পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৯৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পাকাইয়া ছড়িয়া ফেলিয়৷ দিল, তাহার মুখ ভীষণ ক্রফুটিকুটিল হইয়া উঠিল। আচ্ছা সেও দেখিয়া লইবে । "S(t সকাল হইতেই বাড়িটা কেমন যেন স্তন্ধ হইয়া আছে। জ্ঞানদা সারারাত ঘুমান নাই, অনেক রাত পৰ্যন্ত ত নৃপেন্দ্রবাবুর সঙ্গে তর্কাতর্কি ঝগড়া করিয়াছেন। যামিনী অপরিণামদর্শী এবং অতি নিৰ্ব্বোধ, তাহার নিজের জীবন যেদিকে খুশী চালিত করিবার কোনো অধিকার জন্মে নাই, তাহাকে এখনও সব বিষয়েই পিতামাতার নির্দেশ মানিয়া চলিতে হইবে, এই ছিল জ্ঞানদার বলিবার বিষয়। কিন্তু নৃপেন্দ্ররুষ্ণের বয়স হুইয়াছে বটে, তবু বুদ্ধি প্রায় যামিনীরই মত, তিনি একথা বুঝিয়াও বুঝিতে চান না। যামিনী যখন স্বরেশ্বরের সহিত বিবাহুে অমত করিতেছে, তখন কিছুতেই এ বিবাহু দেওয়া চলে না। যামিনী সেই ষে মায়ের ঘর হইতে পলাইয়াছে, আর সেখানে ঢোকে নাই। অনেকক্ষণ পৰ্যন্ত অভিভূতের মত খাবারঘরে বসিয়াছিল, তাহার পর না খাইয়-দাইয়াই মিহিরের বিছানায় গিয়া গুইয়া পড়িয়াছে। মিহিরকে অগত্য বাধ্য হইয়া মায়ের ঘরে যামিনীর খাটে গিয়া গুইতে হইয়াছে । তাহাতে তাহার অবগু ঘুমের ব্যাঘাত কিছু ঘটে নাই। বেল নয়ট অবধি সে নিরুপদ্রবে ঘুমাইয়া গিয়াছে। রাতজাগ এবং অস্বাভাবিক উত্তেজনার ফলে জ্ঞানদার অম্লখ আবার বাড়িয়াছে। কাহাকেও কাছে আসিতে দিতেছেন না, একলাই শুইয়৷ আছেন। নৃপেন্দ্রবাবু ডাক্তার ভাকিতে চাওয়াতে বলিয়াছেন, “তোমাদের আর দরদ দেখাতে হবে না। ডাক্তার আনলে আমি ঘরে খিল দিয়ে থাকব।” বেলা নটা বাজে, এখন পর্যন্ত জ্ঞানদাকে কিছুই খাওয়ানে। যায় নাই। আয় দুই-চারিবার খাওখাইবার চেষ্টা করিয়া তাড়া খাইয়৷ ফিরিয়া আসিয়াছে। নৃপেন্দ্রবাবু গেলে কোনো কাজ হইবে না জানা কথাই, তাই তিনি আর যান নাই। যামিনীরও যাইবার ভরসা নাই। বাড়িমৃদ্ধ কি যে করিবে কিছু ভাবিয়া পাইতেছে না। এমন সময় স্বরেশ্বরের চিঠি বহন করিয়া গজানন জালিয়া হাজির হইল। চিঠিখান জ্ঞানদার নামে এবং খামখানা বন্ধ। অন্ত সময় হইলে কৰ্ত্তাই চিঠিখান খুলিয়া দেখিতেন - تم-89) भांडूं-कणे ذفe কিন্তু আজ আর ভরসা করিলেন না, আয়ার হাত দিয়া গৃহিণীর কাছে পাঠাইম দিলেন। চিঠি পড়িয়া জ্ঞানদার মুখ প্রলয়গম্ভীর হইয়া উঠিল। ৰূরেশ্বর যে অত্যন্তই অধীর হইয়া উঠিয়াছে তাহা বুঝিতেই পারিলেন। অধীর হইবারই ত কথা ? এমন অদ্ভূত অবস্থায় কেহু চুপ করিয়া থাকিতে পারে ? কি যে সে র্তাহাদের মনে করিতেছে, তাঙ্গ ভগবানই জানেন। জ্ঞানদার মত অবস্থায় যেন পরম শক্রকেও না পড়িতে হয়। এত যে র্তাহার প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব, তিনিও এখন হতবুদ্ধি হইয়া গেলেন। কি লিথিবেন তিনি সুরেশ্বরকে ? আয়াকে হুকুম করিলেন, “সাহেবকে ডেকে আন ।” নৃপেন্দ্রক্লষ্ণ আসিয়া উপস্থিত হক্টলেন। চিঠিখান তাহার দিকে ছড়িয়া দিয়া জ্ঞানদ বলিলেন, “পড়ে দেখ। এখন আমি করব কি মাথ। আর মুণ্ডু ?” নৃপেন্দ্রবাবু চিঠিখান পড়িয়া, আধার ভাজ করিয়া খামে ঢুকাইয়। রাখিলেন। তাহার পর বলিলেন, “তা আর কি করা যাবে বল ? লিখে দাও সত্যি অবস্থাটা, লে. মেয়েকে জানান হয়েছিল, তার মত নেই। আমরা অভ্যন্ত দুঃখিত--” বাধা দিয়া জ্ঞানদ চীৎকার করিয়া উঠিলেন, “তোমাকে কি আমি রসিকতা করবার জন্যে ডেকেছি ? আর কোনো বিবেচনা না থাক, আমি ধে মরতে বসেছি অন্ততঃ সে বিবেচনাটুকু ত থাকা উচিত ?” - নৃপেন্দ্রবাবু উঠিয়া পড়িয়া বলিলেন, “আমি যা বলব, তা-ই তোমার খারাপ লাগবে। আমাকে না ডাকলেই হয়, অনর্থক একটা রাগারাগি।” বলিয়৷ তিনি ঘর হইতে বাহির হইয় গেলেন। জ্ঞানদা খানিকক্ষণ গুম্ হইয়। বসিয়া রহিলেন। র্তাহার মাথাটা এত ঘুরিতেছিল যে পরিষ্কার করিয়া ভাবিতেও পারিতেছিলেন ন কিছু। তাহার দিনত ঘনাইয়া আসিতেছে, অথচ জীবনের সকল কাজই অসমাপ্ত থাকিয় গেল। আর একটু বাড়াবাড়ি হইলেই তিনি ত বিদায় হইয়া যাইবেন। তখন ষে-সংসারের জন্য, যে-ছেলেমেয়ের জন্য তিনি সারাটা জীবন প্রাণপাত করিয়া খাটিয়া গেলেন, সে-সংসার হইতে ভূতের বাথান, সে ছেলেমেয়ের দশা হইবে লক্ষ্মীছাড়ার মত। তাহারা না পাইবে স্বশিক্ষ, না পাইবে আরাম বা মৰ্যাদা।