পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শিশুর শিক্ষায় খেলার স্থান ীিউষা বিশ্বাস, এম-এ, বি-টি To spare the rod and spoil the child— যে-কালের ধারণ ছিল সে-কাল আর নাই। শিশুকে শিক্ষ দিবার জন্য যে বেত্রের প্রয়োজন নাই--এ-সত্য শিক্ষকগণ ক্রমেই উপলব্ধি করিতেছেন। ফ্রেণএবেল প্রভৃতি শিক্ষ-গুরুগণ বর্তমান শিক্ষ-পদ্ধতিতে যে-বিপ্লব আনিয়াছেন তাহাতে শিশুকে শাসন করার পরিবর্তে আনন্দ দেওয়ারই ব্যবস্থা করা হইয়াছে। পাঠ্যবিষয়কে মনোরম ও চিত্তাকর্ষক করিবার প্রয়োজন আজকাল সকল শিক্ষকই অনুভব করিতেছেন। পাঠে শিশুর স্বাভাবিক অন্তরাগ জন্মাষ্টতে পারিলে শিক্ষকের কাজ কঠিন না হইয়া বরং যে সহজই হইয়া যায় এ-কথা সৰ্ব্ববাসিন্মত। শিক্ষা অর্থে আমরা আজকাল কেবল কতকগুলি পাঠ্যবিষয় মুখস্থ করানোই বুঝি না। প্রকৃত শিক্ষায় শিশুর দৈহিক ও মানসিক শক্তিগুলির স্বাভাবিক ক্রমবিকাশ সহজ ও মুনিয়মিত হয়। তাই রুশে-প্রমুখ আধুনিক শিক্ষাপ্রবত্ত্বকগণ শিশুর ইন্দ্রিপরিচালনার উপরই তাহার ভবিষ্যতের সমস্ত শিক্ষার ভিত্তি স্থাপন করিতে প্রয়াস পাইয়াছেন। এই কারণেই শিক্ষকের শিশু-মনস্তত্ব সম্বন্ধে জ্ঞান থাকা বিশেষ প্রয়োজন । জামরা শিশুকে অপরিণত মানবমাত্র জ্ঞান করিয়া বড়ই স্কুল করি। তাহার মন যে প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মন হইতে সম্পূর্ণ বিভিন্ন, সে কথা শিশুর কাধ বিচার করিবার সময় আমাদের সৰ্ব্বদা মনে রাখা উচিত। শিশুকে শিক্ষা দিবার সময় তাহার দৈহিক ও মানসিক শক্তিগুলি সম্বন্ধে সচেতন থাকা শিক্ষকের একান্ত কৰ্ত্তব্য। শিশুর যাবতীয় দৈহিক প্রয়োজনকে, তাহার মানসিক বৃত্তি ও সহজাত সংস্কারগুলিকে উপেক্ষা করিলে চলিবে না। বরং এইগুলিকে উপযুক্তভাবে পরিচালিত করিয়া শিক্ষাকার্ধ্যে প্রয়োগ করিতে পারিলে অধিক ফল পাওয়া যাইবে। কোন কোন বিষয় ও কাৰ্য্যে শিশুর স্বাভাবিক আগ্রহ ও অম্বুরাগ লক্ষিত হয়—ইহার প্রতিও শিক্ষকের সজাগ ও স্বতীক্ষ দৃষ্টি থাকা প্রয়োজন। শিশুকে স্বতঃই খেলায় প্রবৃত্ত হইতে দেখা যায়। কিন্তু তাহার এই ক্রীড়াশক্তি অনেক সময় পাঠ্যবিষয় হইতে তাহার মনোযোগ বিক্ষিপ্ত করিয়া দেয় এবং পাঠের বিস্ত্র জন্মায়। এই কারণে অনেক সময় শিক্ষক শিশুর এই স্বাভাবিক ক্রীড়-পৃহাকে দমন করিতে প্রয়াস পান। কিন্তু তাহার এই কাৰ্য্য কতদূর যুক্তিসঙ্গত সে-বিষয়ে বিবেচনা করিয়া দেপা আবশ্যক । এই সহজ-বৃত্তিটিকে বিনষ্ট না করিয়া উহাকে শিক্ষাকাৰ্য্যে উপযুক্তরূপে নিয়োগ করিতে পারিলে যে অধিক স্বফল দর্শিত হয় তাহফ্রোএবেল প্রভৃতি শিক্ষাতত্ত্ববিশারদগণ সপ্রমাণ করিয়া গিয়াছেন । খেল-সম্বন্ধে নানাপ্রকার মত আছে । এ-সম্বন্ধে কয়েকটি বিশিষ্ট লোকের মত উল্লেখযোগ্য। শিলার ও স্পেনসার-এর মতে শক্তির আধিক্যবশতই (surplus energy ) শিশুর ক্রীড়ায় প্রবৃত্ত হয়। ইহার বলেন, খেলার দ্বারা আমাদের অতিরিক্ত ও অত্যধিক শক্তি ব্যয়িত হইয়া যায়। এই মত আংশিকভাবে সত্য হইলেও সম্পূর্ণ সত্য বলিয়া মনে হয় না। শিশু যখন প্রথম খেলিতে শিখে তখন তাহার সেই খেলায় অঙ্গপ্রত্যঙ্গচালনা দ্বারা তাহার অপরিমিত শক্তির ব্যয় ছাড়া আর কোন উদ্দেশ্যই লক্ষিত হয় না। কিন্তু তাহার পরবর্তী জীবনের খেলায় যে প্রকারভেদ দেখা যায় তাহাতে এই মত অভ্রান্ত বলিয়া মনে হয় না। বয়োবৃদ্ধিক্রমে শিশুর দৈহিক ও মানসিক শক্তির ক্রমোন্মেষের সঙ্গে সঙ্গে তাহার খেলারও পরিবর্তন হইতে দেখা যায়। বিভিন্ন জাতীয় ইতর জন্তুশিশুদিগের ও বিভিন্নবয়স্ক মানবশিশুদিগের বিভিন্ন প্রকারের খেলায় অনুরাগ দৃষ্ট হয়। যদি শক্তির প্রাচুর্য্যই শিশুদিগের খেলার একমাত্র কারণ হয়, তাহা হুইলে এইরূপ হুইবার কথা নয় এবং শিশুরা ক্লান্ত ও অনুস্থ হইয়া পড়িলেই তাহাদের আর ক্রীড়াপৃহা না থাকিবার কথা। কিন্তু অত্যধিক শক্তি না থাকিলেও শিশুকে সময়ে সময়ে খেলা করিতে দেখা যায়। ক্লান্ত ও অন্ধস্থ শিশুকেও এমন কতকগুলি খেলায় প্রবৃত্ত