পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

woe SOBO পক্ষে এই সবই যথেষ্ট ছিল। দারিত্রই তাহাদিগকে কলুষিত বিলাতি রকম চালচলন অনুকরণ করা সৰ্ব্বনাশের আমোদপ্রমোদ হইতে সতত রক্ষা করিত। এই এক শত বৎসরের মধ্যে স্কটল্যাণ্ড দেশ প্রভূত ধনশালী হইয়াছে। কলিকাতার সন্নিকটে ও হুগলী নদীর উভয় পার্শ্বে বজবজ হইতে আরম্ভ করিয়া ত্ৰিবেণীরেও উৰ্দ্ধে যে সত্তর-আশীর্ট পাটকল আছে তাহার কর্তৃত্ব স্কটল্যাণ্ডবাসীর একচেটিয়া বলিলেও চলে। এই কারণে প্রতি বৎসর অজস্র অর্থ স্কট্ল্যাণ্ড দেশে চলিয়৷ যাইতেছে। এতদ্ভিন্ন গ্লাসগো, ডানডি ‘গ্ৰীণক’ ইত্যাদি মহানগরেও অর্ণবপোত-চালন এবং ব্যবসা-বাণিজ্য-সূত্রেও প্রভূত ধনসমাগম হইয়াছে। এই সকল কারণে সেই সব স্থান হইতে এখন পূৰ্ব্বেকার মত সাদাসিদা চালচলনও অন্তৰ্হিত হইয়াছে। স্কটল্যাণ্ডের বিখ্যাত কবি রবার্ট বারনস্ অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষভাগে খেদোক্তি করিয়া ভবিষ্যদ্বাণী করিয়াছিলেন যে, দেশের মধ্যে বিলাসিতার স্রোত প্রবাহিত হওয়া সৰ্ব্বনাশের মূল। ঐশ্বৰ্যমদগৰ্ব্বীরা এখন তাহী ক্রমে ক্রমে বিশ্বত হইতেছেন । বিলাসিতার হাওয়া প্রবাহিত হইলে দেশে যে কত রকম ছনীতির প্রশ্রয় পায় তাহ এস্থলে আলোচ্য নয়। শুধু এই কথা বলিতে পারি যে, অন্তত এক শতাব্দীর ভিতর স্কটল্যাণ্ড পূৰ্ব্বাপেক্ষ দশগুণ ধনী হইয়াছে, স্বতরাং সে-দেশে যদি কালাইলের ছাত্রজীবনের তুলনায় এখনকার ছাত্রজীবনের ব্যয়ভার অনেক বাড়িয়া থাকে তাহা হইলে তত আপত্তিজনক হুইবে না। কিন্তু আমাদের দেশে যুবকগণ ছাত্রাবস্থায় অভিভাবকগণের নিকট অর্থ শোষণ করিম বিলাসিতার স্রোতে গা ঢালিয়া দিতেছে, ইহাতে তাহার নিজেরাই তাহাদের ভাবী জীবনের মূলে কুঠারাঘাত করিতেছে। আমাদের দরিদ্র দেশ । আমরা ক্রমশঃ দীন হইয়া যাইতেছি । যে-দেশের জনপ্রতি গড় আয় দৈনিক দুই আনা এবং বাৎসরিক পঞ্চাশ টাকা হইবে কি-না সন্দেহ, সেদেশের লোকের পক্ষে বিলাতি ভাবে অনুপ্রাণিত হইয়া কারণ । বর্তমান জগতে যে-সকল মহাপ্রাণ ব্যক্তি নিজের চেষ্টা ও পুরুষকার বলে রুতিত্ব লাভ করিয়াছেন তাহণের মধ্যে এনডু কারনেগি অন্যতম। ইনি স্কটল্যাণ্ড দেশের ডানফারমূলাইন নগরে জন্মগ্রহণ করেন। ইহার পিতা একজন তন্তুবাম ছিলেন। দারিদ্রানিপীড়িত হইয়া স্ত্রী ও অপরিণতবয়স্ক দুই বালক সমভিব্যাহারে কোন প্রতিবেশীর নিকট জাহাজ ভাড়ার নিমিত্ত কিছু টাকা ধার করিয়া ভাগ্যান্বেষণের জন্য আমেরিকায় গমন করেন । বালক কারনেগীর বয়স তখন তের-চৌদ্দ বৎসর হইবে এবং এই বয়সে তিনি একটি ক্ষুদ্র কারখানায় প্রবেশলাভ করেন। অতি প্রত্যুষেই শয্যাত্যাগ করিয়া সামান্য কিছু আহারের পর তিনি কৰ্ম্মক্ষেত্রে গমন করিতেন এবং সমস্ত দিন হাড়ভাঙা পরিশ্রমের পর গৃহে প্রত্যাগমন করিতেন। যখন তিনি র্তাহার প্রথম সপ্তাহের সামান্ত রোজগার তিন-চারি টাক তাহার পিতামাতার হস্তে সমর্পণ করিলেন তখন র্তাহার মনের ভাব র্তাহার নিজের কথায় ব্যক্ত করিতেছি, “আমি আমার পরবর্তী জীবনে প্রচুর অর্থ উপার্জন করিয়াছি, কিন্তু যখন আমি আমার সর্বপ্রথম রোজগার পিতামাতার হস্তে অর্পণ করিলাম তখন মনে একটি গৰ্ব্ব অনুভব করিলাম এবং মনে করিলাম যে আজ হইতে আমি স্বাবলম্বী।” এই এনডু কারনেগী হীন অবস্থা হইতে পুরুষকার-বলে পৃথিবীর একটি শ্রেষ্ঠ লৌহ কারখানার মালিক হইয়াছিলেন, এবং বিদ্যাশিক্ষার জন্ত ও নানাবিধ হিতকাৰ্য্যে প্রায় একশত কোটী টাকা দান করিয়াছিলেন। কারনেগীর উপরি লিখিত উক্তি হইতে বোঝা যায় ধে পিতামাতা ও অভিভাবকের উপর জুলুম করিয়া বাবুয়ান ও বিলাসিত করা কত গৰ্হিত । কিন্তু কলেজের ছাত্রগণ “লাগে টাকা দেবে গৌরসেন” এই মতের বশবৰ্ত্তী হইয় অযথা ব্যয় করিতে শিক্ষা করিয়া ভাবী জীবনের পথ কণ্টকাকীর্ণ করে।