পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

అల్సి তাকে একটা মোটরে উঠিয়ে দিল, সে কোনমতে মোটরে উঠে বসল। কান্নাভর চিত্তকে তার উদ্বেল করে কত প্রশ্ন যে জাগছিল-- আজন্মের স্নেহনীড় ছেড়ে কোথায় সে চলল ? - এক অজানার হাতে ভাগ্য সমর্পণ করা, সে কি মনের তারে সঠিক স্বরে আঘাত দিতে জানবে ? এমূনি করে কতদিনে কত মেয়ে গুপসংশয় শঙ্কিত মনে পিতৃগৃহদ্বারে আশ্ররেখা রচনা করে রেখে গেছে, মুহিতার লাপনহারা অশ্রদ্ধার সে চিরন্তন চিহ্নতে মিলে গিয়ে তাকে আর একটু স্পষ্ট করে দিয়ে গেল। অমিতাভের মা শুভ্ৰবেশ পর, সোঁমা তার চেহারা, উদ্বিগ্ন হয়েছিলেন না-জালি ছেলে কেমন বন্ধ আনে। জ্ঞাতিকুটুম্ব দিয়ে তার সব আয়োজন করান, তাদের মুগে বধুর যা বর্ণনা শুনেছিলেন তাতে তিনি তুপ্ত হ’তে পারেন নি। স্বহিতাকে দেখে মুগ্ধবিস্ময়ে কেবলই বলেন, ‘আমার অমিতের ভাগ্য ভাল, ওমা এমন সুন্দর বউ হয়েছে।’ কন্যাপক্ষে আচম্বিত অসুস্থতায় সব বিশুঙ্খল হয়ে গেছে শুনে তিনি দুঃখিত হলেন, কিন্তু তখনই গিয়ে খোজখবর নেবার সময় কার ও ছিল না । অমিতাভকে কৰ্ম্মোপলক্ষ্যে মধ্যপ্রদেশের যেখানে.থাকতে হয় সেই নিষ্ট তাকে সেখানে ফিরতে হবে। ট্রেনের সময় বয়ে যায়, বরবধূকে যাত্র করতে হবে, সকলের ব্যস্ততার অস্ত নেই, দ্রুত কাজ সেরে ফেলার চঞ্চলত চারিদিকে । মুহিতাকে অমিতাভের সঙ্গে আজই দূরে যেতে হবে একথা সে পূৰ্ব্বে শোনে নি, কোন কথাষ্ট বা সে শুনেছে ? আর যা গোলযোগ পর-পর ঘটেছে সবই বোধ হয় তাতে ওলটুপালটু হয়ে গেছে। রাজবাড়ির আড়ম্বরের সম্ভাবনায় সে সচকিত হয়েছিল, এখানের সাধারণ ধরণ দেখে সে কিছু বিস্মিত হলেও ছাপ ছেড়ে বঁাচল । অমিতাভের মায়ের সহজ সস্নেহ ব্যবহার, অনাড়ম্বর অভিব্যক্তি সুহিতার সংক্ষুব্ধ মনে অনেকখানি শাস্তি ঢেলে দিলে; বিক্ষিপ্ত উদ্বিগ্ন মনে বেশী কিছু তলিয়ে দেখবার শক্তিও ছিল না । অনুষ্ঠান আচারে, বধু দেখার তাড়াহুড়ায় সময় কোথা দিয়ে কেটে গেল পুনৰ্ব্বার বরবধূ বিদায়ের পালা, SS8C আবার সেই যাত্রা করা । অবশেষে কোনমতে ট্রেনে উঠে তবে যেন মুহিত। নিঃশ্বাস ফেলার সময় পেলে ; প্রচুর গোলমালের মাঝে তীক্ষ বঁাশী বাজিয়ে গাড়ী ছাড়ল। এতক্ষণে এবার একটু মুহিত হাত পা ছড়াবার সময় পেলে । এতক্ষণ ধরে বার-বার অমিতাভের আহবানটা শুনে কি একটা চেনা স্থর মুহিতার মনে পড়ছিল যেন ।...শীতের অলস মধ্যাহ্নে মায়াপুরের আলোছায়ার আলপনা-আঁকা দীঘির ঘাটে বসে সে কতদিন দেখেতে ঘন নীল আকাশের আভা জলে ঠিকরে পড়েছে. নারিকেল সুপারি পাত আলোয় ঝিলমিল করছে, এক টুকরে রূপোর মত মাছ লাফিয়ে উঠল, একটা মাছরাও প্রজাপতির মত ডানা কাপিয়ে জলের ঠিক উপরে ক্ষণেক উড়ে সঞ্জনের শাথে স্থির হয়ে বসল, তার গ্রাবার রক্রিম পালক আলোয়, মাণিকের মত জলে উঠল, একমুঠো মুক্তার মত সজনে ফুল জলে ঝরে পড়ল। দীঘির যে প্রান্ত মজে এসেছে সেখানে শেওলার মাঝে শারদলক্ষ্মীর চরণচিহ্ন দু-একটি শালুক এখনও ফোটে,-—তাদের ঘিরে সেষ্ট যে কয়েকটি মৌমাছির গুঞ্জন কোন দেন ঘুমপুরী হতে ভেসে আসা কি যেন না বোঝা স্বর, অমিতাভ নামটা সেট স্বরেই মনকে টানে না ? বিবাহের পূৰ্ব্বে এ নামটা ত তাকে কেউ বলে নি ! মনে হতে মুহিতার ওষ্ঠপুটে একটু হাসি জাগল,--কোন কথাটাই বা তাকে বলা হয়েছিল !.. - জানালার কাছে মুখ রেখে বাহিরের অপহুয়মান দৃশ্যপটের দিকে শান্তভাবে স্বহিত তাকিয়ে ছিল, আরও কতদূর- কোথায় গিয়ে ধাত্রা তাদের শেষ হবে! চন্দ্রনাথ কেমন আছেন কে জানে ! চন্দ্রনাথের কথা মনে হতেই তার চোপ ভিজে এল, জানাল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিল। কক্ষে আরও দু-জন যাত্রী ছিল, তাদের সামনে অমিতাভ তার দিকে চেয়ে আছে দেখে অনভ্যাসে মুহিত বিব্রত হয়ে উঠল। অমিতাভ বলল, দেশ ছেড়ে যেতে ভারি খারাপ লাগে, ন ? আমারও প্রতিবার মন খারাপ হয়ে যায়।’ হেসে বলল, ‘এবারে ছাড়া অবশ্য ? অমিতাভের মনে একটা বিস্ময় থেকে থেকে জেগে উঠছিল, সে একদৃষ্টি মুহিতার পানে চেয়ে আত্মবিশ্বত