পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫০৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ব্যথা-সঙ্গম শ্রীরাধিকারঞ্জন গঙ্গোপাধ্যায় বনমালী স্থপুরুষ কিন্তু বংশমর্যাদায় কিছু পাটে বলিয়া অতি অল্প বয়সেই একট মৰ্ম্মান্তিক ঘ পাইল । তাহার পূর্বপুরুষের মধ্যে কে একজন ন-কি জন থাটিত । বনমালীর অপেক্ষাণ্ড আঘাতট। যাহার বেশী লাগিয়াছিল সে বনমালীর পিত ঋসিবর । ঋষিবরের অবস্থ। মাঝারি রকমের বনমালী গ্রামের ইংরেজী স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণী পৰ্য্যস্ত পড়িয়াছে তাহার উপর সে সুন্দর স্বপুরুষ বলিয়৷ প্যাত । এই এতগুলি সুযোগের উপর নির্ভর করিয়া ঋষিবর একেবারে বড় গাছে নৌকা বাধিতে উঠিয়া-পড়িয়া লাগিল । দাও সে প্রায় বসাইয়াছিল, কিন্তু একান্ত অতর্কিতভাবে বংশমৰ্য্যাদার কথাটা ঝড়ের মত উঠিয় পড়িয় তাহার দৃষ্টির সম্মুখ হইতে সমস্ত ভাসাইয়া লইয়া গেল । গ্রামের সকলে ঋষিবরের শোকে হাহাকার করিল-- আবার খুশীও হইল । - যেমন ছোট হুয়ে বড় আশা, ঠিক উপযুক্তই হয়েচে । ঋষিবর ইহারই কিছুদিন পরে মৃত্যুর শীতল ফ্রেগড়ে আশ্রয় লইল, কিন্তু বড় হঠাৎ । ডাক্তার বলিল, সন্ন্যাস রোগ ... লোকে বলিল, কি দাওটাই ন বসাচ্ছিল। পাচ-পাচটি হাজার টাকা। এত বড় আঘাতটা সামলানো কি বড় সোজা ? বনমালী সংসারধৰ্ম্ম গ্রহণের পূৰ্ব্বেই সংসারের প্রতি বীতস্পৃহ হইয় একদিন সকলের অলক্ষ্যে গ্রাম ছাড়িল । পিতার মৃত্যুর পরে তাহার আপনার বলিতে কেহ রহিল না, সংসারের প্রতি তাই টান থাকা কিছু স্বাভাবিকও না, কিন্তু অপযশ মাথায় করিয়া ফিরিতে সে আরও অসমর্থ ; চেষ্টাও তাই করিল না। গ্রামের লোক প্রাণ ভরিয়া হাসিল । গগুকীর তীরে ছোট একটি আশ্রমের মত। যোগাচায্যের তেজোদীপ্ত সৌম্য শাস্ত চেহারা বনমালীর মনে বড় ধরিল । এমনই একটি লোকের সন্ধানে সে যেন এতদিন ঘুরিয়৷ বেড়াইয়াছে । যোগাচার্য্যের আশ্রমে চারিটি ছাত্র ছিল তাহার যোগাচার্য্যের নিকট বেদ অধ্যয়ন করিত ৷ বনমালী ছাত্ৰশ্রেণীভূক্ত হওয়ার জন্য আবেদন জানাইল, আবেদন গ্রাহীও হইল । যোগাচাৰ্য্য তাহার নাম জিজ্ঞাস করায় সে বলিল,- এই অধমের নাম শ্ৰীবনমালী ভট্টাচাৰ্য্য। যোগাচায্যের হুমুত বনমালী জানিলেষ্ট চলিত, ভট্টাচাযটুকু না থাকিলেও ক্ষতি ছিল না, কিন্তু বনমালীর ক্ষতি আছে মনে করিয়৷ বনমালী কামস্তের সস্তান হুইয়াও নিজেকে ভট্টাচায্যে পরিণত না করিয়া পারিল না। বনমালীর বেদাধ্যয়ন মুরু হুইল । বনমালী যতই যোগাচার্য্যের ঘনিষ্ঠ হইয়| উঠিতে লাগিল ততই তাহার প্রথম পরিচয়ের মধ্যে ষে মিথ্যাটুকু ছিল তাহ বড় হইয় তাহাকে অভ্যন্ত ব্যথা দিতে লাগিল । একদিন যোগাচাৰ্য্য গণ্ডকী হইতে স্নান করিয়া ফিরিতেছিলেন বনমালী আশ্রমোপাস্তের একটি আনত তরুশাখে দেহের ভার ন্যস্ত করিয়া কি যেন ভাবিতেছিল । বনমালী যোগাচার্য্যের আগমন লক্ষ্য করে নাই, কিন্তু যোগাচাৰ্যা বনমালীর চিস্তাক্লিষ্ট ললাটের সবখানি পরিচয় যেন একবার সেদিকে দৃষ্টি পড়িতেই পাইলেন। যোগাচাৰ্য্য অতি সহজ শান্ত হাসিয়া বলিলেন, বন. তুমি আমার আশ্রমের নিয়মভঙ্গ করচ ’ বনমালী সহসা চম্‌কাইয়া উঠিয় কি যেন বলিতে চেষ্টা করিল, যোগাচাৰ্য্য বাধা দিম৷ বলিলেন, আনন্দ আমাদের আশ্রমের রীতি, দুঃখকে আমরা আশ্রমের বাইরে বিসর্জন দিয়ে আসি । তোমাকে আজ এত ক্লাস্ত দেখচি কেন বন ? তোমার তো শুনেচি সংসারে কেউ নেই। বনমালী অতিকষ্টে উচ্ছ্বসিত ক্ৰন্দন রোধ করিয়া বলিল,—