পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫০৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ՅԳo কেমন ক’রে এখানে এলে ?...কোন উত্তর পেলাম না, দিদির রক্তজবার মত লাল চোখ দুটো দিয়ে আমাদের কসবার ঝরণার মত অবিশ্রাম জল ঝরে পড়তে লাগল। চোখের জল নিঃশেষ না হতেই দিদি আমাকে আরও তার বুকের কাছে টেনে নিয়ে বলে যেতে লাগল, পুরন্দর. তার ন-কি বংশমর্য্যাদামু সকলের ঈর্ষার বস্তু, কিন্তু মানুষ তাদের মধ্যে একজনও নেই ভাই। আমাকে শুধু তারা জীয়স্তে চিতায় তুলে দেয় নি, নইলে আমার মপো যে নারীত্ব আছে তা তার ভূলে গিয়ে অহোরাত্র তার অশেষ অবমানন। করেছে। আমার প্রতি-অঙ্গে আমার শ্বশুরবাড়ির হাতের লাঞ্ছনার দাগ আজও অণক আছে । তারপরে স্বামীর কথা হিন্দু স্ত্রীর যিনি জীবস্তু দেবতা- পুরন্দর, সৌন্দয্যের সে কি ভীষণ অপরাধ ! আমার এই অপার্থিব সৌন্দৰ্য্য নিয়ে আমি সতীত্বের কঠোর শুভ্রতা কিছুতেই নাকি অটুট রাখতে পারি না- এই তার ধারণ। আমার সৌন্দয্য আমার অপরাধ ...আজ তাই সকলকে মুক্তি দিয়ে রাত্রির অন্ধকারের জড়োয়ায় নিজের সৌন্দযাকে জড়িয়ে এখানে চলে এসেছি । পুরন্দর, আমার বুকের এই গভীর বেদন তোর বুকে খানিকট মিশিয়ে দিষ্ট আয় ।...আমি এক বইতে অক্ষম, তোকে তাই এর ভাগ নিতে হবে। তারপরে আরও নিবিড়, আরও গভীর ভাবে সে আমাকে তার ব্যথার স্থানে জড়িয়ে ধরল ...দিন-কয়েক পরে ময়নাগড় থেকে লোক এল দিদির সন্ধানে । কিন্তু দিদির খোজ নিতে আমি ঘরে ঢুকে দেগি, ঘরের আড়ার সঙ্গে বাধা একটা দড়ির ফাসে তার বিকৃত সৌন্দয্য ঝুলচে। এমনি করে তার সৌন্দয্যের বীভৎস অবসান হ’ল, কিন্তু তার স্মৃতির অবসান হয়ত আমার কোন কালেই হবে না। সে তার ব্যথার ভাগী আমাকে ক’রে নিতে এসেছিল, আমি চিরদিন তাই হয়েই থাকব। বলিয়া পুরন্দর মাধবাচায্যের শিথিল বন্ধন হইতে নিজেকে মুক্ত করিয়া লইয়। অদৃশ্য হইয় গেল। মাধবাচায্যও আর বাধা দিল না । চাপাগাছের সিক্ত সবুজ পত্রের উপর স্থধ্যের কিরণ পড়িয়া ঝিলমিল করিতেছিল। যেন জগতের পুীভূত অশ্র সেখানে আসিয়া জমা হইয়াছে। SునOBO ছাত্রাবাসের সহজ সরল তালটুকু সহসা কাটিয়া গিয়াছে। পুরন্দর কাহারও অন্তরোধের পূৰ্ব্বেষ্ট মাধবাচার্যের পাতা আসনটির পাশে আসিয়া বই খুলিয়। নিত্য নিয়মিত সময়ে বসে। মাধবাচাধা ছাত্রদের নিকট বেদের নিগুঢ় ব্যাথ্য অতি প্রাঞ্জল সরল করিয়| প্রকাশ করিতে গিয়া হয়ত মাঝপথেষ্ট অকারণে থামিয়া যায় । আবার তাহার আত্মস্ত ভাবটুকু কাটিমা গেলেই ছিন্নস্বত্র ধরিয়া নৃতন করিয়া আরম্ভ করিতে যায়, কিন্তু সমস্তই গরমিল হইয়া যায় । কেমন হতাশভাবে পুরন্দরের ছতিহীন মুথের পানে চাহিয়া থাকে । পুরন্দর সর্বাগ্রে তাহ লক্ষ্য করিয়া বলে,-- আজ আপনার শরীরটা হয়ত ভাল নেষ্ট । আজ নHহয় থাক । বলিয়। পুরন্দর মাধবাচায্যের অনুমতির অপেক্ষ ন|” রাখিয়াঙ্গ উঠিয় পড়ে। মাধবাচায্য আরও নীরব হইয় যায়। একে একে অন্যান্ত ছাত্রেরাও উঠিয়া যায়। এমন করিয়া মাঝপথেষ্ট হয়ত বেদাধ্যয়ন শেষ হয় । নিশুতি রাতের নিবিড় তন্দ্রাচ্ছন্নত ছাত্রাবাসটিকে তখন ছাইয়। ফেলিয়াছে । মাধবাচার্য্যের কাছে অনিদ্র রজনীর প্রত্যেকটি সুদীর্ঘ মুহূৰ্ত্ত যেন অসহ্য হইয়া উঠিয়াছে। ধীরে ধীরে শয্যা ত্যাগ করিয়া বাহিরে আসিয়া দেখিল, সমস্তষ্ট অন্ধকারের গভীরতার মধ্যে তলাইয়। গিয়াছে । হয়ত পুরন্দরও আর সকলের মতই নিদ্রাজনিত বিস্কৃতির মধ্যে শান্তি পাইয়াছে । কিন্তু পুরন্দরকেই মাধবাচায্যের আজ বড় প্রয়োজন । প্রথম ডাকেই তাহার সাড়া মিলিল । পুরন্দরও হয়ত তাহারই মত অনিদ্র রজনী কাটাইতেছিল। পুরন্দর কাছে আসিয়া বলিল, এত রাত্রে যে আপনি ? -- রাত্রের অন্ধকারেই তুমি আমার সঙ্গী, আমার আত্মীয়, বন্ধু। তোমাকে যে-ব্যথা বইবার ভার তোমার দিদি দিয়ে গেছে তাতে আমিও কিছু ভাগ নিতে চাই, তোমার সে দুঃখের সাথী হতে চাই পুরন্দর । কিন্তু জগতের চোখের আড়ালেই তা চিরদিন থাকে যেন । মাধবাচাৰ্য পুরন্দরকে বুকের কাছে টানিয়া লইয়া তাহার উন্নত বিশাল ললাটের উপর গাঢ় চুম্বন জাকি দিয়া বলিল,—