পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

- বিবিধ প্রসঙ্গ—সকল দলের সম্মিলিত দালি ও মিঙ্গলের উপর গুরুত্ব আরোপ 8●ግ চাকরি পাইবার বিশেষ স্বযোগ দিতে আরম্ভ করিয়াছেন। তাহারও একটা উদ্বেগু এই যে, যাহাতে মুসলমানরা ও “নিয়” শ্রেণীর হিন্দুরা স্বরাজ সংগ্রামে “উচ্চ” শ্রেণীর হিন্দুদের সঙ্গে যোগ না-দেয়। এই উদ্দেশু কতকটা সিদ্ধও হইয়াছে। তথাপি “উচ্চ” শ্রেণীর হিন্দুদের মধ্যে যাহারা স্বরাজসৈনিক, “নিম্ন” শ্রেণীর হিন্দুদের মধ্যে যাহারা স্বরাজসৈনিক এবং মুসলমান ও অন্যান্য অহিন্দুদের মধ্যে র্যাহারা স্বরাজসৈনিক, র্তাহার একযোগে বা আলাদা আলাদা স্বরাজসংগ্রাম চালাইবেন, আশা করিতে দোষ নাই। সম্মিলিত সংগ্রামে শীঘ্র সাফল্যের সম্ভাবনা অধিকতর, কিন্তু স্বতন্ত্র সংগ্রামও ব্যর্থ হইবে না। শীঘ্র বা বিলম্বে সফলতা যখন আসিবে, তখন স্বরাজ সম্বন্ধে উদাসীন ও স্বরাজলাভে বিল্প-উৎপাদকের ও তাহাদের বংশধররাও উহার মুফল ভোগ করিবে- হয়ত অনুতাপ ও লজ্জার সহিত ভোগ করিবে । সকল দলের সম্মিলিত দাবি ও মিলনের উপর অতিরিক্ত গুরুত্ব আরোপ ব্রিটিশ গবন্মে টি বলিয়া আসিতেছেন, ভারতীয়েরা সৰ্ব্বদলসম্মত, সৰ্ব্ববাদিসম্মত একটা কিছু রাষ্ট্রবিধি শাসনবিধি চাহিলে তাহ দেওয়া হইবে- অন্ততঃ বিবেচিত হইবে। কিন্তু ছোট ছোট দেশের অল্পসংখ্যক লোকেরাও সম্পূর্ণ একমত হইতে কচিৎ পারিয়াছে। ভারতবর্ষের মত বৃহৎ দেশের বহু কোটি লোকের ঐকমত্য আরও কঠিন। স্বাভাবিক বাধা ছাড়া কৃত্রিম বাধাও উৎপাদিত হইয় আদিতেছে। স্বরাজ সম্বন্ধে উদাসীন কিংবা স্বরাজের বিরোধী নগণ্য লোক ও নগণ্য দলকেও গবয়েন্ট স্বরাজলি, যোগ্যতম লোক ও অতিপ্রভাবশালী ও সংখ্যাবহুল দলের সমান বা তদপেক্ষাও মান্তগণ্য বলিয়া বাহ্যতঃ স্বীকার করিয়া আসিতেছেন ; তাহদের সরকারী সম্মান এবং চাকরিলাভ ইত্যাদি ত হইতেছেই। লর্ড মিণ্টোর আমল হইতে স্বতন্ত্র আসন, সংখ্যানুপাত অপেক্ষা অধিকতর আসন ইত্যাদির ব্যবস্থা কোন কোন সম্প্রদায়ের জন্ত হইয়া আসিতেছে। এই সব মিলন-পরিপন্থী ব্যবস্থা যাহার করেন, তাহদের মুখ দিয়াই আবার সম্পূর্ণ ঐকমত্যের দাবিও বাহির হয়। উভয়ের মধ্যে সঙ্গতি ও সামঞ্জস্ত নাই । অতীতকালে সম্পূর্ণ অহিংস উপায়ে কোন পরাধীন ভূখণ্ড স্বাধীন হয় নাই, অথচ আমাদের অবলম্বিত উপায় অহিংস। এই জন্ত যুদ্ধ দ্বারা বা কতকটা সহিংস উপায় দ্বারা যাহার স্বাধীন হইয়াছিল, তাহদের দৃষ্টান্ত ভিন্ন অন্য এমন কোন দৃষ্টান্ত নাই যাহার দ্বারা আমাদের মত সমর্থন করা যায়। আমরা এই কারণেই আমেরিকা ও আয়াল্যাণ্ডের দৃষ্টান্ত দিতেছি, নতুবা দেশকালপাত্রভেদ থাকায় তাহাদের অবলম্বিত উপায় যে ভারতবর্ষের অবলম্বনীয় উপায় নহে তাহা আমরা বুঝি। এখন, যাহা বলিতে চাই, তাহ বলি। ব্রিটেনের অধীন আমেরিকার কতকগুলি উপনিবেশ যখন স্বতন্ত্র ও স্বাধীন হইবার চেষ্টা করে, তখন সকল উপনিবেশ এই চেষ্টায় যোগ দেয় নাই, কয়েকটি উপনিবেশ ব্রিটেনভুক্ত ও স্বাধীনতার বিরোধী ছিল। ইহারা এখন কানাডা নামে উল্লিখিত হয় এবং ব্রিটেনের সহিত ইহারা এক সাম্রাজ্যভুক্ত । কিন্তু অন্য উপনিবেশগুলির স্বাধীনতাপ্রিয়তা অজেয় ছিল বলিয়া তাহার সফলকাম হয়। তাহাদের নাম হইয়াছে আমেরিকার ইউনাইটেড ষ্টেট্স্। আমেরিকার উপনিবেশগুলির সম্পূর্ণ ঐকমত্য না থাকা সত্ত্বেও ব্রিটেন ইউনাইটেড ষ্টেটুসের স্বাতন্ত্রা স্বীকার করিতে বাধ্য হইয়াছে। আয়াল্যাণ্ডের স্বরাজসংগ্রামেও বরাবর দলাদলি হইয়। আসিতেছে। আধুনিক নেতাদের নাম করিলে একটিকে ডি ভ্যালেরার অন্তটিকে কসগ্রেভের দল বলিতে হয়। সম্পূর্ণ ঐকমত্য সেখানে আগেও ছিল না, এখনও নাই। কিন্তু তাহা সত্ত্বেও একটি দলের উদ্দেশ্য সিদ্ধ হইতেছে এবং তাহার দাবি ও কাজ ব্রিটেন অগত্যা মানিয়া লইতেছে । ধৰ্ম্মসাম্প্রদায়িক অমিলন ও ঝগড়া আমেরিকা ও আয়ালাও উভমুত্রই রাজনৈতিক দলাদলি ও বিবাদের সঙ্গে জড়িত হইয়| আসিয়াছে ও আসিতেছে ; ফলে সাতিশয় অবাঞ্ছনীয় ভীষণ রক্তারক্তিও হইয়াছে। পূৰ্ব্বেই আভাস দিয়াছি, বিদেশী সহিংস স্বাধীনতা সংগ্রামের সহিত ভারতীয় অহিংস স্বরাজলাভ-চেষ্টার সাদৃপ্ত নাই। কিন্তু ভবিষ্যৎ চরম ফলে এই সাদৃপ্ত জন্মিবার সম্ভাবনা আছে বলিয়া আমরা মনে করি, যে, সকল দলের সম্মিলিত চেষ্টা না-থাকিলেও সকলের চেঞ্জে উদ্যোগী, স্বাৰ্থত্যাগী,