পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৯৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বৈশাখ বিপরীত্ত 發 ዓ› লাগিল । মেয়ে যে হাজায় পড়ায় ভাল হইলেও জঞ্জ বা ম্যাজিষ্ট্রেট হইবে না, ইহাও বিন্দ্রপের স্বরে অনেকে জানাইয়া দিল । রামহরি এখনও বিচলিত হইলেই নীহারিকার কাছে ছুটিয়া আসেন, চিরদিনের অভ্যাস যাইবে কোথায় ? জিজ্ঞাসা করেন, “কি করা যায়, খোকার মা ?” নীহারিক জড়াইয়া বলেন—“কিছু করতে হবে না, মেয়ে পড়,ক। রামহরি বলেন, ‘পাড়ার লোকে বড় নিন্দে করছে । নীহারিক বলেন, “তাদের মুখে পোকা পড়ুক, আমরা নৈকিষ্যি কুলীনেয় ঘর, মেয়ে চিরকুমারী থাকলেও নিন্দে নেই। লতা পরীক্ষায় প্রথমই হইল । সে নিজে কিছুই বিস্মিত হইল না, কিন্তু চেনা-অচেন সকলকে রিস্মিত করিয়া দিল । নীহারিক মেয়েকে কোলের কাছে টানিয়া লইয়া অাদর করিতে লাগিলেন। রামহরি আনন্দে অধীর হইয়া কি যে করিবেন ভাবিয়াই পাইলেন না। কান্তিচন্দ্র রাগের চোটে বাড়ি হইতে সেই যে বাহির হইয় গেল, আর রাত বারটার আগে ঘরেষ্ট ফিরিল না । চেনা শুনা কাহারশু বাড়িতে না গিয়া, ইডেন গার্ডেনে গিয়া বসিমা রহিল । চেনা মাতুষে দেখিলেই ত লতার সাফল্যে আনন্দ প্রকাশ করিতে বসিবে ? আর তাহার সহ হয় না । একে ত উমার বিবাহের সম্বন্ধ হইতেছে শুনিয়া অবধি সে মরিয়া হইয়া উঠিয়াছে। এ-দুঃখের কথা কাহাকে সে জানাইবে ? আঁঠার বৎসরের ছেলে, পড়াশুনা কিছু করে নাই, শুধু রূপ দেখিয়া কেহ কি তাহাকে কস্তা সম্প্রদান করিবে ? মা বাবা তাহার দারুণ মনোবেদনার কথা একবারও কি ভাবেন ? তাহারা বলিলে কহিলে উমাকে কি আর কান্তির সঙ্গে বিবাহ দেয় না ? যাহা হউক, গরিবের মেয়ে ত ? কত ভাল বিবাহই আর তাহার হইবে ? কাস্তি একগাদা ইংরেজী বইই না হয় মুখস্থ করে নাই, কিন্তু তাহার মত সাহিত্যিক প্রতিভা তাহার বয়সের কোন ছেলের আছে ? আর ঘরটা কত বড় তাহাও ত দেখিতে হইবে ? কিন্তু পিতামাতা নিজেদের ঐ কেলে হোৎকা মেয়ের বিদ্যাবত্তার গৰ্ব্বে একেবারে দিনে তারা দেখিতেছেন, কাঙ্কি-বেচারার কথা ভাবিবারই তাহাজের সময় নাই। লত আই-এ পড়িতে ঢুকিল। এখন স্কলারশিপের জোর আছে, কাজেই কিছুতে আর আটকাইবে না। ঘরের বাহিরের কোনো কথাতেই আর সে কান দেয় না । প্রতিবেশিনীরা তাহার দেমাক দেখিয়া দিনের দিন রুষ্ট হইয়া উঠিতেছে। অত্যদ্ভুত রকমের দুই-চারটি পাত্রও অনেক সময় তাহারা খুজিয়া আনে, কিন্তু তাহদের পরিচয় শুনিবা মাত্র লতা এমন হাসির ফোয়ার ছুটাইয়া দেয় যে, ঘটকী এবং পাত্র অপ্রস্তুত হইম! পলাইবার পথ পায় না । কাস্তির ইচ্ছা করে বোনের মাথাটা গুড়া করিয়া দেয়, কিন্তু সে জোর তাহার কোথায় ? ফাষ্ট ইয়ার, সেকেণ্ড ইয়ারের দুইট বৎসর প্রায় শেষ হইয়া আসিল। এমন সময় নীহারিক হঠাৎ ঘর-সংসারের মায়া কাটাইয়া চলিয়া গেলেন । শেষ কথা স্বামীকে বলিয়! গেলেন, “লতু আমার যত পড়তে চায় পড়িও।” শোকের ঘোরে কয়েকটা দিন কাটিয়া গেল। লতাই ঝাড়িয়া উঠিল সবার আগে । মুখ মান, চোখে জল, কিন্তু সমানে ঘরের কাজ করিতেছে, পড়া করিতেছে । প্রতিবেশিনীর গালে হাত দিয়া বলিল, “ধষ্ঠি মেয়ে বাবা, এমন যারপরনাই মা, সে চলে গেল, তাতেও দু-দিন সবুর নেই, কেভাবী বিবির মুখ থেকে কেতাব নামল না। সাধে শাস্ত্রে মেয়েদের লেখাপড়া শেখাতে মানা আছে ?” কাস্তিচন্দ্রের বয়স এখন কুড়ি বংসর । দেখিতে রাজ পুত্রের মত। দেরাজে কবিতার খাতাও জমা হইছে অনেকগুলি। ভাগ্যবিধাতা নিতান্তই প্রসন্ন, তাই উমার এখনও বিবাহ হইয়া যায় নাই । তাহার বয়স আঞ্জকাল বৎসরে বৎসরে কমিতে আরম্ভ করিয়াছে। কান্তিচন্দ্রের অবস্থা অবর্ণনীয় । তলে তলে এক দিন বিনয়ের কাছে বিবাহের প্রস্তাবও তুলিমাছিল, সে একরকম অপমান করিয়াই কাস্তিকে বিদায় করিয়৷ দিয়াছে। বিনয় বলিয়াছে, “তুমি না হয়ে লতা যদি পাত্ররূপে হাজির হত, এখনি বোনকে ধরে দিতাম। তুমি বিয়ে ক’রে স্ত্রীকে খাওয়াবে কি ? ঐ বুড়ো বাপ যে ক'দিন সেই কদিন ভ ?” কাস্তি ভারিঙ্কি চালে বাবার কাছে গিয়া বলিল, “বাব, সংসারটা ত রসাতলে যেতে বসল, লতা কিছুই দেখে না।”