পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পুনর্জীবন শ্ৰীনগেন্দ্রনাথ গুপ্ত -—মর মাতুষ কি আবার বেঁচে ওঠে : এক পল্লীগ্রামে একটি গৃহস্থের ঘরে যোগেশের মাতা এই প্রশ্ন জিজ্ঞাস করিলেন। ঘরের মধো বসিয়া যোগেশের বিধবা মাত, পাড়ার দুই জন বর্ষীয়সী স্ত্রীলোক আর ধোগেশ । প্রাচীন কালের কথা হইতেছিল। এক জন স্ত্রীলোক বলিলেন,TarunnoBot (আলাপ)ন বঁাচলে শাস্তরে লিখবে কেন ? শাস্তর কি কখনও মিথ্যা হতে পারে ? মন্তরের জোরে মরা মানুষ বেঁচে উঠত, রামায়ণ মহাভারতেই এমন কত আছে ? যোগেশ বলিল,—রামায়ণ-মহাভারতের সব কথা কি সত্যি ? —সত্যি না হ’লে এতকাল দেশমৃদ্ধ লোক বিশ্বাস করে আসচে কেন ? তোমাদের সব ইংরিজী বিদ্যে হয়েচে, শাস্তর-টাস্তর কিছুই মান না । যোগেশের মাত বলিলেন. --সে কথা হচ্চে না । ডাক্তারী পড়চে, ওদের বইয়ে কি লেখে ? যোগেশ বলিল, মানুষ মরে গেলে আর বঁাচে না. কিন্তু অনেক সময় দেখলে মনে হয় মরে গিয়েচে কিন্তু সত্যি মরে নি। তাই নিয়ে মরা মাম্লষ বাঁচবার কথা ওঠে । তখন মেডিক্যাল কলেজ সম্প্রতি প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে । কলেজে অধিকসংখ্যক ছাত্র হয় না, মড়া কাটায় আপত্তি । যে বার প্রথম ব্রাহ্মাণু ছাত্র কলেজে প্রবেশ করে তখন অত্যন্ত গোলযোগ হয়, কিন্তু ক্রমে আপত্তি কমিয়া আসিতেছিল । যোগেশও ব্রাহ্মণ । সে যখন স্কুলে পড়ে সেই সময় তাহার পিতৃবিয়োগ হয়। বাড়িতে অভিভাবক তাহার জ্যেষ্ঠতাত, তিনি কিছু করিতেন না, তাহার এক মাত্র পুত্র কলিকাতায় একটা আপিসে চাকরি করিত। বৎসর-দুই পূৰ্ব্বে তিনি বিপরীক হইয়াছিলেন। বাড়িতে যোগেশের মাতা, এক বৃদ্ধ বিধবা পিসি, যোগেশ ও তাহার জেঠতুতে ভাই নরেশের স্ত্রী ও যোগেশের স্ত্রী । যোগেশ ইংরেজী প্রবেশিকা-পরীক্ষায় 8 ૭-- ૨ যোগেশ উত্তীর্ণ হইয় মেডিক্যাল কলেজে ভক্তি হইয়াছিল। কলেজে এক বৎসর পরেঙ্গ জলপানি পাইল । সঙ্গীদের মধ্যে সে সৰ্ব্বোংকুষ্ট ছাত্র। এইবার কলেজের শেষ পরীক্ষা । পরীক্ষার পূৰ্ব্বে কল্পদিনের ছুটী পাচয় যোগেশ বাড়ি আসিয়াছিল। যোগেশ উঠিয়া আর একটা ঘরে গেল। সে ঘরে যোগেশের সপ্তদশ-বর্মীয় স্ত্রী সরোজিনী আর নরেশের একবিংশ-বর্মীয় স্ত্রী সরলা। যোগেশকে দেখিয়া সরোজিনী মাথায় ঘোমটা টানিয়া দিল, যোগেশ বলিল,—-এখানে কে আছে যাকে দেপে ঘোমট। দিচ্চ ? সরলা বলিল, – দেখতে পাচ্চ না আমি রয়েচি। আমার সাক্ষাতেও ওঁর লজ্জ। ও ছিল চিরকাল ক'নে বউ, এখন কলা বউ হয়েচে । সরোজিনী কাপড়ের ভিতর হইতে হাত বাড়াইয়া সরলাকে একটা চিমটি কাটিল । সরলা বলিল-- দেখেচ, ঠাকুরপে, তোমার বউয়ের কত গুণ । ঘোমটার ভিতর থেকে আমাকে চিমটি কাটচে । যোগেশ সরোজিনীর ঘোমটা টানিয়া খুলিয়া দিল, বলিল,—বড় বউ কি একটা ভারি মাতব্বর লোক যে ওর সামনে ঘোমটা দিচ্চ ? সরল কপট অভিমান করিয়া বলিল- বটে ? আমি বাড়ির বড় বউ, জান না ? তুমি আমার পায়ে হাত দিয়ে নমস্কার কর না ? – তাই বলে কি ছোট বউ তোমায় দেখে ঘোমটা দেবে ? সরোজিনীর মুখ আরক্ত বর্ণ হষ্টয়া উঠিল। সে মুখ হেঁট করিয়া রহিল । যোগেশ বলিল,- তোমরা দু-জনের কেউ আমাকে চিঠি লেখ না, আমি বাড়ির কোন খবর পাইনে। জ্যাঠামশায় ত কালেভদ্রে কথন চিঠি দেন, আমি তিনখানা লিখলে হয়ত একখান লেখেন । সেকালে স্ত্রীলোকে স্বামীকে পত্র লিখিবার পদ্ধতি ছিল