পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পোষ্টাপিসের পিয়ন ও তার মেয়ে ঐমাণিক বন্দ্যোপাধ্যায় সিদ্ধির নেশায় কৈলাসের চোখ দুটি স্তিমিত হইয়া আসিয়াছে। রামগতি নিজের মনে খুব হাসিতেছিল। কাচা-পাকা খোচাখোচা দাড়ির নীচে চিবুক চুলকাইয়া সে রামগতির হাসিতে যোগ দিবার চেষ্টা করিল। কিন্তু আজ নেশাট বড় ধরিয়াছে । রামগতির রসিকতাতেও হাসি আসে না। দুধের সাধ ঘোলে মেটানোর মত করিয়াই সিদ্ধি খাওয়া, নহিলে সিদ্ধির নেশায় কৈলাসের কোনদিন ঝোক ছিল না। তাড়ির কাছে কি সিদ্ধি ! কিন্তু তাড়ি সে আজকাল আর খায় না। একদিন নেশার ঝোকে মেয়ে কালীতারার কানের মাকড়ি টানিয়া ছিড়িয়া ফেলার পর হইতে ছাড়িয়া দিয়াছে। পোষ্টাপিসের ছুটি থাকিলে বদনের দোকানে যাওয়ার জন্য বিকালের দিকে এখন তার পা স্বর স্বর করে, এক ভীড় তালের রস আর বদনের বউয়ের কড়া করিয় ভাজা পেয়াজবড়ার অভাবে দিনটা তার বৃথাই গেল মনে হয়। কিন্তু বদনের দোকানে যাওয়া আর তার হইয় উঠে না। কানের খানিকটা উচুতে আর একটা ছেদ করিয়া কালী অবশু আবার মাকড়ি পরিয়াছে, কিন্তু কানের কাটা অংশটুকু বেশ দেখিতে পাওয় যায়। কৈলাস চাহিয়া দেখে আর অনুতাপ করে। মাকড়িছেড়ার রাত্রে কৈলাসের নেশার জগতে জগতের তিলটি তাল হইয়াই ছিল, কালী বিশেষ না চেচাইলেও তার মনে হইয়াছিল মেয়েটা বুঝি আৰ্ত্তনাদ করিয়াই মারা যায়, এবং সেক্ট ফেশানো উপলব্ধিটাই তার স্মরণ আছে। কাটা কানের জন্ত কালী বিশেষ দুঃখ করে না। বলে ‘হোকগে বাবা, কান নে ধুয়ে ধুয়ে জল খাব কি ! তোমার একটো কুস্বভাব তো শুধরোলো।’ গুনিয়া কৈলাস খুশী হয়। সে যে আর তাড়ি খায় না মেয়ের জন্ত সে একটা বড়রকম ত্যাগ ছাড়া আর কিছুই নয়। মেয়ে ভাগটা বোঝে জানিলে নেশা না করার আপশোষে সে ক্ষনেকখানি সাম্বন পায়। . রামগতির জামাই মাখম একটা কালিপড়া লণ্ডন রাখিয় গিয়াছে। তারই মৃদ্ধ আলোকে পরিমাণ ঠিক করিয়া কৈলাস আরও খানিকট সিদ্ধি গিলিয়া ফেলিল। তারপর একটা অত্যন্ত দুঃখের হাসির সঙ্গে নিজের মনে তার মাথা নাড়ার কারণটা রামগতি কিছুই বুঝিতে পারিল না। বলিল “আর খেও না দাদা।’ কৈলাস বলিল, ‘না ? খাইলে ছাই হয়। না আছে তাড়ির গন্ধ না আছে স্বাদ। তবু সে প্রায়ই রামগতির কাছে সিদ্ধি থাইতে আসে, সপী হইতে বাদাম পেস্ত আর সাদা চিনি আনিয়া দিয়া সবুজ সরবংকে বিলাসিতায় দাড় করানোর ব্যবস্থা করে। সিদ্ধি যোগায় রামগতি। তার জামাই মাখমের বাড়ি ময়মনসিংএর একটা মহকুমা শহরে,– যেখানে-মাঠে ঘাটে বিনা চাযেই সিদ্ধি গাছে জঙ্গল হইয় থাকে। টিনের তোরঙ্গে কাপড়ের নীচে লুকাইয় সে শ্বশুরের জন্য সিদ্ধিপাত লইয়া আসে। নিজে না আসিলে লোক মারফৎ পাঠাইয়া দেয়। আবগারী বিভাগের লোকের মদ আপিং প্রভৃতি বড় বড় মাদক সামলাইতে ব্যস্ত থাকে, স্বতরাং কাজটা মাখম আইন বঁাচাইয়াই করে। | নেশাই করে না। কেবল তামাক খায়। সে শাস্ত ও সংসারী মানুষ,–এক সে সাতাশী বিঘা জমির চাষ আবাদ দেখে আর বছরে দেড় হাজার টাকার গুড়ের কারবার সামলায়। শ্বশুরকে সে বিশেষ ভক্তি করে এবং শ্বশুরের বন্ধু বলিয়া প্রতিবার আসা ও যাওয়ার সময় কৈলাসের পায়ে হাত দিয়া প্রণাম করিতে ভোলে না। - কৈলাস থাক, থাক, বলিয়া তার প্রণাম নেয় ও চিরজীবী হওয়ার জন্ত আশীৰ্ব্বাদ জানায়। তারপর রামগতির কাছে প্রাণ খুলিয়া মাখমের সঙ্গে নিজের গোয়ারগোবিন্দ জামাই স্ববলের তুলনামূলক সমালোচনা আরম্ভ করিয়া দেয়। জবলকে সে চাষ বলে, গুগু বলে, গেজেল বলে এবং আরও অনেককিছু বলে। জবলের নাই এমন অনেক দোষও সে তার ঘাড়ে,