পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৪৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

లిe ফর্নিয়ার স্বর্ণখানি আবিষ্কারের সঙ্গে পুথিবীর বাজার-দর চড়িয়াছিল। কিন্তু বর্তমান সময়ে যে-পরিমাণ পণ্যদ্রব্য হাটে আসিতেছে সেই পরিমাণে স্বর্ণ বুদ্ধি পাইতেছে না । তদুপরি আমেরিকা ও ফ্রান্সে প্রভূত স্বর্ণ অব্যবহৃত অবস্থায় আবদ্ধ আছে । চলতি সোনার এই ঘাটতি বাজার-দর পড়িয়া যাওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ । ইংলণ্ড ১৯৩১ সালে স্বর্ণমান পরিত্যাগ করিতে বাধ্য হইল কেন এবং এই পন্থ অবলম্বন করিয়া তাহার লাভ ক্ষতি কি হইয়াছে এক্ষণে তাহ আলোচনা করা যাক। অর্থের (currency) { ত্রব্যের বিনিময়ে স্বর্ণ দিতে না পারিলেই স্বর্ণমান পরিহার করা ভিন্ন উপায় থাকে না, মোটামুটি ইহ বুঝিতে পারা যায়। কিন্তু স্বর্ণের প্রধান হাট ইংলণ্ডে স্বর্ণীভাব ঘটল কি করিয়া তাঁহাই আমাদিগকে বুঝিতে হইবে। এই আলোচনা প্রসঙ্গে কি করিয়া প্রভূত স্বর্ণ আমেরিকা ও ফ্রান্সে আসিয়া জমা হইল তাহাও আমরা বুঝিতে পারিব। ইংরেজ জাতিকে তাহদের খাদ্যদ্রব্য, কাচা মাল ইত্যাদি বিদেশ হইতে অনেক পরিমাণে কিনিতে হয় বলিয়া তাহাদের রপ্তানী অপেক্ষ আমদানী অধিক এবং বাণিজ্যের গতি ( balance of trale ) তাহার প্রতিকুল । ইহার অর্থ এই যে, বাণিজ্য করিয়া ইংলণ্ড বিদেশ হইতে যত টাকা পায় তদপেক্ষা বেশী টাকা তাহার বিদেশকে দিতে হয় । এই অতিরিক্ত টাকার স্বর্ণ প্রতি বৎসর তাহার দেশ হইতে বাহিরে চলিয়া যাইবার কথা । কিন্তু এই সঙ্কটকাল উপস্থিত হইবার পূর্ব পর্যন্ত, বিদেশে ইংরেজের যে বিপুল মূলধন ব্যবসায়ে খাটিত তাহার স্বদ ও লাভ এবং পণ্যবাহী নৌবহর t mercantile marine ) &S তাহার আয় এত অধিক ছিল যে তদরুণ বিদেশকে অতিরিক্ত আমদানীর জন্য কোন টাক দেওয়ার প্রয়োজন হওয়া দূরের কথা, উপরন্তু প্রতি বৎসর ইংরেজই বিদেশ হইতে বহু টাকা পাইবার হকদার ছিল। কিন্তু বিশ্বব্যাপী ব্যবসা মনার সঙ্গে সঙ্গে ইংলণ্ডের এই সব আয় অত্যন্ত হ্রাসপ্রাপ্ত হইতে আরম্ভ করে এবং আয়ব্যয়ের হিসাব নিকাশ অন্তে তাহাকে দেনদার হইতে হয়। ইংলণ্ডের স্বর্ণভাবের ইহ অন্যতম কারণ, যদিও প্রধান কারণ নহে। প্রধান কারণ খুঁজিতে চইলে আমাদিগকে ইউরোপের