পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩৬২ Sово স্বামীটি এতবড়-মূৰ্খ যে তাহার হাতে মানুষে ভরসা করিয়৷ একটা কুকুর বেড়াল ছাড়িয়া যাইতে পারে না ত ছেলেমেয়ে। আর অমন মেয়েট ! তাহার রাজরাণী হুইবার যোগাত। ছিল, হুইতও সে তাহু, কেবল স্বামীর অন্যায় প্রশ্রয়ে সকল দিক দিম মাটি হঈয় গেল। জ্ঞানদ আর বসিতে পারিলেন না, বিছানায় গুইয়া পড়িলেন। আয় বাহির হইতে খবর দিল সে চিঠি লষ্টয়৷ যে-লোকট। আসিয়াছে, সে জবাবের জন্য অপেক্ষা করিতেছে। জ্ঞানদা আবার উঠিয়া বসিলেন। আমাকে দিয়া খাম, চিঠির কাগজ, দোয়াত কলম সব আনাইয়। লইলেন। তাহার পর অতি সাবধানে চিঠির জবাব লিগিয়া পাঠাষ্ট্ৰয় দিলেন। যাক্ ঘণ্ট-কয়েক অন্ততঃ ভাবিবার সময় পাওয়া গেল। কিন্তু একলা ভাবিয়াই বা তিনি করিকো কি ? তাহার বাস শত্রপুরীতে, একটা কেন্স তাছার সহায় নাঈ। যে-মেয়ের জন্য এত করিতেছেন, সে-ই তাঁহাকে শত্ৰ মনে করিয়া প্রাণপণে বিরুদ্ধাচরণ করিতেছে। শরীরে তাহার অত্যস্ত অসোয়াস্তি, কিন্তু মনের সন্ত্রণ তাহার চেয়েও অধিক। কিছুতেই যেন তিনি শান্তি পাইতেছেন না। আয়৷ আর একবার পাইবার জন্য বলিতে আসিল, তাহাকে পাঠাইয় দিলেন যামিনীকে ডাকিবার জন্য। আর একবার তাহাকে বুঝাইয়। দেপিকো। সে কি নিজে নিজের ভবিষ্যৎ একেবারে নষ্ট করিবার জন্ত উঠিয়া-পড়িয়। লাগিয়াছে ? যামিনী ধীরে ধীরে আসিম চুকিল । তাহারও মুখ মলিন শুষ্ক, চোখ দুষ্টট ফুলিয়া উঠিয়াছে। কোন কথা না বলিয়া মায়ের থাটের পাশে আসিয়া দাড়াইয়া রহিল। জ্ঞানী বলিলেন, “বোস্ দেখি। তুই কি করতে বসেছিস্ বুঝতে পারছিস্ ? আমাকেও মারবি আর নিজেও চিরদিনের জন্তে মাটি হবি ? আমি যা করতে চাই, তা যে তোর মঙ্গলের জন্যে তা বুঝি না ? এটুকু বিশ্বাস তোর নেই মায়ের উপরে ?” ঘামিনী কোন কথা বলিল না, খালি তাহার দুই চোখ দিয়া বড় বড় অশ্রুবিন্দু গড়াইয় পড়িতে লাগিল। জ্ঞানদার মন কিন্তু ইহাতে আরও কঠিন এবং বিরক্ত হইয়া উঠিল। মেয়ে যেন চাকা। সংসারটা ভারি সহজ জায়গা কি-না, এখানে কঁাদিলেই অমনি জিতিয়া যাওয়া, যায়। একটু ধমক দিবার স্বরে বলিলেন, “কি একটা উত্তর দিতে পারিস্ ন ? আমিই খালি তোর অহিত করছি, আর গুষ্ঠিমৃদ্ধ খালি তোর হিত করছে ?” যামিনী বলিল, “আমি পারব না ম|” বলিয়া থাটের পাশের একটা চেয়ারে বসিয় পড়িয়া, চেয়ারের হাতলে মুখ গুজিয়া কাদিতে লাগিল। নৃপেন্দ্রবাবু, দরজার বাহিরে ঘুরিয়া বেড়াইতেছিলেন। স্ত্রীর সামনাসামনি হুইবার আর র্তাহার ইচ্ছা ছিল না। তবু মেয়ের কান্ন দেখিয়া আর না পারিয়া ঘরে ঢুকিয় পড়িলেন। ঘামিনীর পিঠে হাত রাপিম স্ত্রীকে লক্ষ্য করিয়৷ বলিলেন, “ওকে অন্ততঃ একটু ভাববার সময় দাও ? এত বড় একটা গুরুভর বিষয়ের মীমাংস কখনও এক মিনিটে হয়ে যেতে পারে ?” জ্ঞানদ চীৎকার করিয়া বলিলেন, “হঁ্য গে৷ ই্য, সব বুঝেছি আমি। আমি পাগল না, সবই আমি বুঝি। সবাই মিলে কি যুক্তি হচ্ছে ত কি আর আমি ন জানি ? কর কর, আমার সঙ্গেই শক্রত কর। কিন্তু আমার ছেলেমেয়েকে আমার বিরুদ্ধে প্ররোচনা দিচ্ছ, তোমারও ভাল হবে না, এ আমি বলে দিলাম।" নৃপেন্দ্রবাবু হতবুদ্ধির মত স্ত্রীর দিকে চাহিয়া রছিলেন, তাহার পর সামিনীকে টানিয়া তুলিয়। তাড়াতাড়ি ঘর হইতে বাহির হইয় গেলেন। যামিনী মিহিরের গাটে আবার মুখ গুজিয়া গুইয়া পড়িল। নৃপেন্দ্রবাবু থানিকক্ষণ খোলা জানালার পথে বাহিরের কুয়াসাচ্ছন্ন দৃশ্বের দিকে চাহিয়া রছিলেন। তাহার পর মেয়ের কাছে অগ্রসর হইয় তাহার মাথায় হাত রাপিয়া বলিলেন, “চল মা, আমরা একটু বেড়িয়ে আসি। তোমার মাকে একটু একল থাকতে দাও, আমরা সারাগণ সামনে থাকলে ওঁর উত্তেজনা কমবে না।” যামিনী উঠিয়া বসিল। বেশ পরিবর্তন করিতে গেলে আবার মায়ের ঘরে যাইতে হয়। সে চেষ্টা না করিম, যাহা পরিস্কা ছিল তাহারই উপরে ওভারকোট পরিয়া সে যাইবার জন্য প্রস্তুত হইল। চুলটা মিহিরের চিরুণী আঁচড়াইয়া লইল ।