পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/১৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

এই ১২৬ - S3DBO মতভেদ চলিয়াছে। ষ্টেটগুলি ফেডারেল গভর্ণমেণ্টের হুবিধার জন্যই স্বর্ণমান পরিত্যাগ করিয়াছে । অধিকার সন্দেহের চক্ষে দেখে এবং সৰ্ব্ববিষয়েই নিজেদের ক্ষমতা অক্ষুন্ন রাখিতে চেষ্টা করে । যদিও অবস্থায় পড়িয়া তাহাদের ক্ষমতা কতকটা খৰ্ব্ব হইয়াছে, তথাপি অনেক বিষয়েই ফেডারেল এবং ষ্টেট গভর্ণমেণ্টের ভিন্ন ভিন্ন বিধিনিয়ম আছে। যতদিন অন্যান্য দেশের সহিত যুক্তরাজ্যের ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধ ছিল না ততদিন ইহার অপকারিত তাহারা তত অহুভব করে নাই। কিন্তু বিগভ মহাযুদ্ধের পর হইতে অস্তান্ত দেশের সঙ্কিত আমেরিকার নিকট সম্বন্ধ হইয়াছে। যুদ্ধের দ্রব্যসম্ভার খরিদ করিয়া ইউরোপের অনেক দেশই তাহার নিকট ঋণী হইয়াছে। তাঙ্গ ছাড়া যুদ্ধাবসানে জাৰ্ম্মানী, অষ্ট্রীয় প্রভৃতি দেশকে আমেরিকা অপৰ্য্যাপ্ত ধার দিয়াছে । ইউরোপের প্রত্যেক দেশই আমেরিকার নিকট ঋণী, স্বতরাং লগ্নি টাকার জন্য ও ইচ্ছায় হউক অনিচ্ছায় হউক তাহাদিগকে ইউরোপের সহিত সম্বন্ধ রাখিতে হুইবেই। যদি ইউরোপের কোন প্রকার আর্থিক দুর্দশ উপস্থিত হয়, তাহা হইলে আমেরিকাকেও ইহার ফল ভোগ করিতে হয়। কাজেই আনুষঙ্গিক অবস্থার প্রতি দৃষ্টিপাত করিলে মনে হয়, আমেরিকা পূৰ্ব্বে যেরূপে স্বতন্ত্র ভাবে চলিতেছিল এখন তাহার পক্ষে আর সেরূপে চলা সম্ভব নয়। কাজেই তাহার ব্যাঙ্কিং আইন পরিবর্তন করার প্রয়োজন হইয়াছে। একই ফেডারেল আইন অনুসারে যদি সব ব্যাঙ্ক বিধিবদ্ধ হয় এবং যদি শাখা স্থাপন করিতে কোন অঙ্কুশ না থাকে, তাহা হইলে কয়েক বৎসরের মধ্যেই আমেরিকায় কয়েকটি স্বরূঢ় বড় ব্যাঙ্ক স্থাপিত হইবে। তখন ছোট এবং দুর্বল ব্যাঙ্কগুলি বাধ্য হইয়া উঠিয়া যাইবে, এবং ব্যাঙ্ক সংখ্যায় কম হইলে বিপদের লময়ে ইহার পরম্পরের সহায়তা করিয়া সাময়িক আতঙ্ক নিবারণ করিতে সমর্থ হইবে । স্বর্ণ এবং রৌপ্য রপ্তানির বিরুদ্ধে ঘোষণার পশ্চাতে আরও কিছু গুরুতর মতলব আছে বলিয়া অনেকে মনে করেন । আমেরিকা স্বর্ণমানে প্রতিষ্ঠিত থাকায় ডলারের মূল্য অন্যান্ত মুঞ্জার, যেমন টারলিং, ইয়েন ইত্যাদির তুলনায় অত্যন্ত বৃদ্ধি পাইয়াছে। পূৰ্ব্বে এক ট্যারলি-এর মূল্য ছিল ৪ ডলার ৮৬ সেন্ট,এখন হুইয়াছে ৩ ডলার ৪৪ সেণ্ট । কাজেই যেখানে ষ্টারলিং মুত্র প্রচলিত আছে, সেখানে আমেরিকার মালের মূল্য সেই অনুপাতে বৃদ্ধি পাইয়াছে। ডলারের মূল্য অন্য মুদ্রার তুলনায় বৃদ্ধি হওয়াতে আমেরিকার রপ্তানি বাণিজ্য প্রায় বন্ধ হইয়া