তৎকালীন কতকগুলি অবস্থার প্রতি দৃষ্টিপাত করিতে SS)3O হইবে। লড়াইয়ের পর হৃতসৰ্ব্বস্ব জাৰ্ম্মানীর উপর পর্বতপ্রমাণ ঋণভার চাপাইয়া দেওয়া হইল।। ব্যবসা-বাণিজ্য, পণ্যবাহী নৌবাহিনী যাহার সমূলে ধ্বংসপ্রাপ্ত হইয়াছে, যাহার বিদেশ হইতে আনীত মুখের অন্নের মূল্যটুকু পৰ্যন্ত দিবার শক্তি ছিল না, সে কোথা হইতে এত টাকা দিবে ? কিন্তু ইহার বিষম জেদী জাত, তাই মরণ পণ করিয়া বৈদেশিক বাণিজ্য নূতন করিয়া গড়িয়া তুলিবার জন্য উঠিয়া পড়িয়া লাগিল । কিন্তু বিপুল মূলধনের দরকার, মূলধন পাইবে কোথায় ? আমেরিকা ও ইংলণ্ড তাহাকে টাকা ধার দিতে রাজী হইল। ফলে জাৰ্ম্মানী অতি অল্প সময়ের ভিতর নিজের ব্যবসা-বাণিজের আশ্চৰ্য্যজনক উন্নতিসাধন করিয়া ফেলিল। কিন্তু ধার-করা টাকার স্বদ আছে এবং সুযোগ বুঝিয়া ইহারা মৃদও খুব উচ্চ হারে ধরিয়া লইয়াছিলেন। কাজেই বিরাট ঋণের বোঝা । মাথায় করিয়া এত চেষ্টাতেও জাৰ্ম্মানী তাহার অবস্থার পরিবর্তন বিশেষ করিতে পারিল না। ইতিমধ্যে ১৯২৮-২৯ সালে আমেরিকা নিজেব আভ্যন্তরীণ কতকগুলি কারণে জাৰ্ম্মানীকে আর টাকা ধার দিতে রাজী হইল না। ফলে জাৰ্ম্মানীর অবস্থা হইল সঙ্গীন। জাৰ্ম্মানীর ধ্বংসে ফ্রান্সের প্রভাব ইউরোপে অপ্রতিহত হইয়া পড়িবে এবং হয়ত ইউরোপে একটা বিপ্লবের সৃষ্টিও হইতে পারে, এই আশঙ্কা করিয়া ইংলণ্ড নিশ্চেষ্ট থাকিতে পারিল না এবং জাৰ্ম্মানীকে ঋণদান-ব্যাপারে আমেরিকার শূন্ত স্থান অধিকার করিল। অবশ্য ইহার পিছনে রাজনৈতিক কারণ ব্যতীত লাভের প্রত্যাশাও ছিল। ব্যবসায় মন্দা হেতু ইংরেজ ব্যাঙ্কারদের হাতে বহু টাকা জমিয়া যায়। আমেরিকা ও ফ্রান্সের ধনী সম্প্রদায়ের অনেক টাকাও এই-সব ব্যাঙ্কের স্বদে খাটিত । ইংরেজ ব্যাঙ্কাররা তিন টাকা স্বদে ইহাদের টাকা গচ্ছিত রাখিয়া আট টাকা স্বদে ঐ টাকা জাৰ্ম্মানীকে ধার দিতে লাগিলেন। কিন্তু পৃথিবীর ব্যবসার অবস্থা নিম্নগামী হওয়ায় জাৰ্ম্মানী কিছুতেই আর তাল সামলাইতে পারিল না। তাহার অবস্থা যত বেণী সঙ্গীন হইতে লাগিল, নিজেদের পূর্ব প্রদত্ত অর্থ বঁাচাইবার জন্য তাহাকে রক্ষা করা ইংরেজের তত বেশী আবশ্বক হইয়া পড়িল । ফলে বাধ্য হইয়া আরও বেশী করিয়া টাকা ইংরেজ জাৰ্ম্মানীকে ধার দিতে লাগিল। এইরূপ ঋণদানের জন্য ইংরেজদের ভাবী অবস্থা সম্বন্ধে কতকটা