পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৯৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আষাঢ় বাবু কার্ট রোড ধরে ঘুমের দিকে গেছেন, পা চালিয়ে গেলেই তাকে ধরতে পারবে। পাঠিয়ে দিবি অমনি, বুঝলি ?” চাকর বলিল, “যে আজ্ঞে।" মুরেশ্বর আবার ঘরে ঢুকিয় গেল। দার্জিলিং আসিবার নাম করিয়া, গরম কাপড় দুই ভাইয়ে মিলিয় একরাশ তৈয়ারি করাইমাছে, সবকট এ যাত্র পরিয় উঠতে পারিলে হয়। মুরেশ্বর অবশ্য চেষ্টার ক্রটি করিতেছে না। শিশিরের এদিকে তত উৎসাহ নাই। আসিয়া অবধি একটা হাফপ্যাণ্ট এবং কোট ছাড় আর কিছু বাহিরই করে নাই। পোষাক পরা শেষ করিয়া একটা ছড়ি হাতে করিয়৷ স্বরেশ্বর বাহির হইয় পড়িল। বাড়ি হইতে খানিকট পথ নামিয়া গিয়া তবে কার্ট রোড। সে পথটা খুব তাড়াতাড়িই সে নামিয়া আসিল। কিন্তু কার্ট রোডে পড়িয়াই ধীরে ধীরে চলিতে মুরু করিল। বেশী জোরে হাটিলে যদি আবার পিছনের লোক তাহার সন্ধান না পায় ? পিছনে যে লোক পত্র বহন করিয়া নিশ্চয়ই আসিতেছে এ-বিষয়ে স্বরেশ্বরের বিন্দুমাত্রও সন্দেহ ছিল না। ধামিনীকে সে না চিনিয়া থাক, জ্ঞানদাকে একরকম ভাল করিয়াই চিনিয়াছিল। ধীরে ধীরে হাটতে ইটিতেও স্বরেশ্বর বেশ খানিক দূর চলিয়া আসিল । কতবার পিছন ফিরিয়া যে দেখিল তাহার ঠিকান নাই। লোক অবশু অনেক দেখা গেল, কিন্তু তাহাদের ভিতর কেহই সুরেশ্বরের জন্ত পত্র বহন করিয়৷ আসিতেছে না। সে ক্ষুণ্ণও হইল, বিস্মিতও হইল। তবে কি নৃপেন্দ্রবাবু তাহার প্রস্তাবে সম্মত হন নাই ? না ধামিনীষ্ট আপত্তি করিয়াছে ? সুরেশ্বরের একটু একটু রাগও হইতে লাগিল। সে কি এমনই পাত্র, যাহাকে যে-কেহ হেলায় প্রত্যাখ্যান করিতে পারে ? নুপেন্দ্রবাবুর না-হয় কলিকাতায় একখানা বাড়িই আছে, আর র্তাহার কি সম্পত্তি আছে ? আমন বাড়ি মুরেশ্বর ইচ্ছা করিলে দশখান। করিতে পারে, এক বৎসরের মধ্যেই। আর যামিনী ? সেও কি মুরেশ্বরকে প্রত্যাখ্যান করিতে পারে ? না-হয় সে মুন্দরী, খুবই সুন্দরী এবং লেখাপড়া, গানবাজনা, ছবি-তাকা সবই জানে, তাই বলিয়৷ এমন একটা কিছু নয় যাহু বাংলা দেশে আর মেলে না। লেখাপড়া শিখিতেছে ত আজকাল কত মেয়েই ? আর সুন্দরের কথা যদি বল, স্বরেশ্বরের মাতৃ-ঋণ ·ළුA আত্মীয়াদের ভিতর এখনও এমন রূপবতী আছেন, র্যহাদের দেখিলে লোকের দুর্গাপ্রতিমা বলিয়। ভ্রম হয়। অনেক দূর সে আসিয়া পড়িয়াছিল, আর তাহার অগ্রসর হইতে ইচ্ছা করিল ন: ফিরিয়াঙ্গ চলিল। পথেও জ্ঞানদার চিঠির সন্ধান পাইল না। বাড়ি আসিয়াই ঘে-চাকরটাকে সামনে পাইল তাহাকে এক তাড়া দিয়া বলিল, “ভোদের দিয়ে যদি কোনো কাজ হবার জো আছে। লোকটাকে পাঠাস নি কেন ?” চাকরট থতমত থাইশ্ব বলিল, “আজ্ঞে লোক ত কেউ আসেনি ?” স্বরেশ্বর গঢ় গঢ় করিয়া শুইবার ঘরে ঢুকিয় গেল । শিশির তখনও মহানন্দে ঘুমাইতেছে। টুপিট খুলিয়া আলনার দিকে ছুড়িয়া দিয়া মুরেশ্বর উচু গলায় বলিল, “খালি পড়ে পড়ে ঘুমোবার জন্যে এখানে এসেছিল না কি ? আটট বাজে, এখনও নবাবের ঘুম ভাঙল না।” শিশিরের ঘুম ছটিয় গেল। তবু লেপের মায়। অত সহজে ত্যাগ করা যায় না। খানিকট এপাশ-ওপাশ করিয়া তাহার পর সে উঠিয়া বসি জিজ্ঞাস করিল, “কি হয়েছে ?” স্বরেশ্বর চটিয়া বলিল, “হবে আবার কি ? সকাল হয়েছে। উঠে বেড়াতে যাও। এই রকম করলে শরীর যা সারবে, ত বোঝাই যাচ্ছে।” শিশির উঠিয়া গেল, তবে পাওয়ার সন্ধানেই গেল, বেড়ানোর সন্ধানে নয়। এত ঠাণ্ডায় বাহির হওয়াতে তাহার মারাত্মক রকম আপত্তি ছিল। নিতান্ত মিহির আসিয়া টানাটানি না করিলে সে কোনাদিনই রোদ ভাল করিয়াউঠিবার আগে বাহির হঠত না। - সুরেশ্বর বাহিরের জুতা ছাড়িয়া, একজোড় কাজ-কর কাপেটের জুতা পরিয়া ছোট বাগানটার মধ্যে বাহির হইয়৷ আসিল । এখন যাওয়া যায় কোথায় ? এখানে তাহার আগে কখনও আসে নাই, সুতরাং পথঘাটের সঙ্গে পাকাপাকি পরিচয় এখনও হয় নাই। তাহার চেনাশোনা লোকও এখানে কেহ নাই, ঐ এক বাড়ি ছাড়া। কি করিম দিনটা কাটান ধায় ? - বাগানেই দু-চার পাক ঘুরিয়া সে আবার ঘরে গিয়া