পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪৯৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিংশ শতাব্দীর রাষ্ট্রীয় চিন্তাধারা ঐবিমানবিহারী মজুমদার, এম-এ বিংশ শতাব্দীর ইতিহাসের বৈশিষ্ট্য আমাদের দেশে যে পরিমাণে রাষ্ট্রীয় আন্দোলন হইতেছে তাহার তুলনায় রাষ্ট্রীয় দর্শনের আলোচনা বিশেষ কিছুষ্ট হইতেছে না। কর্শ্বের প্রেরণা আসে চিন্ত হইতে, আবার চিস্তাশক্তি উদ্বুদ্ধ হয় কৰ্ম্মের দ্বার। চিস্তা ও কৰ্ম্ম বীজাঙ্কর হুয়ের মত পরম্পরের সহিত ঘনিষ্টভাবে সংশ্লিষ্ট । রাষ্ট্রীয় আন্দোলন ব্যাপক হইয়া পড়িয়াছে, অথচ আধুনিক রাষ্ট্র যেসকল ভিত্তি ও স্তম্ভের উপর প্রতিষ্ঠিত তাহার সম্বন্ধে সুস্পষ্ট ধারণ জনগণের মনে জাগরূক করিবার চেষ্ট হইতেছে না। ইহার ফলে এই আন্দোলনে অনেক ত্রুটি ও অসামঞ্জস্য পরিলক্ষিত হইতেছে । আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার অন্যতম নামক জি-ডি-এইচ কোল তাহার “Social Theory” নামক গ্রন্থে বলিয়াছেন, পরাধীন জাতির বিভিন্নপ্রকার সঙ্ঘ জ্ঞাত ব| অজ্ঞাতসারে স্বাধীনতা অর্জনের জন্য চেষ্টিত হয়। কোল-এর এই উক্তি মূলতঃ সত্য বটে, কিন্তু স্বাধীনতার স্বরূপ কি, রাষ্ট্রের ক্ষমতার সীমা কতদূর, ব্যক্তির সহিত তাহার সম্বন্ধ কি, জাতীয় রাষ্ট্রের সহিত বিশ্বমানবতার সামঞ্জস্য করা যায় কিরূপে, শ্রমিক ধনিক ও ভূস্বামীর পরস্পরের অধিকার ও কর্তব্য কিরূপে নিরূপিত হইবে -এই সমস্ত সমস্যা প্রত্যেক স্বাতন্ত্রাকামী জাতিকেই নিজ নিজ অবস্থানুসারে সমাধান করিতে হইবে। উল্লিখিত সমস্তাগুলি সম্বন্ধে বিংশ শতাব্দীর রাষ্ট্ৰীয় চিন্তানায়কগণের কি মত তাহাই এই প্রবন্ধে নিরপেক্ষ ভাবে আলোচনার চেষ্টা করিব। সাধারণতঃ রাষ্ট্ৰীয় দর্শনের উপাদান আসে রাষ্ট্রীয় ইতিহাস, অর্থাৎ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জীবনের অভিজ্ঞতা হইতে। উনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগের ইতিহাসের প্রতি দৃষ্টিপাত করিলে কয়েকটি বৈশিষ্ট্যদ্যোতক ধারা পরিলক্ষিত হয়। ঐ সকল বিশিষ্ট ঘটনা রাষ্ট্ৰীয় চিন্তাকে নূতন পথে পরিচালিত করিয়াছে। উনবিংশ শতাব্দীর চতুর্থপাদ হইতে কলকারখানার প্রসার আরও বাড়িয়া গিয়াছে। ইহার এক শত বৎসর পূর্বে ইংলণ্ডে কলকারখানার যুগের স্বত্রপাত হয় বটে, কিন্তু ইউরোপের অন্যান্য রাষ্ট্রে ও আমেরিক এবং এশিয়ায় উহার প্রতিপত্তি বাড়ে গত পঞ্চাশ-যাট বৎসরের মধ্যে। পাশ্চাত্য জগতের সর্বত্রই ছোট ছোট কারবারগুলি ক্রমে বিশাল আকার ধারণ করিতে থাকে, যৌথ ব্যবসায়ের প্রসার হইতে আরম্ভ হয়, শ্রমিকদিগের নিয়োগ ও নিয়ন্ত্রণব্যাপারে বৈজ্ঞানিক প্রণালী (scientific management ) অমুস্তত হইতে থাকে, এবং এক-একটি কারবার এক-একটি মালের উপর জাতীয় বা আন্তর্জাতিক একচেটিয়া অধিকার . স্থাপন করিতে প্রয়াণী হয়। কল-কারখানার যেমন বৃদ্ধি হইতে লাগিল, শহরের সংখ্যাও তেমনই বাড়িয়া যাইতে লাগিল । পুরাতন শহরগুলিতেও লোকসংখ্যা অসম্ভব রকম বাড়িয়া গেল। ইহার ফলে একদিকে যেমন শ্রমিকদিগের মধ্যে সঙ্ঘবদ্ধ হইবার স্বধোগ জুটিল, অন্যদিকে তেমনি এভগুলি বিত্তহীনের একত্র সম্মিলন হওয়ায় তাহাদের বাসগুহ, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, শিশুপালন ও আকস্মিক বিপদের প্রতিকার উপায় প্রভৃতি কঠিন সামাজিক সমস্তার উদ্ভব হুইল। শ্রমিকগণ ট্রেড ইউনিয়নে সঙ্ঘবদ্ধ হইয়া নিজেদের অবস্থার উন্নতির চেষ্টা করিতে লাগিল। আবার দার্শনিকগণও ধন-উৎপাদন-প্রণালীর নিয়ন্ত্রণ ও উৎপন্ন ধনের ন্যায্য বিভাগ সম্বন্ধে নানা প্রকার মতবাদ উপস্থিত করিতে লাগিলেন। এই দুই প্রকারের চেষ্টার ফলে সমাজের শ্রমিক কর্তৃত্ব স্থাপনের জন্য *RRERtv (Collectivism ), অরাষ্ট্ৰতন্ত্রবাদ ( Anarchism ), উৎপাদক-সঙ্ঘ'চম্ববাদ (Syndicalism), častnostāTERİR (Guild-Socialism), সমবায় (Co-operation) ও বলশেভিক তন্ত্রের উৎপত্তি झुम्न । উনবিংশ শতাব্দীর শেষপাদে ইংরেজের দেখাদেখি অন্যান্য পাশ্চাত্য জাতির মনে সাম্রাজ্য লাভের ইচ্ছা প্রবল হয়। ভৌগোলিক আবিষ্কার, যানবাহনের স্ববিধ, মিশনরিদের ধৰ্ম্মপ্রচারের ইচ্ছা, লোকসংখ্যার বৃদ্ধি, এই সকল কারণে নুতন আবাসস্থলের প্রয়োজন ও সঞ্চিত ধন খাটাইবার বাসনা