পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মাত-ঋণ ক্রীসীতা দেবী 8ס\ দাৰ্জিলিঙের অমন যে ঠাণ্ড রাত্রি তাহাতেও সুরেশ্বরের ঘুম হইল না। সারাট রাত এপাশ-ওপাশ করিয়াই তাহার কাটা গেল। তাহার মস্তিষ্কে যেন আগুন লাগিয়া গিয়াছে, স্বায়ুমণ্ডলীতেও প্রলয় কাণ্ড ঘটিতে বসিয়াছে, ঘুমাইবে সে কোথা হইতে ? তাহার ছটফটানি শেষে এতটাই বাড়িয়া উঠিল যে, শিশিরেরও ঘুম চুটিয়া গেল। সে জিজ্ঞাসা করিল, “দাদা, তোমার অমৃগ করেছে না কি ?” স্বরেশ্বর বলিল, “না, অর্থ করতে যাবে কেন ? পিণ্ড ন ছারপোকা কিসে কাম্ড়ে অস্তির করছে।” দাদার স্বাস্থ্য সম্বন্ধে নিশ্চিন্ত হইয় শিশির আবার নাক ডাকাইয়া ঘুমাইতে আরম্ভ করিল। ভোরের আলো ফুটিয়া উঠিবামাত্র মুরেশ্বর চট করিয়৷ উঠিয়া পড়িল। চাকর দুইজন সবে উঠিয়া তপন হাতমুখ ধুইতে মুরু করিয়াছে, বেশ নিশ্চিন্ত আছে যে এখনও অন্ততঃ ঘণ্টা-তিন তাহার স্বাধীনভাবে চলিতে ফিরিতে পরিবে। কিন্তু গরম ড্রেসিং গাউন-পরা সুরেশ্বরকে সামনে দেখিয় তাহার হতবুদ্ধি হইয় গেল। যে-মাষ্ট্য জৈাষ্ঠ মাসে কলিকাতায়ও আটটার আগে উঠে না তাহার আজ হইল কি ? স্বরেশ্বর তাহাদের কল্পনাশক্তির অপব্যবহার হইতে নিষ্কৃতি দিয়া বলিল, “শীগগির আমায় এক পেয়ালা চ করে দে, আমি বেড়াতে বেরব।” ভৃত্যদ্বয় প্রস্থান করিল রান্নাঘরের অভিমুখে। সুরেশ্বর বসিবার ঘরটার মধ্যে অস্থির ভাবে পায়চারি করিতে লাগিল । যামিনী এতক্ষণ কি করিতেছে কে জানে? ঘুমাইয়া আছে না জাগিয়া ? জ্ঞানদা নিশ্চয়ই জাহাকে খবরটা শুনাইয়াছেন। শুভকৰ্ম্মে অযথা কালবিলম্ব করিবার মানুষ তিনি নন। যামিনী শুনিয়া কি ভাবিল ? খুশী হুইয়াছে কি ? হওয়াই ত সম্ভব। স্বরেশ্বর অযোগ্য কিসে? রূপ আছে, ধন আছে, বংশ-মৰ্যাদা আছে, বিদ্যাও চলনসই রকম আছে। টাকার যখন অভাব নাই, তখন বিলাত গিয়া একটা ছাপ মারিয়া আসিতেই বা কতক্ষণ ? এমন বর যদি যাচিয়াই একরকম হাজির হয়, তাহু হুইলে খুশী হইবে না এমন মেয়ে এই বাংলা দেশে আছে না কি ? তবে যামিনী মেয়েটির মন কেমন যেন রহস্তের অবগুণ্ঠনে আবুত, কিছুই তাহার ভাল করিয়া বুঝা যায় না। সুরেশ্বরের সঙ্গে আলাপ ত তাহার বেশ কিছুদিন হইল হইয়াছে, কিন্তু তাহার মনের কোনো একটা তুচ্ছ কথাও মুরেশ্বর জানে কি ? একেবারে কিছুই জানে না। যামিনী নিজে হইতে কখনও একটা কথাও হুয়ত মুরেশ্বরের সঙ্গে বলে নাই, কেবল মুরেশ্বরের প্রশ্নের উত্তর দিয়াছে মাত্র। সাধারণ মেয়ে যে-জিনিয়কে সৌভাগ্য মানিয়া বরণ করিয়া লইবে, যামিনী যে সেটাকে কি ভাবে গ্রহণ করিবে, তাহ ঠিক বুঝা যায় না। সেইজন্যই ত মুরেশ্বরের এত আগ্রহ, এত অস্থিরত। সে একবার এই মেয়েটিকে কাছে পাইতে চায়, তাহার-মনের উপরের অবগুণ্ঠন টানিয়া সরাইয়া দেখিতে চায়, তাহার অন্তরলোকে কি আছে, কে আছে । তাহার হরিণ-নয়নে প্রেমবিহবল দৃষ্টি দেখিতে চায়, তাহার পাষাণপ্রতিমার মত অনিন্দনীয় স্বন্দর, অথচ ভাবহীন মুখে হৃদয়াবেগের রক্তোঞ্ছাস দেখিতে চায়। সে সৌভাগ্য এখনও কি বহু দূরে ? না আজই তাহার কাল্পনিক স্বথস্বগের দ্বার তাহার জন্য উন্মুক্ত হইবে ? চাকর ডাকিয়া বলিল, “বাবু, চা দেওয়া হয়েছে।” স্বরেশ্বর খাবার ঘরে ঢুকিয় চা পান করিতে বসিল। তাহার পর চেয়ার ঠেলিয়া দিয়া উঠিয়া পড়িয়া বলিল, “দেখ, আমি বেড়াতে বেরচ্ছি। যদি আমার নামে কেউ চিঠিপত্র নিয়ে আসে, তাহলে তাকে একটু বস্তে বলবি ।” বলিয়া বেড়াইবার পরিচ্ছদ পরিবার জন্য গুইবার ঘরে চুকিয় গেল। আবার এক মিনিট পরেই বাহিরে আসিয়া বলিল, “ন, লোক বসিয়ে রাখবার দরকার নেই। বলিব