পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্বর্ণমান ঐঅনাথগোপাল সেন বৰ্ত্তমান সময়ে আমরা সকলেই অর্থসঙ্কটের ফল কম-বেশী ভোগ করিতেছি এমন কি ঐশ্বৰ্য্যশালী ইউরোপ ও আমেরিকার অবস্থাও কাহিল। মুখ ও সম্পদের একটানা উৰ্দ্ধগতির পথে হঠাৎ শনির দৃষ্টি উহাদের উপরও পড়িয়াছে। উৰ্দ্ধরেখা নীচের দিকে নামিতে মুরু করিয়াছে। “বাণিজ্যে বসতে লক্ষ্মী" এই ছিল তাহাদের মূলমন্ত্র। এদিকে পণ্যদ্রব্যের চাহিদা কমিতেছে, বিশ্বের হাটে মূল্য যাহ। মিলে তাহাতে খরচ পোষায় না। আবার সকল দেশই নিজের পণ্য অন্য দেশে পাঠাইয়া নিজের কোলে সমস্ত ঝোল টানিতে চান । কেহই পরের দ্রব্য পারতপক্ষে ক্রয় করিবেন না ; তাহার জন্য ফন্দিফিকিরের অন্ত নাই। ফলে বাণিজ্য হইয়াছে অচল--- কলকারখানার মজুর, কারিকর ও কৃষক বসিয়াছে পথে । প্রাসাদ ও ঐশ্বর্ষ্যের মাঝেও বেকারসমস্যা তাহার বিরাট ও ও বিকট মূৰ্ত্তি লইয়া মাথা তুলিয়া দাড়াইয়াছে। অর্থনীতিবিশারদ না হইয়াও আমরা এই সহজ সত্যটুকু চোখে দেখিতেছি ও বুঝিতেছি যে, সকল দেশের র্কাচ ও তৈয়ারী মালের চাহিদা ও দর কমিয়া যাওয়াতেই এই সঙ্গীন অবস্থার স্বষ্টি হইয়াছে। দেশের সম্পদ যাহার হাতে-নাতে স্বষ্টি করে ( producer৪ of wealth) তাহাদের হাত যখন শূন্ত হইতে স্বরু হইল, সঙ্গে সঙ্গে আর সকল শ্রেণীর অবস্থাও হইল কাহিল ; কারণ আর সকলে তাহাঁদের ধনে পোদারী করেন মাত্র। এই পৰ্য্যস্ত আমরা সাধারণ বুদ্ধিতে বুঝিতে পারি। কিন্তু জিনিষের চাহিদা ও দরের হঠাৎ এরূপ নিম্নগতি হুইল কেন; আবার কি করিলে পণ্যদ্রব্যের চাহিদা ও মূল্য বৃদ্ধি পাইবে ; আন্তর্জাতিক অর্থনীতির সহিত এ সমস্তার সম্বন্ধ কোথায় ; স্বর্ণমান পরিত্যাগ করিলেই দেশ-বিশেষের বাণিজ্যের উন্নতি কি পরিমাণ হইতে পারে ; বিভিন্ন দেশের অর্থের বিনিময়ের হার অ-স্থির ও অনির্দিষ্ট হওয়ায় কি প্রকারে ব্যবসার ক্ষতি হয়, উনবিংশ শতাব্দীর অব্যাহত বাণিজ্যনীতির পরিবৰ্ত্তে বৰ্ত্তমান কালের রক্ষণশীল নীতি কি ভাবে আন্তর্জাতিক ব্যবসা-বাণিজ্যের টুটি চাপিয়া ধরিয়াছে ; পৃথিবীব্যাপী ঋণের গুরুভার, বিশেষভ, সমর-ঋণের নিষ্ঠুর চাপ, পৃথিবীর কতখানি শ্বাসরোধ করিতেছে -- এ সব জটিল প্রশ্ন যখন ওঠে তখন তৎসম্বন্ধে আমাদের শিক্ষিত বাঙালীদের ভাবিবার বা বলিবার কিছু থাকে না। কিন্তু বৰ্ত্তমান জগতে আমরা যদি টিকিতে চাই তাহা হইলে এই-সব ব্যাপারে আমাদের জ্ঞানের প্রয়োজন অপরিহার্ষ্য। চারিদিকে মুক্তিপথের সন্ধান চলিয়াছে। বৈঠক ও পরামর্শের শ্যে নাই। আমাদের অনেকের মনেও এক্ষণে এসব বিষয়ে কিছু জানিবার আগ্রহ হইয়াছে। তাই আজ অর্থনীতির গোড়ার কথা ‘স্বর্ণমান সম্বন্ধে কিছু আলোচনা করিব। কৰ্ম্মবিভাগ, বিভিন্ন পণ্যদ্রব্যের সহজ বিনিময়ের উপায় ও স্বোপার্জিত ধনে মানুষের ব্যক্তিগত অধিকার-- এই কয়টিকে মূল ভিত্তি করিম আমাদের বর্তমান আর্থিক জগৎ প্রতিষ্ঠিত। কোন সমাজ যখন আত্মসৰ্ব্বস্ব হইয়া নিজের ক্ষুদ্র গণ্ডীর মধ্যে স্বল্প অভাব লইয়া বসবাস করে কেবল তখনই বার্টার’ অর্থাৎ দ্রব্যবিনিময়ে বেচাকেনার কাজ চলিতে পারে। আমাদের প্রয়োজনীয় দ্রব্যের পরিমাণ যখন নগণ্য ছিল এবং নিজের দেশেই ভিন্ন জনপদের সহিত আমাদের বেচাকেনার সম্পর্ক অতি সামান্ত ছিল, তখনই আমরা ধানের পরিবৰ্ত্তে দেশী জোলার গামছা, কামারের দা বা লাঙলের ফাল কিনিতে পারিতাম । কিন্তু বৰ্ত্তমানকালে ধান-চাল দিয়া আমরা বিলাতী মোটর গাড়ী, এমন কি কাশ্মীরী শাল কিনিতে পারি কি ? কাজেই যখন একই দেশের বিভিন্ন গ্রাম বা শহরে নহে, একেবারে বিভিন্ন দেশে অসংখ্য রকম পণ্য তৈরি হইতে আরম্ভ হইল এবং তাহাঁদের মধ্যে অবারিত বিনিময় চলিতে লাগিল তখন আদিম যুগের বার্টার’ পন্থায় আর কাজ চলিতে পারিল না। এইরূপ অসংখ্য পণ্য-বিনিময়ের হিসাব ঠিক রাখিবার জন্য একটা মধ্যস্থ মাপকাঠি স্থির করিয়া লইতে হইল। আমরা যদি আজও সেই বার্টার’-এর যুগেই থাকিতাম তাহা কইলে আন্তর্জাতিক ব্যবসা-বাণিজ্যের এরূপ বিরাট ও ক্রত প্রসার