পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8లిS যদি তাহারা বুৰিতে পারে, যে ঐ অল্পসংখ্যক স্বরাজলি বা কেবল নিজেদের মুবিধার জন্য স্বরাজ চাহিতেছে না, কিন্তু সকলের কল্যাণ ও স্ববিধার জন্য চাহিতেছে। সম্প্রতি দুই জন হিন্দুনেতা স্বরাজলাভ সম্বন্ধে যাহা বলিয়াছেন, তাহা পড়িয়া পূৰ্ব্বোক্ত চিন্তাগুলি আমাদের মনে উদিত হইয়াছে। পঞ্জাবের ভাই পরমানন্দ এবং মহারাষ্ট্রের ডাক্তার মুঞ্জে এই মর্শ্বের কথা বলিয়াছেন, যে, হিন্দু-মুসলমান একযোগে কাজ না করিলে স্বরাজ লব্ধ হইতেই পারে না, এরূপ মত প্রচার দ্বারা অনিষ্ট হইয়াছে। আমরাও ইহা সত্য মনে করি যদিও আমরা হিন্দু-মুসলমানের মিলন খুবই চাই। ভারতবর্যের সকল ধৰ্ম্মসম্প্রদায়ের, বিশেষতঃ হিন্দু ও মুসলমানের, সম্মিলিত চেষ্টায় স্বরাজ যত শীঘ্র ও সহজে লব্ধ হইতে পারে, আলাদ আলাদা চেষ্টায় তাহ হইতে পারে না,ইহা সত্য কথা । কিন্তু স্বতন্ত্র চেষ্টায় কিছুষ্ট হইতে পারে না, ইহা সত্য নহে। আমাদের মনে হয়, হিন্দু মুসলমান শিখ খ্ৰীষ্টিয়ান প্রভৃতি ধৰ্ম্মসম্প্রদায়ের লোকের ঘদি সকল সম্প্রদায়ের লোকদের কল্যাণ ও স্ববিধার জন্য স্বরাজলাভের চেষ্টা করেন এবং ভাবেল ও বলেন, “আমরা স্বরাজলাভের চেষ্টা করিতেছি, অন্যের যদি আমাদের সঙ্গে যোগ দেন ভালই, তাহু আমরা খুবই চাই, কিন্তু তাহারা যোগ না-দিলেও আমরা স্বরাজসংগ্রাম চালাইতে থাকিব এবং আমরা সফলকাম হইলে তাহার ফলভোগ সকলেই করিবেন, তাহা হইলে তাহার ফল ভাল হইবে। অন্য সম্প্রদায়ের লোকেরা এই ভাবে কাজ করুন বা না-করুন, হিন্দুর ইহা করিয়া আসিতেছেন। দুঃখের বিষয়, সকল ভাল চেষ্টা ও কাজে বিন্ন অনেক । ভারতবর্ষে হিন্দুদের সংখ্যা বেশী এবং ইংরেজ-রাজত্বকালে তাহারাই আগে শিক্ষার স্বযোগ গ্রহণ করে। রাজনৈতিক জাগরণও তাহাদের মধ্যে আগে হয়। এই সব কারণে স্বরাজসংগ্রামের গোড়া হইতেই স্বরাজসৈনিকদের মধ্যে হিন্দুর সংখ্যা বরাবরই বেশী। কিন্তু এই আধিক্য স্বরাজবিরোধীদিগকে হিন্দুদের স্বরাজপ্রিয়তার বিকৃত ব্যাখ্যা করিবার সুযোগ ও স্ববিধা দিয়াছে। তাহারা অহিদুদিগকে বরাবর বুঝাইতে চেষ্টা করিয়া আদিতেছে, “দেখ, হিন্দুরা যে এত স্বরাজপ্রিয়, স্বরাজের জন্ত এত চেষ্ট, এত স্বার্থত্যাগ, এত দুঃখবরণ করে, ইহার মধ্যে নিশ্চয়ই কোন দুরভিসন্ধি SSDBO আছে—তাহারা নিজেদের জন্তই স্বরাজ চায়।” অথচ, সাবেক আমলের কংগ্রেসে