পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

و a 6 করিতে পারে, তবেই তাহা প্রতিযোগিতায় আত্মরক্ষা করিতে পারে, নহিলে নহে। তাহ স্মরণ রাখিয়া —এখনও ভারতের নানা স্থানে--নগরে ও গ্রামে বহু শিল্পী ভারতীয় শিল্পের বৈশিষ্ট্য রক্ষা করিয়৷ দেশের লোকের প্রয়োজনীয় সুন্দর জেন্দর পণ্য উৎপাদন করিতে পারে, তাহাই দেখাইবার জন্য তিনি প্রদর্শনীর কল্পনা করিয়াছিলেন। লর্ড কার্জন এ-দেশে যে-সব উটজ শিল্পের উন্নতির জন্য বিশেষ আগ্রহ প্রকাশ করিয়াছিলেন, সেই সকলই দেশের রাজনীতিক নেতৃগণের মনোযোগ আক্লষ্ট করে নাই । তাহারা ইউরোপের অমুকরণে এদেশে বড় বড় কলকারখানার প্রতিষ্ঠা কল্পনা করিয়াছিলেন, সেজন্য সরকারকে শিল্পসংরক্ষণনীতি অবলম্বন করিতে বলিয়াছিলেন, কিন্তু দেশের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শিল্প র্তাহাদিগের নিকট উপেক্ষিত হইয়াছিল। র্তাহারা এদেশে কাপড়ের কল প্রতিষ্ঠার দ্বারা বিদেশী কাপড়ের আমদানি বন্ধ করিবার জন্য আন্দোলন করিয়াছিলেন, কিন্তু কিসে এদেশের সৰ্ব্বপ্রধান উটজ শিল্প-বয়নশিল্প—উন্নতি লাভ করে সে-বিষয়ে অবহিত হন নাই। তাহার গঠনকাৰ্য্য র্তাহাদিগের কার্য্যপদ্ধতির অন্তভুক্ত করেন নাই। বহুব্যয়সাধ্য বড় বড় কলকারখানার প্রয়োজনে ও উপযোগিতায় কোনরূপ সন্দেহ প্রকাশ না করিয়াও বলা যায়, জাপানের মত এ-দেশেও চেষ্টা করিলে বহু উটজ শিল্প এই যান্ত্রিক যুগেও আত্মরক্ষা করিতে ও বহু লোকের অন্নসংস্থানের উপায় করিতে পারে। সেই সকল শিল্পের সহিত এ-দেশের পল্লীগ্রামের উন্নতি আচ্ছেদ্যভাবে সম্বন্ধ। বঙ্গের অঙ্গচ্ছেদের বিরুদ্ধে যখন আন্দোলন হয়, তখন হাতের তাত চালাইবার চেষ্ট হইয়াছিল, খদ্দর সরবরাহের জন্ত এখনও তাহ হয়। কিন্তু কোন চেষ্টাই যথেষ্ট ব্যাপক হয় নাই। সরকার যদি দেশে ছোট ছোট শিল্প প্রতিষ্ঠার পথপ্রদর্শন করেন, তবে দেশের লোকের পক্ষে সে সুযোগ সাগ্রহে গ্রাহ করা কৰ্ত্তব্য। আমাদিগের অর্থে সরকারের পরীক্ষাগারে—কারখানায় যেসব পরীক্ষা সম্পন্ন হয় সে-সকলের ফল দেখিয়া দেশের লোক যদি সমবায় নীতি গ্রাহ করিয়া শিল্পপ্রতিষ্ঠায় তৎপর হুইতে পারেন তবে বাংলার প্রত্যেক পল্লীগ্রামকে ঐসম্পন্ন করিবার কার্য বহু দূর অগ্রসর হয়। আমরা যে লোককে সমবায় নীতিতে এই কাৰ্য্যভার ং প্রবাসী ; ミ>○8○ গ্রহণ করিতে বলিতেছি, তাহার বিশেষ কারণ এই যে, যত দিন এ-দেশে প্রকৃত স্বাক্ষ্মত্তশাসন প্রবৰ্ত্তিত না হইবে অর্থাৎ যত দিন দেশের লোক আপনাদিগের সরকারের নীতি নিয়ন্ত্রিত করিবার অধিকার লাভ না করিবে, তত দিন সরকারের অবলম্বিত এই নীতি অক্ষুণ্ণ থাকিবে কি-না, সে-বিষয়েও সন্দেহের যথেষ্ট অবকাশ থাকিবে । বিশেষ বৰ্ত্তমান ক্ষেত্রে সরকার সন্ত্রাসবাদের প্রতিকারকল্পেই শিল্পশিক্ষা প্রদানের উপায় অবলম্বন করিয়াছেন। স্বতরাং কোন কারণে এই সন্ত্রাসবাদের অবসান ঘটিলে যে এই কাৰ্য্য ত্যক্ত হইবে না, তাহাই বা কে বলিতে পারে ? জাৰ্ম্মান যুদ্ধের সময় যখন ভারতবর্ষের অসহায় অবস্থা তাহার বিদেশ হইতে নিত্যব্যবহার্য্য দ্রব্যের আমদানি বন্ধে বিশেষভাবে উপলব্ধ হইয়াছিল, তখন বাংলা সরকার স্বদেশী শিল্পজ পণ্যের এক স্থায়ী প্রদর্শনী কলিকাতায় প্রতিষ্ঠিত করিয়াছিলেন। সে প্রদর্শনীর উপযোগিতা কেহই অস্বীকার করেন নাই। কিন্তু জাৰ্ম্মান যুদ্ধের অবসানের পরই সরকার সে প্রদর্শনী বন্ধ করিয়া দিয়াছিলেন। সেই সময় বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক সভায় সরকারের স্বদেশী শিল্পের উন্নতিসাধনের আগ্রহ সম্বন্ধে অনেক কথা শুনা গিয়াছিল বটে, কিন্তু সে আগ্রহে দেশের লোক উপকৃত হয় নাই। বাংলার উটজ শিল্প এক সময়ে বিশেষ উন্নতিলাভ করিয়াছিল। ঢাকা, শান্তিপুর, ফরাসডাঙ্গা, সিমুলিয়, কুষ্ঠিয় প্রভৃতি স্থানের বক্ষনশিল্প সমগ্র ভারতের প্রশংসা অর্জন করিয়াছিল। মেদিনীপুরের মাদুর দিল্লীর বাদশাহরাও সাদরে ব্যবহার করিতেন। মুর্শিদাবাদের গজদন্তের দ্রব্যাদি দিল্লীর ঐরূপ দ্রব্যাদির সহিত প্রতিযোগিতা করিত। খাগড়ার (মুর্শিদাবাদ ) কাসার বাসন অতুলনীয় ছিল বলিলেও অত্যুক্তি হয় না। রংপুরে উৎকৃষ্ট সতরঞ্জি প্রস্তুত হইত। বরিশাল ও যশোহর জেলাদ্বয়ের নানাস্থানে উংকৃষ্ট ছুরি, দা প্রভৃতি প্রস্তুত হইত। মুর্শিদাবাদ, মালদহ, বীরভূম, বাঁকুড়া প্রভৃতি জেলা রেশমী কাপড়ের জন্য বিশেষ প্রসিদ্ধি লাভ করিয়াছিল। চেষ্টা করিলে--পণ্য উৎপাদনের উপায়ে উৎকর্ষ সাধিত হইলে, শিল্পীদিগকে অপেক্ষাকৃত অল্পমূল্যে উপকরণ কিনিবার স্বযোগ দিলে ও তাহাদিগের উৎপন্ন পণ্য বিক্রয়ের স্বব্যবস্থা করিলে—এই সকল শিল্প পুনরায় উন্নতিলাভ করিতে, পারে এবং কালে বহু লোকের আয়ার্জনের উপায় হয়।