পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

سo۹bہ কথা বলিলাম। পরক্ষণেই মহল্লার সর্দার আমার বাড়িওয়ালপাড়ায় মামাজী বলিয়া খ্যাত প্রতাপশালী লোকটির কাছে গিয়া হাজির হইয়া ব্যাপারটা জানাইলাম। তিনি শুনিবামাত্র তড়াক্ করিয়া লাফাইয়া উঠিলেন ও কালক্ষেপ ন৷ করিম আমাকে সঙ্গে লইয়। স্ত্রীলোকটির বাড়ির দুয়ারে আসিয়া হাজির হইলেন। ডাকিলেন বুড়িয়া ? ডাক শুনিম্ন স্ত্রীলোকটি পরিবর্ধিতবেশে দরজায় আসিয়া দাড়াইল। মামাজীর চোপ মুখের ভাব দেখিয়া সে থতমত খাইয়া গিয়াছিল। ভয়ে ভয়ে বলিল - “কি মামাজী ?" মামাজী কঠিন স্বরে জিজ্ঞাসা করিলেন “বুড়িয়া তুই আজ যে-শাড়ী পরে মেলাতে গিয়েছিলি, সে-শাড়ী তুষ্ট কোথায় পেয়েছিস ?” বুড়িয়ার মুখ শুকাইয় গেল। সে আমৃত-আমৃত। করিম উত্তর দিল—সে যে-বাঙালীবাবুর বাড়িতে কাজ করিত তাহারা চলিয়৷ যাইবার সময় সেটা দিয়া গিয়াছে। মামাজী রাগিয় এক ধমক দিয়া বসিলেন “ভার চলে যাবার সময় দিয়ে গেছে ! বললেই আমি বিশ্বাস করলাম। যদি পাড়ার থাকতে চাস তবে সত্যি কথা বল। নইলে তোর নিস্তার নেই।” মামাজীর ধমকের ফল ফলিল। স্ত্রীলোকটি একেবারে ঘাবড়াইয়া গিয়া সমস্ত কথা স্বীকার করিল। যা বলিল তাতে আমি আশ্চর্য হইয়া গোলাম। বলিল, সে ইহা সাধুজীর নিকট হইতে পাইয়াছে। মামাজী চোখ বিস্ফারিত করিয়া আমার দিকে চাহিলেন। আমি জিজ্ঞাসা করিলাম "আর কি কি জিনিষ দিয়েছে ?" একে একে সমস্ত জিনিষ সে বাহির করিয়া দিল। দেখিলাম যতগুলি জিনিষ আমার বাড়ি হইতে চুরি গিয়াছিল সমস্তই এর ঘরে আসিয়া জমা হইয়াছে।" জিনিষগুলি লইয়। মামাজী বলিলেন—“চলুন লীগগীর, সাধুশালাকে দেখা যাক ৷” SOBO তাড়াতাড়ি করিয়া ফিরিয়া আসিলাম। কিন্তু আসিয়৷ দেখি যে-ঘরে সে থাকিত সে ঘর খালি। সাধুবাব। চম্পট দিয়াছে। স্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করিলাম। স্ত্রী বলিলেন, আমি বাহির হইয়। যাইবার পর তিনি সাধুজীকে বলেন যে হারানে জিনিষের সন্ধান পাওয়া গিয়াছে। শুনিয়া সাধুজী কিছু না বলিমা নীচে চলিয়া যায়। তার পর তিনি আর কিছু জানেন না । মামাজীকে লষ্টয় চারিদিকে খোজ করিতে গেলাম, কিন্তু কোথাও তার সন্ধান পাওয়া গেল না। ক্লান্ত হইয়া ফিরিয়া আসিয়| বিছানায় শুইয়৷ ভাবিতে লাগিলাম, মানুষের মন কি বিচিত্র, আর নারী কি বিস্ময়ের বস্তু ! ব্যাপারটা এখন আমার কাছে পরিষ্কার হইয়া আসিল । মনে পড়িল একদিন রাত্রে আমার পোষা জীবটিকে বাগানটা পার হইয়া আসিতে দেখিয়াছিলাম এবং তার পর হইতেই তার মুখে প্রায়ই শুনিতাম- ‘ চঞ্চল মনকে বশ করুন, বড় ভাবনা, বড় ভাবনা ।” তখন সে যে কৈফিয়ং দিয়াছিল, আর যা আমি বিশ্বাস করিয়া লষ্টয়াছিলাম দেখিলাম সমস্তই মিথ্যা। তার মন চঞ্চল করিয়া দিয়াছিল এই স্ত্রীলোকাট, আর তাকে সন্তুষ্ট করিবার জন্যই বিলাসের সামগ্রী অপহরণ করিয়া সে প্রণয়ের উপহার দিতেছিল। অথচ কি চতুর ভাবেই সে তাহ গোপন করিম আসিতে পারিয়াছে । অনেকদিন চলিয়া গিয়াছে। সাধুজীর কথা আমরা এক রকম ভুলিয়াই গিয়াছি। সে চলিয় গেলে থোকার মনে অত্যন্তই দুঃখ হইয়াছিল, সে প্রায়ই তার কথা জিজ্ঞাসা করিত। এখনও মাঝে মাঝে সে গানের পদটা আপন মনে গাহিয়া উঠে আর জিজ্ঞাসা করে, সাধুদাদার কি হইয়াছিল, সে চলিয়া গেল কেন ? তখনই আবার তার কথা নূতন করিয়া মনে হয় আর ভাবি -এতদিনে কি সে তার চঞ্চল মনকে বশ করিতে পারিয়াছে ?