পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শ্ৰাবণ সন্ধি 8>ፃ আমি যে সময় পাইতাম তাহ বৃথা নষ্ট না করিয়া ইংরেজী বাংলা অনেক কাব্য উপন্যাস পড়িতে আরম্ভ করিলাম। কেবল পড়িয়া তৃপ্তি হইল না—কিছু কিছু লিথিতেও আরম্ভ করিলাম। প্রথমে দুই তিনটি ছোট গল্প লিখিলাম। তাহার একটি অতি সঙ্কোচের সহিত বৈজয়ন্তী পত্রিকার সম্পাদকের নিকট পাঠাইয়া দিলাম। কিছুদিন পরে সম্পাদক মহাশয় উহা ধন্যবাদের সহিত ফেরত না পাঠাইয় তাহা পাঠানর জন্ত আমাকে ধন্যবাদ দিয়া চিঠি লিখিলেন এবং সেরূপ আরও লেখা পাঠাইবার জন্য আমাকে অনুরোধ করিলেন। আমার সে-গল্পটি যেদিন বৈজয়ন্তী পত্রিকায় বাহির হইল সেদিন আমার আহলাদ দেখে কে ! আমি উৎসাহ পাইয়। আরও কয়েকটি গল্প লিখিলাম এবং তাহা ছাপা হইল। ইহার পর "ভারতপ্রভা’ পত্রিকায় নারীপ্রগতি সম্বন্ধে একটি প্রবন্ধ দেখিয়া আমিও সেই সম্বন্ধে আলোচনা আরম্ভ করিলাম। আমি ডাক্তারা পুস্তকে স্ত্রী ও পুরুষের শারীর তত্ত্ব সম্বন্ধে অনেক অধ্যয়ন করিয়াছিলাম। আমার সেই বিদ্যা খাটাইবার এই উপযুক্ত অবসর বুঝিয়া আমি নারী-প্রগতি সম্বন্ধে দুই একটি প্রবন্ধ লিথিয়া পাঠাইলাম। এইরূপে আমি একজন ক্ষুদ্র সাহিত্যিক হইয়া উঠিলাম। পটলডাঙা রামজয় বক্স লেনের মেসে আমি যেদিন উঠিয়া আসিলাম তাহার পরদিন সকালে বেল প্রায় দশটার সময় লেন কলেজের মেয়েদের গাড়ী আমাদের গলিতে আসিল এবং একটি পরমাসুন্দরী তরুণী পাশের এক গলি হইতে হাটিয়া আসিয়া সেই গাড়ীতে উঠিল। আমি আমার দোতলার ঘরে বসিয়৷ এই রমণীয় দৃশু যখন দেখিলাম তখন এক ঝলক বিজলীশিখা যেন আমার অস্তস্তলে প্রবেশ করিয়া একটি আলোকের রেখা আঁকিয়া দিয়া গেল। তাহার পরদিন ঠিক এই সময়ে, আবার তাহার পরদিনও ঠিক এই সময়ে—এইরূপে প্রত্যহ সেই বিদ্যুৎশিখার দীপ্তি আমার চিত্ত আলোকিত করিতে লাগিল। আমি প্রত্যহ উহা দেখিবার লোভে আমার ঘরে বসিয়া থাকিতাম— অবশ্য যেদিন স্কুলের ছুটি থাকিত সেদিন ঐ গাড়ী আসিত না, আমি সেদিনটা আমার পক্ষে নিতান্ত বৃথা গেল মনে করিতাম। এইরূপে ছয় মাস কাটিল। একদিন প্রভাতে আমি কাহার মুখ দেখিয়া উঠিয়াছিলাম বলিতে পারি না। সেদিন আমার ভাগ্যে এত আহলাদ, అళి= এত সুখ সঞ্চিত ছিল। আমি বৈকালে ৩টার সময় কলেজ হইতে ফিরিতেছি, আমার বাসার সম্মুখে আসিলে ‘কে কিশোর না কি রে’ বলিতে বলিতে একটি যুবক পেছন হইতে আসিয়া আমার হাত ধরিল। আমি মুখ ফিরাইয় দেখি–এ যে আমার বহুদিনের হারানো প্রিয়তম বন্ধু শঙ্কর । আমি এত কাল পরে হঠাৎ তাহাকে দেখিয়া হর্ষভরে জড়াইয়া ধরিলাম। সে আমাকে গাঢ় আলিঙ্গনে আবদ্ধ করিয়া বলিল,- “তুই এখানে ? কষ্ট আগে ত তোকে কোন দিন কলকাতায় দেখিনি ? আমি বলিলা.- ‘আমি ত অনেকদিন কলকাতায় আছি, মেডিক্যাল কলেজে পড়ছি। এই মেসে থাকি। তুমি কোথায় থাক, কি কর শঙ্কর-দা? শঙ্কর বলিল—“আমি ত আমাদের নিজ বাড়িতেই থাকি, ভবানীপুরে ; সব ভুলে গিয়েছিস দেখছি । আমার বাবা সবজজ হয়েছিলেন, রিটায়ার করে এখন বাড়িতেই আছেন। আমি ‘ল পড়ছি। আমার বোন প্রমীলাকে মনে পড়ে ? আমি বলিলাম—ই্য, পড়ে বইকি। তাকে ছোট দেখেছিলাম, এখন কত বড় হয়েছে।’ ‘তাকে যদি দেগবি তবে আমার সঙ্গে আয় । তোঁদের গলির পাশের ঐ গলিতে সম্প্রতি তার বিয়ে হয়েছে । আমি সেখানেই যাচ্ছি —আর দেরি করিস নে ৷” "একটু দাড়াও শঙ্কর-দ, আমার এই কাপড়টা বদলে আসি । রাস্তায় দাড়াবে কেন, এস আমার ঘরে এক মিনিট বসে যাবে। এই বলিয়া শঙ্করকে হাত ধরিয়া টানিতে টানিতে আমার ঘরে লইয়া আসিলাম। আমি আমার বাক্স হইতে ধোয় ধুতি পাঞ্জাবী বাহির করিয়া তাহা পরিতে পরিতে বলিলাম--"এক কাপ চ থাবে শঙ্কর-দা ? শঙ্কর বলিল—‘নারে না। আমি চ খেয়ে বেরিয়েছি, আবার সেখানে গিয়েও ত কিছু খেতে হবে। এই বলিয়া উঠিয়া পড়িল। আমরা হাত ধরাধরি করিয়া চলিলাম। অল্প দূর গিয়াই একটা বাড়ির মধ্যে ঢুকিয়া শঙ্কর হাকিল—‘স্বকুমার। তখন একটি স্বদর্শন যুবক বাহির হুইয়া আসিয়া আমাদিগকে দেখিয়া বলিল—‘ইনি কে ? শঙ্কর বলিল—‘এটি আমার হারাণে মাণিক ।