পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

QSB ফুটিা উঠবে। মেমোট যেন তাহার স্বভাবসিদ্ধ অবাধ্যতার বশেই সবাইকে এই দিক দিয়া নিরাশ করিয়া দিল। কিন্তু তবুও নামটা রহিল সার্থক। --আকাশের বিদ্যুৎ কেমন করিয়া সত্যই যেন ওর খাম দেহটুকুর মধ্যে আটক পড়িয়া গিয়াছে ; তাই ওর মিহি ভ্র দুটি কথায় কথায় অত কুঞ্চিত হইয় ওঠে, কালে চোপের তারা অত চঞ্চল, ঠোঁটের কোণে আচমকা হাসি ফুটিয়া একটু রেশ না রাখিয়াই অমন হঠাৎ মিলাটয় যায়। ক’নে দেখানোর সময় বাপ পরিচয় দিয়াছিলেন- বড় শাস্ত লক্ষ্মীমেয়ে আমার, এ কিছু বড়াই ক'রে বলচি না। বাড়ির বাইরে পা দেয় না-কলকাতায় বিয়ে হবার জন্যে যেন তোয়ের হয়ে জন্মেচে.* আগাগোড়া বানানে কথা। ওর বাড়ি ছিল সদর রাস্তা, বনবাদাড়, দীঘির ধার। এখন সেখান থেকে তাহার সৰ্ব্বদাই ওকে যেন কান্নার স্বরে ডাকিতে থাকে। আদুরে দুষ্ট মেয়ের যত অত্যাচারের দাগ স্নেহের পরতে পরতে আঁকা, আসন্ন বিচ্ছেদের সময় সেগুলো রাঙাইম ওঠে । তবু মেয়ের বাপ, তাহাকে বলিতেই হয়—“বুঝেচেন । কি-না-আমার মা'র মতন শান্ত মেয়ে দুটি পাবেন না ; এ কিছু নিজের মেয়ে বলেই যে বলচি তা নয়...” প্রবঞ্চনা পরা পড়িতে অবশ্য দেরি লাগে নাই । শ্বশুর আপিস হইতে ফিরিয়া বাড়ির চৌকাঠ ডিঙাইবার সঙ্গে সঙ্গেই ডাকেন---“কই গে, আমার শান্ত, শিষ্ট মHট কোথায় গেলে ?” চপলা যেমন ভাবে যেখানেই থাকুক, লঘুগতিতে আসিয়৷ হাজির হয়।. লঘুগতি কথাটা মোলায়েম ভাবেই বল! গেল, আসলে শ্বশুরের এই ডাকটিতে কলিকাতার এই অষ্টাবক্র বাড়িখানি হঠাৎ চপলার পক্ষে ঋজু, সরল হইয়া যায়, কঠিন বিলিতি মাটির মেঝে বেলপুকুরের দেশী মাটির মত পায়ের নীচে নরম, স্নিগ্ধ, মিঠে হইয় ওঠে; সে এক রকম গোটাকতক লাফেই শ্বশুরের নিকট আসিয়া পৌছায়, আব্দারের ভংগনাম চক্ষের তারকা নাচিতে থাকে, চাবির গোছামৃদ্ধ আঁচলটা মাটি হইতে তুলিতে তুলিতে বলে—“না বাবা ; আজ আপনি বড় দেরি করেচেন, তা বলে দিচ্চি, হ্যা...” দেরি যে রোজ হয়ই এমন নয় ; তবে এই মিলনটুকুর মূল্য অনেক ; তাই, উৎকণ্ঠার বশে পুত্রবধুর রোজই মনে হুম বড় দেরি হইয়া গেছে। তারই রোজ অনুযোগ। ীে প্রবাসী ; S98O খণ্ঠর রোমাকে নির্দিষ্ট ইজিচেয়ারটিতে দেহখানা এলাইম দেন। বন্ধু পাখা আনিয়া হাওয়া করে, পায়ের কাছে বসিয়া জুতার ফিতা খুলিয়া পা দুখানি খড়মের উপর বসাইয় দেয়, চাদর খুলিয়, জাম নামাইয়। ঝাড়িয়া-ঝুড়িয়া রাখে। ধীরে ধীরে এই সব চলে, আর গল্প হয়-“ঠিক হ’ল বাবা ? বড় যেন দেরি হয়ে যাচ্চে ; আমার আর মোটেই ভাল লাগচে না তোমার এই কলকাতা, হঁ্য ।" "আর কিছু দেরি নেই মা, একটা বাড়ি থালি হ’লেই আমরা উঠে যাব।” শ্বশুর-বেয়ের পরামর্শ পাক হুইয়া গেছে—কলিকাতায় আর থাকা হইবে না। কলিকাতার বাহিরে, বেশ পাড়াগ দেপিয়া বাড়ি দেপা হইতেছে, ঠিক হইলেই সব উঠিয়৷ যাইবে । বসুকে শ্বশুর কোলের কাছে টানিয়া লন, মাথায় ধীরে ধীরে হাত বুলান, করতল হইতে স্নিগ্ধ আশীৰ্ব্বাদ ক্ষরিতে থাকে। বাংসল্যের প্রবঞ্চনায় মুণে শাস্ত হাসি ফোটে, ভবেন এই দীঘীরুত আশার মধ্য দিয়া পাড়াগায়ের স্বপ্ন কাটিবে, ক্রমে এট বাড়িরই ইটকাঠের সঙ্গে মনটা মাথায় মায়ায় গাথিয় যাইবে । স্বপ্ন কাটে না, বরং মনটা এদিকে বিরূপ হইয়৷ সেই স্বপ্নকেই মায়ার পাকে পাকে জড়াইয়া ধরে অনামধেয় একটা জায়গা ; কিন্তু কেমন করিয়া যেন মনের পড়ে তাহার একটা স্পষ্ট ছবি আঁকিয়া গিয়াছে – বেলপুকুরের সঙ্গে অনেকটা মেলে, ভিজে ভিজে কালচে মাটি, এখানে-ওখানে গাছপালার ঘন সবুজ দিয়া ঢাকা, ওপরে আকাশের নীল আস্তরণপানি উবুড় হইয় পড়িয়াছে... পাশাপাশি দুটি কোঠাঘর, সামনে পাকা রোয়াক—বিকালের পড়ন্ত রোদটি সেখানে জল জল করিতে থাকে।...ওদিকপানে রান্নাঘর, সকাল সন্ধ্যায় তাহার গোলপাতার ছাউনি ফুড়িয় ধোয়ার কুণ্ডলী ওঠে।...পাক ঘরের পাশ দিয়া রাস্তা। সেট সদর দুম্বারের চৌকাঠ ডিঙাইয়া বাহির হইয়া গিয়াছে— ডাহিনে জামরুল গাছের নীচু দিয়া, বায়ে কাহাদের পুকুর, তাহার পুরাণ ঘাটের শেষ রাণায় কাহাদের ঘোমটা টানা বে। বাসন মাজে—তাহার শাড়ীর রাঙাপাড় আর ছোট রাঙা ঠোটের মাঝখানে নোলকটি ছল ছল করে-- কে সমবয়সী আসিল- বেঁ হাতের উলটা দিক দিয়া ঘোমটা উচু করিয়া