গিয়াছে । ধখন ব্রিটেন স্বর্ণমান পরিভ্যাগ করিয়াছিল তখন সে দেশের অনেক স্থপণ্ডিত বলিয়াছিলেন ইহার ফলে ব্রিটেনের রপ্তানি বাড়িবে এবং আমদানী কমিবে । অনেকে মনে করেন, জাপানও এই ঘটনার পর হইতেই জাপানী পণ্য সব দেশেই অত্যধিক ছড়াইয়া পড়িয়াছে এবং ভারতের বাজারে তাহার। এপ্রকার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করিতেছে যে বোম্বাই এবং আমেদাবাদের অনেক কাপড়ের কল বন্ধ হইয়াছে। শুধু তুলাজাত দ্রব্য নয়, অন্যান্য অনেক প্রকার মালও তাহার এদেশে আমদানী করিয়া আমাদের অনেক শিল্পকে ধ্বংসমুখে আনিয়াছে। এই সব বিচার করিয়া আমেরিকায় অনেকে বলিতেছেন স্বর্ণমান পরিত্যাগ না করিলে তাহাদের রপ্তানি বাণিজ্য মাথা তুলিয়া দাড়াইতে পারিবে না এবং বেকারের সংখ্যা দিন দিন বাড়িবে । । আবার ক্ৰেহ কেহ বলেন, চলতি মুদ্রার নূ্যনভার জন্যই এই সঙ্কট উপস্থিত হইয়াছে। যদি মুদ্রার সংখ্যা বুদ্ধি করা হয়, তাহা হইলে মালের মূল্য বৃদ্ধি পাইবে এবং তৎসঙ্গে দেশের আর্থিক অবস্থা উন্নত হইবে । কিন্তু দেখা যাইতেছে, ব্যাঙ্কে যে পরিমাণে আমানত বুদ্ধি হইতেছে তাহাতে মুদ্রার অসচ্ছলত। প্রমাণ হয় না। বর্তমান সমস্ত চলতি মুদ্রার স্বল্পতা নয়, পরন্তু ব্যবসাবাণিজ্যের মন্দা । যদি ব্যবসাতে টাকা খাটাইতে পারা যাইত, তাহা হইলে ব্যাঙ্ক শতকরা চার আনা আট আনা হিসাবে কেন লগ্নি করিবে ? শুধু চলতি মুদ্রার বৃদ্ধিতে মালের মূল্য হ্রাসবুদ্ধি হইতে পারে না, কেন-না যে পৰ্য্যস্ত মালের মাগনি না বাড়ে ততদিন মুদ্রার মাগনি বুদ্ধি পাইবে কি প্রকারে ? আবার কেহ কেহ বলিতেছেন, স্বর্ণ ডলারের স্বৰ্ণাংশ কম করিয়া দেওয়া হউক,তাহা হইলেই অল্প দেশের মুদ্রার বিনিময়ে ডলারের মূল্য কমিয়া যাইবে এবং তৎসঙ্গে আমেরিকার রপ্তানি বাণিজ্য আবার পূর্বাবস্থায় ফিরিয়া আসিবে। মোট কথা এই, আমেরিকান ব্যাঙ্কের বর্তমান অবস্থা পৰ্য্যালোচনা করিলে এই বিশ্বাস দৃঢ় হয় যে ইহাদের আর্থিক অবস্থা এমন কিছু মন্দ ছিল না যাহার জন্য দেশব্যাপী সমস্ত ব্যান্ধেই বন্ধ করিবার প্রয়োজন ছিল। অনেক ক্ষুদ্র ব্যাঙ্ক ফেল পড়ায় এবং আমেরিকার ভবিষ্যত আর্থিক অবস্থার প্রতি সন্দেহ হইতেই একটা সাময়িক আতঙ্কের স্বষ্টি হইয়া এই কণওটা ঘটিয়াছিল। তাহা না হইলে দশ দিন পরেই কি প্রকারে অধিকাংশ ব্যান্ধেই পুনরায় কার্ধ্য আরম্ভ করিতে সক্ষম হইল ? যদিও সাময়িক আতঙ্ক ব্যাঙ্ক বন্ধ করিবার একটি প্রধান কারণ, তথাপি ইহার মূলে যে অস্ত কোন উদ্দেশু ছিল না তাহাও বলা যায় না। পূর্বেই বলিয়াছি, আমেরিকার রপ্তানি বাণিজ্য প্রায় বন্ধ হইয়া গিয়াছে, ইহাকে পুনর্জীবিত করিতে না