পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সন্ধি ঐযতীন্দ্রমোহন সিংহ 소려 ee কিশোরের কথা > আমরা পাচটি ছেলে কৃষ্ণনগরের এক হাই স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়িতাম—শঙ্কর, বিনয়, বিভূতি, কান্তি ও আমি । আমাদের এই কয় জনের মধ্যে খুব মেলামেশা চলিত । শঙ্কর বয়সে সকলের বড় ছিল। সে দেখিতে স্বপুরুষ, লেখাপড়ায় ক্লাসে সৰ্ব্বপ্রথম এবং ব্যবহারে খুব তেজস্বী ছিল। ক্লাসের অনেক ছেলে সহজেই তাহার প্রতি আকৃষ্ট হইত, এবং তাহার সঙ্গে বন্ধুত্ব করিবার জন্য লালায়িত হইত। বিভূতি ও কান্তি প্রায়ই তাহার সঙ্গে সঙ্গে থাকিত—তাহারা ক্লাসে এক জায়গায় বসিত, ছুটির পর একসঙ্গে বেড়াইত, অন্য সময়েও পরস্পর মিলিত হইত। আমি বয়সে তাহাদের সকলের ছোট ছিলাম। আমিও তাহাঁদের সঙ্গে মিশিতে চেষ্টা করিতাম, কিন্তু তাহারা আমাকে কাছে ঘেঁসিতে দিত না। আমি দূর হইতে শঙ্করের একজন নীরব উপাসক ছিলাম। ভাল ছেলে বলিয়া শঙ্করের বিলক্ষণ গৰ্ব্ব ছিল। সে সময়-সময় ঔদ্ধত্য প্রকাশ করিত, কিন্তু তাহার দলের ছেলেরা তাহা সাদরে সহ করিত। তাহাদের “আপোজিশন বেঞ্চের ? ( বিরুদ্ধ দলের ) নেতা ছিল বিনয় । সে পড়াশুনায় তত দূর মনোযোগী ছিল না। কিন্তু ক্রিকেট, ফুটবল প্রভৃতি খেলাধুলায় সে খুব পটু ছিল। বিনয় শঙ্করের ঔদ্ধত্য সহ কৃরিতে পারিত না। সে জন্য তাহাদের মধ্যে সময়-সময় ঝগড়া হইত। আমি মনে মনে শঙ্করের প্রতি অনুরক্ত হইলেও প্রকাশে তাহার সঙ্গে মিশিতে পারিতাম না, বিনয়ের ঠাট্টার ভয়ে । পড়াশুনায় আমি মন্দ ছিলাম না, পরীক্ষায় প্রায়ই আমার স্থান হইত শঙ্করের অব্যবহিত পরে। সে জন্ত বিনয় আমাকে শঙ্করের প্রতিদ্বম্বিক্ষপে খাড়া করিয়া শঙ্করকে জবা করিতে চেষ্টা করিত, এবং আমি তাহাতে নিতান্ত লজ্জা বোধ করিতাম । বিনয় অঙ্কে বড় কাচা ছিল, সে অনেক সময় আমার নিকট অঙ্ক বুঝিয়া লইত, ক্লাসের অন্য কোন কোন ছেলেও আমার নিকট অঙ্ক কষিতে আসিত, ইহাতে আবার শঙ্কর আমার প্রতি ঈর্ষান্বিত ছিল । তাহার আর একটি কারণ, শিক্ষকের বোধ হয় আমার বিনম্ন-নম্র ব্যবহারে আমাকেই বেশী ভালবাসিতেন। এই প্রকার বিরুদ্ধভাবের মধ্য দিয়া শঙ্কর ও আমি কিরূপে বাল্য প্রণয়ের বন্ধনে দৃঢ় বদ্ধ হইয়াছিলাম, তাহার ইতিহাস এখানে কিছু বলিতেছি। কারণ, পরবর্তী জীবনেও আমাদের এই প্রণয়ের গ্রন্থি আর একটি স্বত্রের সহিত মিলিত হইয়া একটা কঠিন জটিলতার স্বষ্টি করিয়াছিল। একদিন সন্ধ্যার প্রাকৃকালে আমি নদীতীরে বেড়াইতে গিয়া একটি বটগাছের তলে বসিয়া স্বৰ্য্যাস্তের শোভা দেখিতেছিলাম। স্বৰ্য্য উজ্জল রক্তবর্ণ ধারণ করিয়া পাটে বসিতেছিলেন । সেই রক্তবর্ণ আদিগন্তবিস্তৃত শস্তক্ষেত্রে পতিত হওয়ায় তাহার শু্যামলত স্নিগ্ধ হইয়াছিল। এই সময়ে আমার পশ্চাৎ হইতে কে গাহিয়া উঠিল— “যমুনা পুলিনে বসি কাদে রাধা বিনোদিনী ।” আমি দৃষ্টি ফিরাইয় দেখিলাম শঙ্কর আসিতেছে- তাহার সঙ্গে কান্তি, বিভূতি ও অমিয়। কান্তি আমার সম্মুখে আসিয়া তাহার দুই হাত ঘুরাইতে ঘুরাইতে আবার ঐ গানের পদটি গাহিল। আমি তাহার কাও দেখিয় একটু হাসিলাম। তখন কান্তি আমাকে সম্বোধন করিয়া বলিল— ‘ওগো রাধাবিনোদিনী—ওগো রাই কিশোরী, এখানে একলাটি বসে কি ভাবছ ? বিভূতি বলিল, "রাইকিশোরী আর কি ভাববে,— শু্যামের ভাবনা ’ এই বলিয়া সে ও আর সকলে সেখানে বসিল । আমি বলিলাম, ৰাখে স্বৰ্য কেমন লাল হয়ে অন্ত বাচ্ছে।