পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪০৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

●ማ8 ধ্ৰু প্রবাসী ; SOBO পলাইয়া এই লোকটির কাছে আসিয়া হাজির হইত। শুধু তাই নয়, তাকে মাঝে মাঝে খাবারের জন্য যে পয়সা দিতাম, সে সেই পক্ষস দিয়া খাবার না থাইয়া গোপনে গিয়া লোকটিকে দিয়া আসিত। আমি মাঝে মাঝে ধমকাইতাম, স্ত্রী বলিতেন---“ধমকাও কেন, পয়সাই ত দিয়েছে। অন্যায় কাজ ত কিছু করে নি।” স্ত্রী পূৰ্ব্বে দুইটি সন্তান হারাইয়৷ মৰ্ম্মাহত হুইয়াছিলেন। সেইজন্য পুত্রকে শাসন করিয়৷ আর তার মনোবেদনা বাড়াইতে ইচ্ছা হইত না । আর বস্তুতঃ সে ত তেমন অন্যায় কিছু করিত না। একদিন স্ত্রীপুত্রকে লইয়। রামনগরে ব্যাসদেবের মেলা দেখিতে গিয়াছিলাম। ফিরিতে সন্ধ্য হইল। ঘাটে নৌকা লাগাইয়া অবতরণ করিব এমন সময় একটা গোলমাল শুনিয়া চাহিয়া দেখিলাম পূৰ্ব্বোক্ত ঘরটার সামনে একটা ছোট জনতা সাধুজীকে ঘিরিয়া ক্রুদ্ধভাবে তর্জনী প্রদর্শন করিতেছে আর নানারূপ বাক্য উচ্চারণ করিতেছে। ব্যাপার কি দেখিবার জন্য মাঝিকে তাড়াতাড়ি করিয়া নৌক৷ লাগাইতে বলিলাম। কিন্তু নামিবার পূৰ্ব্বেই জনতার মুষ্টি, কিল, প্রহার ও লাঠির আঘাত সাধুজীর উপর বৃষ্টিধারার মত পড়িতে লাগিল। লোকটা ধরাশায়ী হইয়৷ চুপ করিয়া সমস্ত সহা করিতে লাগিল। কয়েকজন লোক শুধু আঘাত করিয়াই ক্ষান্ত হইল না— ঘরের ভিতর ঢুকিয়া লোকটর বহুদিনের তৈয়ারী বেদী ও আসনগুলি ভাঙ্গিয়৷ গুড় করিয়া ফেলিল, তার নোংরা গেরুয়া কাপড়গুলি ও শালগ্রাম শিলা তুলিয়া নীচে ফেলিয়া দিল। আমি নামিয়া আসিতে আসিতে জনতা সরিয়া পড়িল । ব্যাপার কি বুঝিতে পারিলাম না। একটা কিছু কারণ নিশ্চয়ই আছে, কিন্তু লোকটিকে জিজ্ঞাসা করিয়া কিছুই জানিতে পারিলাম না। প্রহারের আঘাতে তার শরীরে নীল দাগ পড়িয়া গিয়াছিল,- সেদিকে সে বেশীমনোযোগী ছিল না। সে একদৃষ্টি চাহিয়া ছিল তার লুষ্ঠিত ঘরটার দিকে— সেই দিকে চাহিয়া তার চোখ জলে ভরিয়া উঠিয়াছিল। জলে ভরিয়া উঠিয়াছিল আরেক জনের চোখ—থোকার। সে সাশ্রনেত্রে একবার আমার দিকে, একবার তার মার দিকে, একবার সেই লোকটির দিকে দেখিতেছিল। তার মনের মধ্যে অনেক কথা উঠতেছিল বুঝা গেল—কিন্তু সে কিছু বলিতে পারিতেছিল না। আমরাই বা সেখানে দাড়াই৷ লোকটির কি করিতে পারিতাম, বিশেষতঃ যখন প্রকৃত কথা কিছুই জানিতাম না, জিজ্ঞাস করিয়াও জানিতে পারি নাই। যদি সে অন্যায় রূপেই প্রহৃত হইয়া থাকে, তাহা হইলেই বা এর আর প্রতিকার কি ? চলিম আসিতে আসিতে স্ত্রী বলিলেন—“আমন নিরীহ লোকটাকে অমন ভাবে মারলে কেন ?” “নিরীহ তুমি কি ক’রে জানলে ? হঠাৎ এতগুলি লোক এসে তাকে অমনিই মেরে গেল ? কি করেছে কে জানে ?” “অমন কি আর করতে পারে যার জন্য তাকে মারতে পারে? আর তার জিনিষপত্র অমন ভাবে নষ্ট করবার কি দরকার ছিল ? বেচারী !” বাড়ি ফিরিয়া আসিয়া গৃহিণী নিজ কাজে চলিয়া গেলেন। আমি আবার কাজ লইয়া টেবিলে বসিলাম। খোকা এই সময় পাশের ঘরে ছোট মাদুরটার উপর বসিয়া খড়ি দিয়া শ্লেটের উপর ছবি অঁাকে, না হয় এক, দুই লেখে। খাবারের সময় ছাড়া আর তিনজনের বড় দেখা হয় না। কিন্তু সে রাত্রে খাওয়ার সময় ছেলেকে ডাকিতে গিয়া গৃহিণী দেখেন সে ঘরে নাই। অস্থির হইয়া ছুটিয়া আসিয়া আমাকে বলিলেন—“ছেলে কোথায় গেল ? ছেলেকে দেখছিনে যে ?” “দেখছ না কি রকম ?”--তাড়াতাড়ি করিয়া উঠিয়া তাঁহাকে খুজিতে গেলাম। সমস্ত বাড়ি খুজিলাম, বাহিরে আসিয়া ডাকাডাকি করিলাম, প্রতিবেশীদের জিজ্ঞাসা করিলাম, সন্ধান মিলিল না। তখন মনে হইল হয় ত সে ঘাটে সাধুর কাছে গিয়া হাজির হইয়াছে। ঘাটের দিকে চলিলাম। ঠিক তাই। সাধুবাবা তার লুষ্ঠিত ঘর আবার মেরামত করিবার চেষ্টা করিতেছিল, জল আনিয়া কাদা গুলিমা আবার ভাঙা আসনগুলি নূতন করিয়া গড়িতেছিল। দেখি শ্ৰীমানও তার এই মেরামতের কাজে সাহায্য করিতে লাগিয়া গিয়াছে। অন্ধকারে আমাকে সে দেখিতে পায় নাই, কিন্তু আমি তাকে ডাকিবা মাত্র সে চমকিয়া উঠিয়া চীৎকার করিয়া কাদিয়া উঠিল, বলিল—“একে না নিয়ে গেলে আমি যাব না, আমি যাব না।” এই বলিয়া সে তার কাদামাখা হাতে আমাকে আক্রমণ করিল, আর পা দুইটা দিয়া জোরে ঘন ঘন মাটির উপর আঘাত করিতে লাগিল। আমি তাকে বুঝাইতে চেষ্টা