পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শ্রাবণ “আমার ঘন্টাখানেক মাথা ধরবে তারপর ক্ষেপ্তি চলে গেলে ভাল হয়ে যাবে।” কথাটা বুঝিতে একটু দেরি হয়, চপলা স্বামীর মুখের দিকে একদৃষ্টি চাহিয়া থাকে, শুধু ভ্ৰ-জোড়াটি অল্প অল্প ফুরিত হইতে থাকে । তাহার পর হঠাৎ খিল খিল করিয়া হাসিয়া ওঠে, বলে—“ও, বুঝেচি, বাবা, তোমার দুষ্টুবুদ্ধি কম নয় তো !” প্রশস্ত, শান্ত গঙ্গায় নৌকা চড়িয়াই চপলার মনটা প্রসারিত হইয় পড়ে । ও-পারে, প্রকাও ঘাটের নীচে গিয়া নৌকা লাগে। নামিয়াই একইটু করিয়া কাদা, এত বড় বিলাসিত অনেকদিন তাহার ভাগ্যে জোটে নাই। পা টানিয়া টানিয়৷ চলিতে চলিতে স্বামীর হাতটা চাপিয়া ধরে ; বলে—“উ:, বডড মজ না ?” - সিঁড়ি বাহিয়া স্ববিস্তীর্ণ চত্তর, যেদিকটা ইচ্ছা হন হন করিয়া অনেকটা চলিয়া যায়,- পায় পায় কত দিনের শৃঙ্খল যেন গসিয়া পড়িতেছে ।...মন্দিরে ওঠে-স্নগঠিত সৌম্য মূৰ্ত্তির আসনে মাথা নোয়াইয়া পড়িয়া থাকে—অনেকক্ষণ; কিছুই প্রার্থনা করে ন—পড়িয়া থাকার মুক্ত অবসর তাই পড়িয়া থাকে।...গঙ্গার ধারে ধারে পরিষ্কার চওড়া রাস্ত, ঘন আমগাছের মস্ত বাগান-পাতার গাঢ় সবুজেসবুজে যেন অন্ধকার হইয়া গিয়াছে...পিছনে আয়ত পুষ্করিণী—বেলপুকুরের দীঘির মত - একটু ছোট এই যা...ক্রমাগত ঘোরে—একটি মুক্ত বেগচঞ্চল প্রাণ প্রতি মুহূৰ্ত্তে দেহতটে আসিয়া উচ্ছলিত হইয় পড়ে, চপল অঙ্গবিক্ষেপে, প্ৰগলভ হাসিতে, কথার অসংযত স্বরে,--মাঝে মাঝে পিছন ফিরিয়া চাহিয়া বলিয় উঠে—“কই গো !...ওম, এখনও ওখানে - পুরুষের পা না ?...” পুকুরের ঘাটে আসিয়া বসিল। পা লাইতে দ্বলাইতে পাশের লতাগুন্মের সঙ্গে স্বামীকে পরিচিত করিয়া দিতে লাগিল --"ওটা ঘেটু—ঘে টুফুল মহাদেব খুব ভালবাসেন সত্যিকারের মহাদেব নয় খেলাঘরের মহাদেব। আচ্ছ, এর মধ্যে অমূললতার গাছ কোথায় দেখাও দিকিন, কত বুদ্ধিমান দেখি... পারলে না তো ?—ঐ দেখ, কলকে ফুলের গাছটার মাথার ওপর ওই হলদে হলদে—ভয়ঙ্কর বিষ মশাই ! একটু যদি গেল পেটে তো বাড়তে বাড়তে-বাড়তে...ওগো ! কুঁচকলের চারা! নিশ্চই একেবারে, নিয়ে আলি ভুলে।” जोजिब्रो५ רצ6 উৎসাহের সঙ্গে নামিয়া ক্ষিপ্রগতিতে পুকুরপাড়ের জঙ্গলের দিকে চলিল। ঝিরঝিরে পাতা ছোট চারাগাছটি, হাওয়ায় নধর ডগাটি একটু একটু ছলিতেছে। কাছে গেল তুলিবার জন্য, ঝুঁকিয় কি ভাবিয়া থামিয়া গেল, তাহার পর ধীরে ধীরে ফিরিয়া আসিয়া আবার শানের বেঞ্চিটার উপর বসিয়া পড়িল। স্বামী হাসিয়া বলিল- “কি হ’ল আবার ?--খেয়ালী মেয়ে !...” “না, থাক ; কলকাতার সেক্ট টবে তো ?—আমার মতন দুর্দশা হবে বেচারীর।” দু-জনেই থানিকক্ষণ চুপ করিয়া রহিল । একটু পরে চপল স্বামীর হাতটা নিজের কোলে লইয় বলিল--"এক কাজ করলে হয় না ? বলছিলাম...বলছিলাম—- আমায় এই দিক থেকেই বেলপুকুরে রেখে আসবে ?” অজিত হাসিয়াদুষ্টামীর সহিত বলিল—“বেশ তো...টাকা?” “আমার দু-হাতের দু-গাছা চুড়ি দিচ্চি।” স্বামী কি ভাবিয়া আবার একটু চুপ করিয়া রহিল ; তাহার পর বলিল- “সে মন্দ কথা নয় ; মাকে কিন্তু কি বলব ?” “সে আমি ভেবে রেখেচি, বলবে—নাইতে গিয়ে ডুবে গিয়েছে।” আবার একটু চুপচাপ । কি বলচ ” স্বামীর হঠাৎ একটি দীর্ঘশ্বাস পড়িল ; কিন্তু মনের ভাবটা গোপন করিয়া হাসিয় বেশ উৎসাহের সঙ্গে বলিল- “উঃ, থাসা হয় ; কিন্তু তার পর ” “তারপর অনেক দূর গিয়ে ভেসে উঠব—আমায় একজন মাঝি তুলকে একটু চোখ খুলে বেলপুকুরের নাম করব.. নভেলে যেমন হয় গো...” “নভেলে মিউজিয়মের কোঠাবাড়িতে কেউ ডুবে মরে না— চল ওঠ, অনেক বেলা হয়েচে।” বলিয়া স্বামী উঠিয়া পড়িল । শ্বস্তর, শাশুড়ী, স্বামী, সবাইকেই বোঝা যায়। চপল৷ মনে মনে বলে—“খুব চালাক সব, আচ্ছা, আমিও কম সেয়ানা নয়, দেখি...” বাবার কাছে গোপনে পত্র যায়; কান্থনিতে মিথ্যা কথায় ভরা,-- এরা সব মারে—ঘরে চাৰি দিয়ে রাখে—স্থ-চক্ষের বিষ হয়ে আছি।'...কখন কখনও এমনও থাকে—"পাড়ার মেয়েদের চপল তাগাদ দিল—“কষ্ট,