পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

في اوج8 যুবকটি কিছু বুঝিতে না পারিয়া আমাদিগকে লইয়। যেই একটি ঘরে ঢুকিবে, অমনি চকিত হরিণীর ন্তায় একটি তরুণী সে-ঘর হইতে বাহির হইয়া গেলেন। আমি দেখিয়া আশ্চৰ্য্য হইলাম, ইনি আমার সেই চিরপরিচিত। বেথুনের ছাত্রী বিদ্যুংশিখা। স্বকুমার শঙ্করের ভগিনীপতি, ইনি কুকুমারের ভগিনী, নাম নীহারিক । fઃકોઃ સજીક নীহারিকার কথা S আমি আই-এ পাস করিয়া বেথুন কলেজে বি-এ পড়িতেছি, এবার আমার থার্ড ইয়ার। বাড়িতে থাকিয়াই পড়ি । বাড়িতে আমার মা আর বড় ভাই থাকেন। আমার বাবা কলেজের একজন খ্যাতনাম অধ্যাপক ছিলেন, দুই বংসর হইল স্বর্গে গমন করিয়াছেন। র্তাহার উদ্যোগে আমি লেখাপড়ায় এতদূর অগ্রসর হইয়াছি। দাদা স্বকুমার আমার দুই বৎসরের বড়, কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে এম.এ ক্লাসে পড়ে। আমি তাহাকে মান্ত করিয়া কোনদিন ডাকিতে পারিলাম না, তুমি বলিয়াই সম্বোধন করি। সেও আমাকে নানাপ্রকার মিষ্ট সম্বোধন করে। আমি হিন্দুর মেয়ে, সুতরাং ম। আমাকে যত শীঘ্ৰ পারেন বাড়ি হইতে বিদায় করিয়৷ দেওয়ার জন্য চেষ্টা করিতেছেন। বাবা বাচিয়া থাকিতে তাহার জন্ত পারেন নাই। এখন দাদাও বলিতে আরম্ভ করিয়াছে -“পোড়ার মুখী, তুষ্ট দূর হ--তুই যে বি-এ পাস করে আমার সমান হয়ে দাড়াবি, আমি তা সহ করতে পারব না। কিন্তু আমার প্রতিজ্ঞ, আমি কিছুতেই বিবাহ করিব না। বিবাহ মানে ত একজন পুরুষের পায় দাসথত লিথিয় দেওয়া । সে কি সোজা দাসখত চিরজীবনের জন্য স্লেভারি (দাসত্ব ) । আমার এই জীবনের সামান্ত অভিজ্ঞতা হইতেই তাহা হাড়ে হাড়ে বুঝিয়াছি। আমাদের বাড়ি কলিকাতা পটলডাঙার একটা অপেক্ষাকৃত নির্জন পল্লীতে অবস্থিত, গাড়ী-ঘোড়ার গোলমাল বড় নাই। কিন্তু গভীর নিশীথে প্রায়ই আমার নিদ্রাভঙ্গ হয়, দুইটি কারণে। আমাদের বাড়ির একপাশে এক ঘর ধোপা আছে, সেই ধোপার একটা গাধা রাত্রির প্রহরে প্রহরে বিকট চীৎকার

প্রবাসী ও

S)నOBO করে। আর আমাদের বাড়ির প্রায় সম্মুখের দিকে পরাণবাবু নামক এক বৃদ্ধ বাস করেন, তিনি পঞ্চাশ বৎসর বয়স অতিক্রম করার পরে শাস্ত্রানুসারে বনগমন না করিয়া পুত্রহীনতার অছিলায় এক পঞ্চদশী বালিকাকে সেই শাস্ত্রের দোহাই দিয়া তথাকথিত বিবাহুরূপ শৃঙ্খলে আবদ্ধ করিয়া গৃহে আনিয়া রাখিয়াছেন। প্রায় প্রতিদিনই রাত্রে ঐ বৃদ্ধ নেশা করিয়া সেক্ট মেয়েটিকে নির্দয়রপে প্রহার করেন, এবং তাহার রোদনশব্দে আমার ঘুম ভাঙিয়া যায়। আমি প্রায়ই শুইয় শুইয়া এই হতভাগিনীর দুরদৃষ্টের বিষয় চিন্তা করি। তাহার নাম মালিনী, দেখিতে বেশ সুন্দরী, এখন আমার প্রায় সমান বয়সী, ছাদের উপর হইতে আমার সঙ্গে কথা কয়। কিন্তু বড়ই আশ্চৰ্য্য, সে তাহার স্বামীর বিরুদ্ধে কোন দিনই একটা কথা বলে নাই—যে রাত্রে এত কঁাদে, দিনের বেলায় তাহার কথাবাৰ্ত্তায় বোধ হয় সে যেন কত স্বর্থী। আমি তাহার এই শ্লেভ মেণ্টালিটি (দাসীর ন্যায় মনোভাব ) দেখিয়া অবাক হই। ইহাই ত হিন্দুর বিবাহ—ইহাতে মানুষের মনুষ্যত্ব থাকে না, মানুষের স্বাধীনতা লোপ করিয়া তাহাকে পিঞ্জরাবদ্ধ পার্থী অথবা লৌহকারাগারে আবদ্ধ পশুর ন্যায় করিয়া রাখে। অন্য জাতির মধ্যে এই দাসত্বগুস্থল ছেদনের উপায় আছে, কিন্তু পোড়া হিন্দুসমাজে যে এক দিনের জন্য বন্দী, সে চিরজীবনের জন্য বন্দী হয়। স্ত্রীজাতির উপর সমাজের এই ঘোর অত্যাচারের কথা আমি যখনই চিন্তা করি, তখনই আমার মন বিদ্রোহী হইয় উঠে। ইহা লইয়া দাদার সঙ্গে আমার কত তর্ক, কত ঝগড়া হয়। সেজন্য দাদা আমার নাম দিয়াছে ম্যামেজন অর্থাৎ রণরঙ্গিণী । আমাদের ভাগ্যনিয়ন্ত পুরুষজাতির প্রতি আমার বিদ্বেষের আরও অনেক কারণ আছে। স্ত্রী ও পুরুষের মধ্যে কি খাদ্যখাদক সম্বন্ধ ? বিধাতা বনের বাঘকে যেমন নরমাংসলোলুপ করিয়া স্থষ্টি করিয়াছেন, স্ত্রীজাতি কি সেইরূপ পুরুষজাতির ভোগ্য হইবার অভিপ্রায়ে স্বস্ট হইয়াছে ? আমাদের তথাকথিত শিক্ষিত যুবকদিগের ভাবভঙ্গী দেখিম যেন তাহাই বোধ হয়। আমাদের কলেজের গাড়ী কলেজের গেটের সম্মুখে ফুটপাথের কাছে আসে আর আমরা গাড়ী হইতে বাহির হইয়া পড়ি। তখন সেই ফুটপাথের উপর আমাদিগকে দেখিবার জন্ত কত তৃষিত চক্ষু একদৃষ্টি তাকাইয়া থাকে। বলিতে লজ্জা হয়, o