ও আধুনিক কংগ্রেসে হিন্দুদের সংখ্যা খুব বেশী হইলেও কংগ্রেস যাহা কিছু চাহিয়াছে, সকল সম্প্রদায়ের জন্য চাহিয়াছে, কেবল হিন্দুদের জন্য কিছু চায় নাই ; অহিন্দুদের অনিষ্টকর কিছু ত চাই-ই নাই। ভারতীয় জাতীয় উদারনৈতিক সংঘ আর একটি অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক সভা। ইহাতেও হিন্দুদের সংখ্যা বেশী। কিন্তু ইহাও যাহা কিছু চাহিয়াছে, সকল সম্প্রদায়ের জন্যই চাহিয়াছে, কেবল হিন্দুদের জন্য নহে, এবং অহিন্দুদের পক্ষে অনিষ্টকর কিছু চায় নাই। হিন্দু মহাসভা কেবল মাত্র হিন্দুদের সভা, কিন্তু ইহাও রাজনীতিক্ষেত্রে কেবলমাত্র হিন্দুদের পক্ষে সুবিধাজনক এবং অন্যদের পক্ষে অমিষ্টকর কিছু চায় নাই, ইহা বরাবরই এরূপ রাষ্ট্রবিধি ও শাসনপ্রণালী চাহিয়াছে যাহা সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক (ডিমোক্র্যাটিক ) ও স্বাঞ্জাতিক ( ন্যাশুন্যালিষ্টিক ) ; অন্যেরা সাক্ষাং বা পরোক্ষ ভাবে হিন্দুদের প্রতি আবিচার ও অন্যায় ব্যবহার চাওয়ায় ও করায় হিন্দু মহাসভা আত্মরক্ষার্থ প্রতিবাদ করিতে বাধ্য হইয়াছে। ডাঃ মুঞ্জের নিন্দ অনেকে করেন। তিনি নিখুঁত মানুষ নন। কিন্তু তিনিও অহিন্দু কোন সম্প্রদায়ের অহিতকর কিছু চান নাই। তাহার বাস্থিত রাষ্ট্রবিধি ও শাসনপ্রণালী সম্পূর্ণ স্বাঞ্জাতিক (ন্যাশুন্যালিষ্টিক)। হিন্দুদের মধ্যে “উচ্চ” বর্ণের হিন্দুরাই আগে শিক্ষার স্থলোগ গ্রহণ করায়, প্রধানতঃ তাহারাহ স্কুল-কলেজ স্থাপন করামু, সেটাও যেন একটা দোষ এইরূপ কুব্যাখ্যা করা হইয়াছে। স্বরাঙ্গসংগ্রামে অগ্রণী “উচ্চ” শ্রেণীর হিন্দুর, স্বতরাং ইহার মধ্যে তাহাদের কোন কুমতলব আছে, এইরূপ সন্দেহ “নিম্ন” শ্রেণীর হিন্দুদের মনে জন্মাইবার চেষ্টা করা হইয়াছে। অথচ অসাম্প্রদায়িক কংগ্রেস ও অসাম্প্রদাম্বিক উদারনৈতিক সংঘ শুধু “উচ্চ” শ্রেণীর হিন্দুদের জন্য কিছু চায় নাই, “নিম্ন” শ্রেণীর হিন্দুদের অনিষ্ট চায় নাই। পক্ষান্তরে, “নিম্ন” শ্রেণীর হিন্দুদের শিক্ষাবিষয়ক ও সামাজিক উন্নতির চেষ্টা “উচ্চ” শ্রেণীর হিন্দুরা গবন্মেন্টের আগে আরম্ভ করিয়াছেন। প্রধানতঃ “উচ্চ” শ্রেণীর হিন্দুরা স্বরাজসংগ্রাম আরম্ভ করিবার পরে তবে গবন্মেস্ট নিজের বন্ধুত্ব ও হিতৈষিত প্রমাণ করিবার নিমিত্ত প্রধানতঃ মুসলমানদিগকে এবং সামান্য পরিমাণে “নিম্ন” শ্রেণীর হিন্দুদিগকে শিক্ষা ও