পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শ্রাবণ এত দিন বাংলা সরকার এ-বিষয়ে উল্লেখযোগ্য কোন কাজ করেন নাই বলিলেও বলা যায়। এই সরকার বার-বার বাংলার শিল্প সম্বন্ধে অনুসন্ধান করাইয়াছেন বটে, কিন্তু অনুসন্ধানের ফল অনুযায়ী কাজ করা হয় নাই। ১৮৮৮ খৃষ্টাব্দে ভারত-সরকার যে আদেশ প্রচার করেন, তদনুসারে মিষ্টার কলিন বাংলার শিল্প-সম্বন্ধে অনুসন্ধান করিয়া ১৮৯০ খৃষ্টাব্দে র্তাহার বিবরণ দাখিল করেন। দশ বৎসর পরে মিষ্টার কামিং আবার ঐরূপ রিপোর্ট রচনা করেন। তিনিই লিথিয়াছেন— “দুঃখের বিষয় মিষ্টার কলিনের রিপোর্ট কখনও বাহিরে প্রকাশ করা হয় নাই। কেবল রাজকৰ্ম্মচারীরাই ইহা দেখিয়াছিলেন। সেই রিপোর্টে তিনি যে-সব কাজ করিতে বলিয়াছিলেন, সে-সব আজও করণীয় হইলেও লোক তাহার অস্তিত্বই বিস্মৃত হইয়াছে। পাচ বংসর পরে আমি এই রিপোর্ট চাহিলে আমাকে বলা হয়—ইহা প্রকাশ্য নহে ।” যখন সরকারের একজন কৰ্ম্মচারী শিল্প-সম্বন্ধে অনুসন্ধানকার্য্যের জন্য নিযুক্ত হইলেও রিপোর্ট দেখিতে চাহিলে এইরূপ উত্তর লাভ করেন, তখন সেই রিপোর্ট অনুসারে কিরূপ কাজ হুইয়াছিল, তাহ সহজেই অকুমান করিতে পারা যায়। ইহার পর মিষ্টার সোমান আবার এইরূপ অনুসন্ধান করেন। কিন্তু এই-সব অনুসন্ধানের ফলে বাংলার কোন শিল্প কোনরূপ উপকার লাভ করে নাই । কাজেই দেশের লোককে দেশের লোকের আর্থিক অবস্থার উন্নতি সাধনের জন্য এই কাৰ্য্যের ভার গ্রহণ করিতে হইবে। যদি সন্ত্রাসবাদ-ব্যাপ্তি সরকারকে বিত্রত না করিত তবে এবার যে সামান্য আয়োজন হইয়াছে, তাহাও হইত কি-না সন্দেহ। কারণ সন্ত্রাসবাদের সহিত বেকার-সমস্যার সম্বন্ধের বিষয় বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক সভার এক জন বেসরকারী সদস্ত মন্ত্রীকে জানাইবার পূৰ্ব্বে দেশের লোকও জানিত না-নিম্নলিখিত শিল্পগুলি অল্পব্যয়ে উন্নত পদ্ধতিতে পরিচালিত করিবার উপায় সম্বন্ধে বাংলা সরকারের শিল্প-বিভাগ পরীক্ষা করিয়া স্বফল লাভ করিয়াছেন —{ ১ ) পিতল-কাসার বাসন, (২ ) কাপড়-কাচা সাবান, (৩) ছুরি কাচি প্রভৃতি, ( s ) মাটির বাসন প্রভৃতি, ( e ) ধান ছাটাই, (৬) ছাতা ( ৭ ) মোজা ও গেী, (৮) শাখা। প্রত্যেক শিল্পপ্রতিষ্ঠার জন্য পাচ পল্পী-সংস্কার ও শিল্প-প্রতিষ্ঠা 6eళి শত হইতে সাত শত টাকা মূলধন প্রয়োজন। স্বতরাং যেস্থানে এক জনের পক্ষে ইহার কোন একটি শিল্প প্রতিষ্ঠিত করা সাধ্যাতীত, সে-স্থানে দুই বা তিন জন একসঙ্গে তাহা করিতে পারে। বাংলার সর্বত্র পিতল ও কাসার বাসন, কাপড়-কাচা সাবান, ছুরি, কাচি প্রভৃতি, ছাতা, মোজা ও গেী, শাখা সৰ্ব্বদা ব্যবহৃত। পিতল ও কাসার বাসন অপেক্ষ মূল্যে স্থলভ বলিয়াই আজকাল এলুমিনিয়মের বাসনের ব্যবহার বাড়িতেছে, এবং সেই কারণেই বিদেশী আমদানী ছুরি, র্কাচি প্রভৃতির বহুল প্রচার হইতেছে। যদি মফঃস্বলে কেন্দ্রে কেন্দ্রে লোক আপনার গৃহে থাকিয়—পরিবারের, পুণ্য পরিবেষ্টনে এই-সব শিল্প পরিচালিত করিতে পারে, তবে আর তাহাদিগকে গ্রাম ত্যাগ করিয়া যাইতে হয় না। পল্লীবাসীর অল্পসমস্যার সমাধান হইলে তাহাদিগের উদ্যোগে গ্রামের স্বাস্থ্যোন্নতি কাৰ্য্য অনেকটা অগ্রসর হইতে পারে, গ্রামের লোককে বিদ্যাদানের ব্যবস্থাও হইতে পারে। গ্রাম যদি শিক্ষিত অধিবাসীশূন্ত না হয়, তবে রুষির উন্নত পদ্ধতির প্রবর্তনও সহজসাধ্য হয়। গ্রামের উন্নতি নানা অংশে বিভক্ত এবং সে-সবই পরস্পরের সহিত সম্বন্ধ ও পরম্পরের উপর নির্ভর করে। কেবল পল্লীগ্রামে শিল্পপ্রতিষ্ঠাই যে গ্রামের শ্ৰী ফিরাইতে পারে, ইহা মনে করা সঙ্গত নহে। কিন্তু পরস্পরসাপেক্ষ যে-সব উপায়ে গ্রামের শ্ৰী ফিরান সম্ভব, শিল্পপ্রতিষ্ঠা যে সে-সকলের অন্যতম, তাহ অবশুস্বীকার্য্য। স্বপ্রতিষ্ঠিত উটজ শিল্প কিরূপে লোকের অল্পের উপায় করিতে পারে সম্প্রতি বিলাতে বিহারের পর্দার আদরে তাহা দেখিতে পাওয়া গিয়াছে। বিহার ও উড়িষ্যার সরকার এই পর্দা, সতরঞ্জি, প্রভৃতি বিক্রমের জন্য বিলাতে একজন লোক নিযুক্ত করিয়াছেন। এখন বিলাতের ও ইউরোপের অন্যান্য দেশের বড় বড় দোকানদার বিহারের পর্দা প্রভৃতি কিনিতেছেন এবং পাটনার উটজ শিল্প-প্রতিষ্ঠান সে-সব যোগাইতেছে। বর্তমান ব্যবসা-মন্দার বাজারেও বিদেশে বিহারের পর্দার আদর কমে নাই। বিচিত্র বর্ণের সমাবেশই এই-সব পর্দার বৈশিষ্ট্য। বিহার ও উড়িষ্যার সরকার ইহা বিদেশে পরিচিত করাষ্টতেই তথায় ইহার আদরলাভ সম্ভব হইতেছে ।