পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8&• বা সমূহত বাদ সর্বপ্রথমে প্রচারিত হয়। ইহার মূল উদ্দেশু ধন-উৎপাদনের উপায়গুলি অর্থাৎ কলকারখান, রেল ষ্টীমার, জমি প্রভৃতি রাষ্ট্রের হাতে আনা ও রাষ্ট্রকর্তৃক সৰ্ব্বসাধারণের উপকারার্থ নিয়মিত ও পরিচালিত করা । ইংলণ্ডে ১৮৮৪ খৃষ্টাব্দে সিডনী ওয়েব ও তাহার ভাবী পত্নী, বার্ণার্ড শ, মিসেস্ বেসান্ট প্রভৃতি মহামনীষাসম্পন্ন নরনারী ফেবিয়ান সোসাইটি নামে একটি সঙ্গঘ স্থাপন করিয়া সমূহতন্ত্রবাদ প্রচার করিতে আরম্ভ করেন। র্তাহার কেহই সাধারণ শ্রমজীবী নহেন, তাহদের লেখাও মুটে মজুরের জন্য নহে। তাহার শ্রমজীবীদিগকে সংস্কুদ্ধ করিম রাষ্ট্ৰীয় বিপ্লবের সাহায্যে অর্থনৈতিক সংস্কার করিবার পক্ষপাতী নহেন। র্তাহারা সমাজতন্ত্রবাদের উপযোগী মনোভাব আনিবার জন্য কতকগুলি প্রবন্ধ প্রকাশ করেন । তাহাতে তাহারা ধন ও ভূমির উপর গণতন্ত্রমূলক রাষ্ট্রের একচেটিয়া অধিকার স্থাপনের ব্যবস্থা দেন। রাষ্ট্রের পরিচালনার ভার রাজনীতি উপজীবী ব্যক্তিদের হাতে না রাথিয় বিশেষজ্ঞদিগের উপর ন্যস্ত করা হউক, এই মতের দ্বারা প্রভাবান্বিত হইয়৷ জাৰ্ম্মানী, ইংলণ্ড ও আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্রে সমাজতন্ত্রবাদী রাজনৈতিক দলের উদ্ভব হয়। ঐ সকল দেশে কারবার ও কারখানা এত বিশালকায় হইয়া উঠিয়াছে যে, রাষ্ট্র তাহার কর্তৃত্ব গ্রহণ করিতে পারে। জাৰ্ম্মানীতে সমূহতন্ত্রবাদের কতকগুলি নীতি অকুস্ততও হইয়াছিল। কিন্তু আধুনিক চিন্তানায়কগণ সমূহত্যুবাদের অনেক দোষের উল্লেখ করিয়া থাকেন। তাহার মধ্যে প্রধান এই, যে, রাষ্ট্রের কৰ্ম্মচারিবৃন্দ বা বুরোক্রেসী জাতির অর্থনৈতিক স্বাৰ্থপরিচালনার উপযুক্ত নহে। তাহাদের হাতে অতিকায় কারখানা ও কারবার আসিলে ঘুষ ও পক্ষপাতিত্ব, অক্ষমতা ও অত্যাচার বৃদ্ধি পাইবার সম্ভাবনা। অরাষ্ট্ৰতন্ত্রবাদ উনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে অরাষ্ট্ৰতন্থের (Anarchism) প্রভাব দেখা দেয়। এই মতবাদী ব্যক্তিগণ ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যে এতদূর বিশ্বাসণীল যে, ইহারা মনে করেন, রাষ্ট্রপরিবার ও সমাজবন্ধনের দ্বারা ব্যক্তিত্বের বিকাশের বিঘ্ন হয়। বিংশ শতাব্দীতে এই মতের-প্রধান পোষক ছিলেন রুবিয়ার প্রিল ఏOBO ক্রপট্‌কিন। তিনি প্রাণিতত্ত্ববিদ্যার অনুসরণ করিয়া স্থির করেন যে, শাসন ও আইনের দ্বারা ব্যক্তিকে বদ্ধ না রাখিয়া পরস্পরের সাহায্য করিবার সংস্কারের প্রতি শ্রদ্ধাবান হওয়া প্রয়োজন। তাহার দ্বারাই সমাজ সংগঠন রক্ষা পাইবে । তাহার মতে আইন ও শাসন কেবলমাত্র আধুনিক শ্রেণীবৈষম্যকেই চিরস্থায়ী করে। সুতরাং বাধ্যতামূলক রাষ্ট্রের উচ্ছেদসাধন করিয়া স্বাধীন ব্যক্তিগণের স্বাধীন সঙ্গসমূহ গঠন করা উচিত। ব্যক্তিগত সম্পত্তির বিলোপসাধন করিলে জেল, পুলিস, আইন, আদালত, হাকিম ও হুকুম কিছুরই প্রয়োজন থাকিবে না। অরাষ্ট্রবাদিগণ রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয়তা একেবারেই স্বীকার করেন না। কিন্তু সমাজের বর্তমান অবস্থায় রাষ্ট্রশক্তি না থাকিলে ব্যক্তির সহিত ব্যক্তির, সঙ্ঘের সহিত • সঙ্ঘের ও সঙ্ঘের সহিত । ব্যক্তির সম্বন্ধ নিরূপণ ও নিৰ্দ্ধারণ করিবার কোন উপায় থাকিবে না। নিটুশের অতিমানববাদ এই অরাষ্ট্ৰতন্থেরই অন্য রূপ। তিনি পরাক্রমশীল ব্যক্তির উপাসক। তাহার মতে দুৰ্ব্বলের উচ্ছেদসাধন করিরা পরাক্রাস্ত ব্যক্তির যদি ভোগ্যবস্তুর উপর কর্তৃত্ব স্থাপন করে তবে সমাজের কল্যাণ সাধিত হয় । উৎপাদক-সজঘ-তন্ত্রবাদ অরাষ্ট্রতন্ত্রবাদের ন্যায় উৎপাদক-সঙ্ঘ-তন্ত্রবাদও (Syndicalism ) রাষ্ট্রের প্রতি শ্রদ্ধাহীন । এই মতবাদ প্রাগম্যাটিক দর্শনবাদ, মার্কস-এর সমূহতন্ত্রবাদ ও ক্রপট্‌কিন এবং নিৰ্টুশের অরাষ্ট্রতত্ত্ববাদের সম্মিলনে উদ্ভূত। এই মতবাদীরা বুদ্ধিবৃত্তির উপর তত জোর দেওয়া অপেক্ষ ভাবকামনা ও সংস্কারের প্রভাবে জীবনকে পরিচালিত করা শ্রেয় মনে করেন। সংগঠন ও শাসনের দ্বারা মানবের ব্যক্তিত্ব বিকাশের বিঘ্ন হয় বলিয়া ইহারা মনে করেন। এক এক শ্রেণীর বস্তুর উৎপাদকগণ সঙ্ঘ গঠন করিবে ও নিজেরা নিজেদের কাজ নিয়ন্ত্রিত করিবে । ধন এই সকল সজেঘর সাধারণ অধিকারে থাকিবে। সকল সজা অবশেষে যুক্ত । হইয়া এক মহাসত্ত্যে পরিণত হইবে। ধনিকের কবল হইতে প্রধান প্রধান ফ্রব্য উৎপাদনের যন্ত্রগুলি উদ্ধার করিবার জগু ইহার দেশব্যাপী সাধারণ ধৰ্ম্মঘট করিবার পক্ষপাতী।