পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শ্রাবণ সন্ধি 826. আমাকে চুপ করিয়া থাকিতে দেখিয়া বিনয়ের বোধ হয় একটু দয়া হইল। সে বইখানা আমার হাতে ফিরাইয়া দিয়া বলিল, যা এখন বাড়ি যা ;–খুব পড়বি, এই হাফ ইয়ালি পরীক্ষান্ন ফাষ্ট হওয়া চাই। তুই শঙ্করের চেয়ে কম কিসে? তিনি কেবল মুখস্থর জোরে দু-চার নম্বর বেশী পেয়ে ধরাকে সর। জ্ঞান করেন। আমি আর সেখানে ন৷ দাড়াইয়া বাড়ি ফিরিলাম। বাড়ি ফিরিতে ফিরিতে ভাবিতে লাগিলাম,—শঙ্কর আমার কে ? আমি তাহার নিকট এরূপ লাঞ্ছন৷ সহ করিলাম কেন ? আবার তাহার জন্য বিনয়ের নিকটই বা এরূপ বিদ্রুপ সহ্য করিলাম কেন ? আমি তাহাকে ভালবাসি, কিন্তু সে ত আমাকে দেখিতে পারে না। আমি মনে মনে প্রতিজ্ঞ করিলাম, আমি আর শঙ্করের সঙ্গে মিশিতে যাইব না। কিন্তু ইহার পরে যে ঘটনা ঘটিল তাহাতে আমার সে প্রতিজ্ঞ কোথায় উড়িয়া গেল । ס\ গোয়াড়ী বাজারের দোকানদারদিগের প্রতিবৎসর একটা বারোয়ারী পূজা হয়, এবং তদুপলক্ষ্যে কলিকাতা হইতে ভাল যাত্রার দল আনা হয় । সেই যাত্রী-গানের আসরে লোকের অত্যন্ত ভিড় হয়, বিশেষতঃ স্কুল-কলেজের ছাত্রদের । সেবার যাত্রী-গানের প্রথম দিন আসরে সামনে বসা লইয়৷ কতকগুলি ছেলে অত্যন্ত গোলমাল করিল। সেজন্য বারোয়ারীর কর্তৃপক্ষ শান্তিরক্ষার জন্য কয়েক জন বড় বড় ছাত্রকে. ভলানটিার নিযুক্ত করিলেন। কিন্তু তাহাতে ফল হইল বিপরীত। আমাদের ক্লাসের বিনয় একজন ভলানটিয়ার হইল। সে শঙ্করের দলের উপর চটা ছিল। শঙ্করের দল তাহাকে ভলানটিয়ার হইতে দেখিয় তাহাকে জবা করিবার অভিপ্ৰায়ে তাহার নিষেধ না শুনিয়া যখন সামনের জায়গা দখল করিতে চেষ্টা করিল তখন একটা মারামারির উপক্রম হইল। বারোয়ারীর সেক্রেটারী হাজারী বাবু অনেক অমুনমুবিনয় করিয়াও তাহাদিগকে থামাইতে পারিলেন না। তখন তিনি পুলিসে খবর দিলেন। খবর পাইয়া থানা হইতে কয়েক জন কনেষ্টবল আসিল । পুলিসের ভয়ে শঙ্কর, কাস্তি প্রভূতি কয়েক জন ছাত্র বাহির হইয়া গেল, কিন্তু তাহারা একেবারে নিরস্ত হইল না। এক ঘণ্টা পরে গান যখন জমিয়া উঠিয়াছে, সেনাপতি ইন্দ্ৰদমন যখন হংসকেতু রাজাকে বনে পাঠাইবার জন্য ছোটরাণী চন্দ্রাবতীর সঙ্গে মন্ত্রণা করিতেছেন,-ঠিক এই সময়ে টুপ করিয়া একটা ঢিল আসিয়া একটা বেলোয়ারি ঝাড়ের উপর পড়িল। দেখিতে দেখিতে আরও দুই তিনটি টিল আসিয় পড়ায় একটা গোলমালের স্বষ্টি হইল। তথন কনেষ্টবলের সেই অনিষ্টকারীদিগকে ধরিবার চেষ্টা করিল। প্রকৃত দোষী .যাহারা তাহার চম্পট দিল—ধরা পড়িল শঙ্কর, সত্যচরণ, অমিয়। অবশ্য তাহারাও সেই অনিষ্টকারীদের দলভূক্ত ছিল, কিন্তু বাস্তবিক পক্ষে তাহারা ঢিল ছোড়ে নাই। হাজারী বাবু তখন কনেষ্টবলদিগের সাহায্যে তাহাদিগকে থানায় লইয়া চলিলেন, কারণ ঢ়িল লাগিয়া কয়েকটা মূল্যবান ঝাড় ভাঙিয়া গিয়াছিল এবং এই গুরুতর ক্ষতি অম্লান বদনে সহ করা সম্ভবপর ছিল না। আমি একটু দূরে দাড়াইয়৷ এই সকল ঘটনা দেখিতেছিলাম । হাজারী বাবুর বাড়ি আমাদের বাড়ির পাশে, তিনি আসিতেন এবং আমি র্তাহাকে দাদা বলিয়া ডাকিতাম। তিনি যখন থানায় যাইতেছিলেন, আমি অগ্রসর হইয়া চুপে চুপে র্তাহাকে বলিলাম—‘দাদা, আমার একটা কথা গুমুন। হাজারী বাবু বলিলেন -কি বলবি বল, তুইও এ-দলে আছিস না কি ? আমি বলিলাম—“আপনি কি মনে করেন ? তিনি হাসিয়া বলিলেন,—“তোকে ত আমি বরাবরই ভাল বলে জানি, কি বলতে চাস বল । আমি শঙ্করকে দেখাইয়া বলিলাম,--“আপনি ঐ ছেলেটিকে চেনেন ? তিনি বলিলেন—‘না—ওকে চিনি না, তবে ওকে এই দলের নেতা বলেই মনে হয় । আমি বলিলাম—‘ওর চেহারাটা সেই রকমই বটে, কিন্তু ওর স্বভাব অতি চমৎকার। ওর নাম শঙ্কর, মুনসেফ, বাবুর ছেলে । আমি নিশ্চম জানি শঙ্কর এইরূপ দুষ্কাৰ্য্য কখনই করিতে পারে না। ওকে কনেষ্টবল ভুল করে ধরেছে। দাদা, আপনি ওকে ছেড়ে দিন।' হাজারী বাৰু নরম হইয়া বলিলেন—মুনসেফ বাবুর ছেলে