পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

এবং ভোট-প্রার্থীরাও আমাদের মতকে মোটেই আমল দিবে না। সম্পত্তির মালিক হওয়া ভিন্ন মেয়েদের ভোটার করার আরও দুইটি উপায় হইতে পারে —প্রথমতঃ, সাধারণ লেখাপড়া জানা ; দ্বিতীয়ত, যে-সকল পুরুষ সম্পত্তির মালিক বলিয়া ভোটার, তাহাদের স্ত্রীদেরও ভোট দেওয়ার অধিকার দেওয়া । * গণনা করিয়া দেখা যায় যে, সম্পত্তির মালিক হিসাবে বাংলা দেশে যে-মেয়েরা ভোটু দেন, তাহাদের সংখ্যা পাচ লক্ষ, বর্তমানে লেখাপড়-জানা বয়স্ক মেয়েদের সংখ্যা প্রায় ৩,৭৫,•••, আর যে-সকল পুরুষ সম্পত্তির মালিক বলিয়া ভোটার, তাহাদের স্ত্রীদের সংখ্যা ৮ লক্ষ—একুনে ১৬,৭৫,• • • হয়। কিন্তু ইহাদের কোনো কোনো মেয়ের একাধিক যোগ্যতা আছে, তথাপি, তাহারা শুধু একটি ভোটই দিতে পারিবেন। মুতরাং, উক্ত সংখ্যা কমিয়া যাইবে, এবং বাংলা দেশে এ-হিসাবে মেয়ে-ভোটারদের সংখ্যা অনুমান পনের লক্ষের বেশী হইবে না। এই সংখ্যা অল্প হইলেও ইহার বেশী আমরা এখন দাবি করিতে পারি না, তবে ক্রমশঃ বাড়িবে বলিয়া আশা করা যায়। কেন-না, লেখাপড়-জানা মেয়েদের সংখ্যা মেয়েদের শিক্ষাবিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে ক্রমশ বাড়িবেই। এই ব্যবস্থার ফলে মেয়েদের কোনও বিশেষ শ্রেণী ভোট হইতে একেবারে বঞ্চিত হইবেন না। যাহারা বিবাহিতা তাহারা হয় লেখাপড়া জানার দরুণ ভোটার হইবেন, নয় সম্পত্তির মালিক বলিয়া, অথবা সম্পত্তির মালিক পুরুষ-ভোটারের স্ত্রী বলিয়া ভোটার হইতে পারিবেন। আর র্যাহারা সাধারণ লেখাপড়া জানেন র্তাহারা কুমারী হউন, সধবা হউন, বিধবা হউন ভোট দিতে পারিবেন। বিদ্যালয়ে শিক্ষালাভ অথবা পরীক্ষায় পাস করার উপর ভোট দেওয়ার যোগ্যতা নির্ভর করিবে না। যে-সকল মহিলা অন্তঃপুরে থাকিয়াই সামান্ত লেখাপড়া শিথিতে পারিবেন তাহারাও ভোটার বলিয়া গণ্য হইবেন। অধিকন্তু বিধবাদের সম্বন্ধে লোথিয়ান কমিটি এই নির্দেশ করিয়াছেন যে, সধবা অবস্থায় তাহারা যদি সম্পত্তির মালিক পুরুষ-ভোটারের স্ত্রী বলিয়া ভোটাররূপে পরিগণিত হইয় থাকেন, তবে বিধবা হইবার পরও ভোটারের তালিকায় olbol “jo SKOBO তাহাদের নাম থাকিবে। ইহাতে বিধবাদের মর্যাদাও কিছু বাড়িবে। - যাহারা পুরুষ-ভোটারের স্ত্রী বলিয়া ভোটার হইবেন, র্তাহীদের মত নিজ নিজ স্বামীদের মতের দ্বারা প্রভাবিত হুইবে বলিয়া একটা কথা উঠিয়াছে। তবে, এ-কথাও বলা যায়, স্বামীরাও তো নিজ নিজ স্ত্রীদের মতের দ্বারা প্রভাবিত হইতে পারেন ? সুতরাং ও-কথার বিশেষ কোন গুরুত্ব নাই। মেয়ের শিক্ষা ও সমাজের অনেকগুলি সংস্কারের কাজে নিজেদের স্বাধীন মতের পরিচয় দিয়াছেন, ভোটের ব্যাপারেও কেন পরিবেন না তাহার কোনো যুক্তি খুজিয়া পাওয়া যায় না। আমরা যে-দুইটি উপায়ে আমাদের ভোটের সংখ্যা বাড়াইয়া লইতে চাহিয়াছি, লোথিয়ান কমিটিও তাহ সমর্থন করিয়াছেন। পালামেণ্ট হইতে যে সিলেক্‌টু কমিটি গঠিত হইয়াছে, ঐ . কমিটি লোথিয়ান কমিটির মত ও অন্যান্য মত আলোচনা করিয়া একটা সিদ্ধান্ত করিবেন, এবং খুব সম্ভবতঃ ঐ সিদ্ধান্তই পালামেণ্ট কর্তৃক গৃহীত হইবে। লোথিয়ান কমিটির মতের কোন অংশ সঙ্কোচ করিতে গেলে, উহা সমগ্র নারীসমাজের পক্ষে বড়ই বিপদের কথা হইবে। ঐ নিৰ্দ্ধারণ মতে পুরুষ ভোটারের স্ত্রী বলিয়া যাহারা ভোটার ইদ্ভূত পরিবেন, বাংলাদেশে তাহাঁদের সংখ্যা দাড়াইবে ৮ লক্ষ" যদি এই নিৰ্দ্ধারণের বিরুদ্ধে সিলেক্ট কমিটিতে কোন আপত্তি উঠে, তবে ১৫ লক্ষ মেয়ে-ভোটারের মধ্যে ৮ লক্ষই কমিয়া যাইবে, অথচ ঐ আপত্তি যে ভিত্তিহীন তাহ পূর্বেই বলিয়াছি। স্বতরাং লোথিয়ান কমিটির মত যাহাতে সিলেক্‌টু কমিটিতে বজায় থাকে, তাহার জন্য নারীসমাজকে আন্দোলন এখন হইতেই আরম্ভ করিতে হইবে। এই সংখ্যা কমাইতে গেলে, নিৰ্ব্বাচন-প্রার্থীদের উপর নারী-ভোটারদের প্রভাব খুবই কমিয়া যাইবে । কিছুদিন আগে বাংলা প্রেসিডেন্সির মহিলা-সম্মিলনের সভ্যগণ মিলিয়া প্রধান মন্ত্রীর নিকট তাঁরযোগে জানাইয়াছেন যে পূৰ্ণবয়স্ক রমণীমাত্রই যদি ভোটার না হইতে পারেন, তাহ হইলে লোথিয়ান কমিটি নারীগণের জন্ত যে সংখ্যা নির্দেশ করিয়া দিয়াছেন, তাহার কম আমরা কিছুতেই গ্রহণ করিতে সন্মত হুইব না। . -