনি এমন কাও দেখেন গাই। তাহারাও ত মা-বাপের মেয়ে, এমন অন্যায় আবার করিতে কে কবে { র্তাহীদের দেখিয়াছে ? আপদ মেয়েকে ইস্কুলেই দিয়া অভ্যাস হোক, মানুষের কান ফুটা জুড়াক্ । রামহরি লতাকে স্কুলে ভৰ্ত্তি করিতে চলিলেন । মনে মনে বুঝিলেন, তাহার রাজ্যে আবার সম্রাঞ্জী বদলের সময় উপস্থিত হইয়াছে । লতা স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষয়িত্রীদের একেবারে অবাক করিয়া দিল । এমন তীক্ষ বুদ্ধি, এমন মনোযোগ, তাহার ইতিপূর্কে কোনো ছাত্রীর মধ্যে দেখেন নাই । স্মৃতিশক্তিও তাহার অসাধারণ, কোনো কথা তাহার কাছে পড়িতে পায় না । বংসরের মাঝখানে ভৰ্ত্তি হইল বটে, কিন্তু বৎসরের শেষে পরীক্ষায় সব কট বিষয়ে প্রথম হইয়। ক্লাসের সব কয়জন মেয়েকে সে একান্তভাবে চটাইমা দিল । হরেক রকম প্রাইজে দুই হাত ভরিয়া যে-দিন সে বাড়ি আসিয়া হাজির হইল, সে-দিন এমন কি নীহারিক পর্যন্ত খুশী না হইয়া থাকিতে পারিলেন না। সত্যি মেয়েটার গুণ আছে। হায়, হাম্ম, ইহার শতাংশের একাংশ বুদ্ধি যদি ছেলেটার থাকিত। পোড়া ভগবানের কি বিচার অাছে গ ? এই মাকাল ফলের মত ছেলে, বাপ-ম যখন থাকিবে না, তখন খাইবে কি ? স্বাস্থ্যও তাঁহার এমন যে মুটেগিরি করিবার যোগত্যাও তাহার কোনো দিন হইবে না। আর এই মেয়ে, গুশের দিক দিয়া বিচার করিতে গেছে হীরার টুকর, কিন্তু একটুখানি রূপের অভাবে কোনো আদরই ইহার হইবে না। বিবাহ দিতেই জিব বাহির হইয়া পড়িবে, কেমন যে বর জুটিবে কে জানে ? লতার পড়াশুনায় ক্রমেই উন্নতি হইতে লাগিল-f"বি" পচিশ বৎসর আগের কথা, তখন কলিকাতা শহরেও হাজানে হাজারে মেয়ে স্কুলে পড়িত না। পরীক্ষ। দিতে অগ্রসর যে-কাট মেয়ে হইত, তাহাদের দিকে লোকে সশ্রদ্ধবিস্ময়ে তাকাইয় থাকিস্ত । আই-এ, বি-এ পাস করা মেয়ের সংখ্যা তখন এক হাতের আঙুলে গোনা যাইত। মেয়ের ছেলেদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় যে পরীক্ষায় প্রথম দ্বিতীয় হইতে পারে এমন অসম্ভব সম্ভাবনাও কাহারও মাথায় জাসিত না। কিন্তু লতা সম্বন্ধে ক্ৰমে এই রকম একটা অস্পষ্ট সন্দেহ,তাহার স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষয়িত্রীদের মাথায় আসিতে জারম্ভ করিল। এমন ছাত্রী তাহারা কখনও পান নাই, ইহাকে শিখাইতে গিয় নিজেদেরই যেন মধ্যে মধ্যে লজ্জিত হইয়া পড়িতে হয়। স্কুলের বাংলরিক পরীক্ষার প্রথম প্রাইজগুলা ত তাহার হাতে ধর