পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শ্রাবণ “উপবাস দিবাভাগে জামিষাশী নিশিযোগে জটাধারী হাতে চারদও । ফুলটাতে অভিলাস রক্তবন্ত্র বহিবাস শঠের প্রধান বিশ্বম্ভও।” ব্যাধিসিন্ধু বৈদ্য ঃ "দুই পায়ে আছে গোদ অন্ধুর সহিত । পৃথিবী ধরিতে নারি কাপে হইয়া ভিত। হাতেন্তে অঞ্চল করি দিতেছে বাতাস । ঝাকে ঝাকে যত মাছি উড়ে আসপাশ । কাশির ধ্বনিতে দিক পুরিল আকাশ । এইরূপে ব্যাধিসিন্ধু সভাতে প্রবেশ ।” রণজম্বুক সেনাপতি : “আমার সমান বীর ত্রিভুবনে নাই। যুদ্ধের শুনিলে নাম তখনই পলাই।” হাস্তীর্ণব' নাটকখানি স্থানে স্থানে অশ্লীলতা দোষদুষ্ট, কারণ ইহাতে সমসাময়িক দুর্নীতির প্রতিচ্ছবি আছে। বিশ্বভও পণ্ডিত, মহানিন্দক আচার্য, মদনান্ধ মিশ্র কেহই চরিত্র হিসাবে উন্নত ছিলেন না । সমাজের প্রতিকৃতি হিসাবে এই নাটকের মূল্য আছে। পণ্ডিতপ্রবর উইলসন বলেন, যে-সকল ব্রাহ্মণকে এই নাটকে বিদ্রপ করা হইয়াছে তাহারা কুলীন ও বামাচারী ছিলেন। গ্রন্থে কিন্তু কৌলীন্যপ্রথা-সম্বন্ধে কোন উল্লেখ নাই। শ্ৰীহুর্ষের ‘রত্নাবলী নাটকাবলম্বনে নীলমণি পাল রচিত বাংলা ‘রত্নাবলী' নাটকখানি ১৮৪৯ খৃষ্টাব্দে প্রকাশিত হয়। ইহার আখ্যাপত্র এইরূপ : রত্নাবলী নাটিকা খ্ৰীশ্ৰীহৰ্ষ কবি বিরচিত । বীযুক্ত শিবশঙ্কর সেনের অমুমতানুসারে খ্ৰীনীলমণি পাল কতৃক বঙ্গভাষায় নানা ছন্দঃ প্রবন্ধে অনুবাদিত হইয়া চন্দ্রমোহন শিন্ধান্ত বাগীশ ভট্টাচাৰ্য্য দ্বারা সংশোধন পুৰ্ব্বক কয়েকখালি পুরাতন বাংলা নাটক ৫২৩ কলিকাতা তত্ত্ববোধিনী যন্ত্রালয়ে মুদ্রিত হইল ➢ ዓዓ› পয়ার ছন্দে গণেশ-বন্দনার সহিত নাটকখানি আরম্ভ। তাহার পরে গুরুবন্দন বা ভূমিকা। নীলমণি পালের ‘রত্নাবলীকে যথাযথ অনুবাদ বলা চলে না। শ্ৰীহুর্যের মূল নাটক অবলম্বন করিয়া তিনি অন্যান্য বিষয়ও গ্রন্থমধ্যে অবতারণা করিয়াছেন। এই সকলের মধ্যে শ্রীহর্ষের রাজধানীর বর্ণন, রত্নাবলী সম্বন্ধে আখ্যান ও একটি জলযাত্রার বিবরণ বিশেষ উল্লেখযোগ্য। মূল নাটকের কথোপকথন স্থলে অনেক স্থানে মাত্র বাংলায় বর্ণনা আছে। নীলমণি পাল পয়ার, ত্রিপদী, লঘু ত্রিপদী, একাবলী, দীর্ঘ পয়ার, একাবলী অন্তযমক, তুনকাভাস, তোটক, ললিতলঘু, চৌপদী প্রভৃতি ছন্দের বহুল ব্যবহার করিয়াছেন। কিন্তু তাহার নাটকের বিশেষ কৃতিত্ব এই যে, তিনি পদ্যাংশে স্থানে স্থানে মৌলিকতা দেখাইয়াছেন : “সরোঞ্জ আসনে ব্রহ্মা হংস আরোহণ । বিধুকল শিরে শোভে ক্লদ রিলোচন। শঙ্খ চক্র গদা পদ্ম ধরি চারি হাতে । পালন করেন বিষ্ণু গরুড় সহিতে ॥ ঐরাবতো পরি ইন্দ্র করি আরোহণ । শোভিছেন চতুর্দিকে অন্ত দেব গণ। গন্ধৰ্ব্ব চারণ সবে অপসরা সহিত । আমোদ প্রমোদ করে করে নৃত্যগীত ॥” চতুর্থ অঙ্কে গদ্যের ব্যবহার-প্রাচুর্ঘ্য আছে ও তাঁহাতে নাটকখানির শেষাংশ সময়ে সময়ে নীরস মনে হয়। এই নাটক কয়খানি অভিনীত হুইয়াছিল বলিয়৷ আমাদের জানা নাই। কিন্তু প্রথম মুদ্রিত বাংলা নাট্যগ্রন্থ হিসাবে ইহাদের মূল্য সাহিত্যের ইতিহাসে সামান্ত নহে।