পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শ্রাবণ পল্লী-সংস্কার ও শিল্প-প্রতিষ্ঠা ●●2 দেখাইয় দিতে পারান। যাইবে, ততক্ষণ তাহাদিগের মন হইতে অসন্তোষ দূর করা যাইবে না। বাংলার গবর্ণর স্তর জন এগুসনই স্বীকার করিয়াছেন – ( ১ ) যেরূপ মনোভাব লোককে সন্ত্রাসবাদী করে, শিক্ষিত সম্প্রদায়ের মধ্যে কাজের অভাব সেক্টরূপ মনোভাবের মৃষ্টি করে, এবং (২) স্বল্পব্যয়সাধ্য শিল্প প্রতিষ্ঠার দ্বারা লোকের অন্নার্জনের উপায় করিয়া দিলে লোক তাহাতেই ব্যাপৃত থাকিতে পারে। সেই জন্য অর্থাৎ বাংলার ভদ্র সম্প্রদায়ের বেকাররা যাহাতে সন্ত্রাস-বা বিভীষিকাবাদে বিরত হয় সেই চেষ্টায় বাংলা সরকার সম্প্রতি কতকগুলি শিল্প লোককে শিক্ষা দিবার ব্যবস্থা করিয়াছেন। দেশের আর্থিক উন্নতিসাধন যদি এই ব্যবস্থার পরোক্ষ উদ্দেশ্য ন হইয়া প্রত্যক্ষ উদ্দেশ্য হুইত, তবে আমরা বিশেষ আনন্দিত হইতাম। কারণ তাহা হইলে সরকার এই ব্যবস্থার জন্য অধিক অর্থব্যয় করিতে প্রস্তুত হইতেন। বর্তমানে ইহার জন্য যে অর্থব্যয় করা হইবে স্থির হইয়াছে তাহ কাৰ্ঘ্যের গুরুত্ব ও ব্যাপকতার তুলনায় যথেষ্ট বলিয়। কখনই বিবেচিত হইতে পারে না। তবে আশা করা যাইতে পারে, এই কাজ দেশের লোকে আরম্ভ করিতে পারেন । কতকগুলি শিল্পে উন্নত পদ্ধতির প্রবর্তন যে সরকারের কারখানায় উদ্ভাবিত ও পরীক্ষিত হইতেছিল, তাহা এখন জানা গিয়াছে। শিল্প-বিভাগের বাঙালী ইঞ্জিনিয়ার শ্ৰীযুক্ত সতীশচন্দ্র মিত্র এজন্য প্রশংসাভাজন । তাহার সর্বপ্রধান কারণ তিনি যখন বাংলার বিবিধ উটজ শিল্পে উন্নত পদ্ধতি প্ৰবৰ্ত্তন করিয়া উৎপন্ন পণ্যের মূল্য হ্রাসের চেষ্টায় পরীক্ষা করিতেছিলেন, তখন বাংলা সরকার বেকার সমস্তার সহিত বিভীষিকাবাদের সম্বন্ধ সন্দেহ করেন নাই এবং অদূর ভবিষ্যতে ধে সরকার লোককে শিল্পশিক্ষা প্রদানের ব্যবস্থা করিবেন ইহাও মনে করিবার কোন কারণ ছিল না। পরন্তু অন্যান্ত প্রদেশের তুলনায়ও বঙ্গদেশে শিল্প সম্বন্ধে সরকারের চেষ্ট অযথারূপ অল্প ছিল। দেখা গিয়াছে বাংলা সরকার ইওষ্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ার নিযুক্ত করিলেও কয় বৎসর তাহার পরীক্ষার জন্য কারখানার কোন ব্যবস্থা করেন নাই। অর্থাৎ তাহারা চাবুক চিনিয়াছিলেন বটে, কিন্তু ঘোড়া চিনিবার প্রয়োজন অনুভব করেন موا-----3 و নাই। এমন কি, অন্তান্ত প্রদেশে শিল্পে সরকারের সাহায্য প্রদানের জন্য আইন প্রণীত হইলেও বঙ্গদেশে বহুদিন তাহা হয় নাই। এখনও সে আইনের বিধান অনুসারে কোন কাজ হইতেছে না। অথচ মাদ্রাজে সরকারের শিল্প-বিভাগ কতকগুলি শিল্প প্রতিষ্ঠিত করিয়া সেগুলির পরিচালন জন্ত, যে-সব কলকারখানা স্থাপিত হইয়াছিল সে-সব লোকের নিকট বিক্রয় করিয়া প্রজাসাধারণের সহিত প্রতিযোগিতায় বিরত হইয়াছেন । আমরা পূৰ্ব্বে আয়ালণ্ডে স্তর হোরেস প্ল্যাংকেট প্রমুখ ব্যক্তিদিগের কৃতকার্য্যের উল্লেখ করিয়াছি। তাহাদিগের কাধ্যের সাফল্যের যে কারণ ছিল এ-দেশেও সেই কারণ বিদ্যমান । এ-দেশও তৎকালীন আয়ালণ্ডের মত ইংরেজের অধীন— এদেশেও সেদেশের মত সরকারের অনুস্থত নীতির ফলে বহু শিল্প নষ্ট হইয়াছে--এ-দেশেও সে-দেশের মত সরকার দেশের শিল্পের উন্নতির জন্য কোন উল্লেখযোগ্য চেষ্টা করেন নাই । কিন্তু এ-দেশে স্তর হোরেসের মত নেতার আবির্ভাব হয় নাই—- জাতির জন্মগত অধিকার লাভপ্রচেষ্ট নেতার রাজনীতিক আন্দোলনে মন দিয়াছেন, কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে অর্থনীতিক উন্নতির প্রতি সক্রিয় মনোযোগ প্রদান করেন নাই। সত্য বটে কোন কোন রাজনীতিক নেতা নিত্যব্যবহার্ষ্য দ্রব্য সম্বন্ধে জাতির পরবগুতার বিপদের উল্লেখ করিয়াছিলেন, পরলোকগত গোপালকৃষ্ণ গোখলে কংগ্রেসের সভাপতির অভিভাষণে ইহার উল্লেখ করিয়াছিলেন এবং স্থানে স্থানে কংগ্রেসের সহিত স্বদেশী শিল্পপ্রদর্শনী প্রতিষ্ঠিত হইয়াছিল, কিন্তু ধারাবাহিক ভাবে কাৰ্য্য পরিচালিত হয় নাই । সেরূপ কাজ সরকার কখনই করেন নাই । স্তর জর্জ বার্ডউড, ডাক্তার ওয়াট প্রভৃতি কোন কোন ইংরেজ রাজকৰ্ম্মচারী ভারতীয় শিল্পের গুণে আকৃষ্ট ছিলেন বটে, কিন্তু লর্ড কার্জনের মত বড়লাটও ভারতীয় শিল্পের উন্নতির কোন স্থায়ী ব্যবস্থা করিতে পারেন নাই। লর্ড কার্জন ১৯০২ খৃষ্টাব্দে দিল্লীতে দরবারের অঙ্গ হিসাবে যে শিল্পপ্রদর্শনী প্রতিষ্ঠিত করিয়াছিলেন তাহ উপলক্ষ্য করিয়া তিনি বলিয়াছিলেন বিদেশী ক্রেতাদিগের অনুগ্রহুে কোন দেশের উটজ শিল্প স্থায়িত্ব লাভ করিতে পারে না—তাহা যদি দেশের লোকের ভাবের সহিত সামঞ্জস্ত রক্ষা করিয়া দেশের লোকের প্রয়োজন সিদ্ধ